উৎসবের সাথে শঙ্কাও

17

নিজস্ব প্রতিবেদক

পহেলা বৈশাখে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে চট্টগ্রামে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি টহলে থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশও। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।
এদিকে নগরীতে পহেলা বৈশাখে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করে দর্শনার্থীদের অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগসহ ১১টি নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। গতকাল বুধবার সিএমপি’র পক্ষ থেকে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ উদযাপন উপলক্ষে নগরীর জনসাধারণের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্দেশনাগুলো মেনে চলার অনুরোধ করা হয়।
১১টি নির্দেশনার মধ্যে আছে, দুপুর ২টার মধ্যে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান শেষ করে দর্শনার্থীদের অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা, অনুষ্ঠানে আগতদের মুখোশ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, ডিসি হিল এবং সিআরবি এলাকায় দর্শকদের নির্ধারিত প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ ব্যবহার করা, বিরক্তির উদ্রেক ও শব্দ দূষণকারী ভুভুজেলা, বাঁশি ইত্যাদি বাজানো থেকে বিরত থাকা, বাজি/পটকা বহন ও ফোটানো থেকে বিরত থাকা, বড় ব্যাগ, পোটলা, ব্যাগ-প্যাক বহন করা থেকে বিরত থাকা, অনুষ্ঠানে আসা নারী, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রতি সৌজন্যমূলক আচরণ প্রদর্শন করা, সন্দেহজনক কোনও ব্যক্তি/বস্তু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে অবহিত করা, যেকোনও ধরনের মাদকদ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, উৎসব প্রাঙ্গণে কোনও খাবারের দোকান স্থাপন না করা, উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ ও নারী-শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে সব ধরনের নাগরিক সহযোগিতা প্রদান করা।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) শাহাদত হুসেন রাসেল পূর্বদেশকে বলেন, এবার পহেলা বৈশাখে সিএমপি’র পক্ষ থেকে দেওয়া ১১টি নির্দেশনা অবশ্যই সবাইকে মানতে হবে।
গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় নগরের সিআরবির শিরীষতলায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন ও বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, কোন প্রকার হুমকি না থাকলেও পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকে পুলিশ, বোম স্কোয়াড, ডিবি, সোয়াট টিমে মোট সাড়ে ৪শ’ পুলিশ সদস্য সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি বলেন, দু-বছর পর চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের সমাগম বাড়বে। জানমালের নিরাপত্তায় আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন নববর্ষ বরণে অনুষ্ঠান আয়োজন করা থাকে। যেমন সিআরবির শিরীষতলায়, শিল্পকলা একাডেমি ও চারুকলা ইনস্টিটিউটে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে আমরা চারুকলা, শিল্পকলাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে মতবিনিময় করেছি। বৃহস্পতিবার মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ। আয়োজকদেরও বলেছি সব নিয়ম মেনে চলতে।
পহেলা বৈশাখে কোন হুমকি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত আমরা কোন হুমকির খবর পাইনি। তবুও আমরা সজাগ রয়েছি। যেন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় কোন ঘাটতি না হয়, তাদের কোন ক্ষতি না হয়। আশা করছি আমরা সকলে মিলেমিশে সুন্দরভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পারব।’
একই কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর পূর্বদেশকে বলেন, ‘নগরীর দুইটি জায়গায় বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন টিম মাঠে কাজ করবে।’
এদিকে, নববর্ষের অনুষ্ঠানকে ঘিরে নগরের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে বিকেল আড়াইটা পর্যন্ত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছে সিএমপি।
ডিসি হিল: নগরের লাভ লেন (নুর আহম্মেদ সড়কের মাথা), চেরাগী পাহাড়, এনায়েতবাজার মোড় ও বোস ব্রাদার্স (পুলিশ প্লাজা) মোড়ে রোড বøক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন দেওয়া হবে। ফলে ডিসি হিল অভিমুখে সবধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
সিআরবি শিরিষতলা : নগরীর আটমার্সিং, ফ্রোন্সিস রোড, কাঠের বাংলো ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মোড়ে রোড বøক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন দেওয়া হবে। ফলে সিআরবি শিরিষতলা অভিমুখে সবধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
পহেলা বৈশাখ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের নির্দেশনাসমূহ সবাইকে মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।