‘উন্নয়নে’ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে কর্পোরেশন

72

বিধি অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের আবশ্যিক তিনটি কাজ হচ্ছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাট সংস্কার ও মেরামতের মাধ্যমে চলাচল উপযোগী রাখা এবং সড়ক বাতির মাধ্যমে আলোকায়নের ব্যবস্থা করা। দীর্ঘদিন ধরে রাজস্বের ওপর ভর করে এসব কাজ করে আসছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ফলে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের দায়িত্বের চার বছরে পুরনো সে ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে সিটি কর্পোরেশন। রাজস্ব থেকে নিয়মিত উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি ৩ হাজার ৯শ ৭৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার (প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা) ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছ সিটি কর্পোরেশন। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চসিক সড়ক উন্নয়ন ও এলইডি আলোকায়নে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ৬টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ২টি প্রকল্প এবছর এবং বাকি ৪টি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে। চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে ‘৭১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাসমূহের উন্নয়ন এবং নালা, প্রতিরোধ দেওয়াল, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ-পুনর্নির্মাণ’ প্রকল্পের ৪৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এবং শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে।
এছাড়া ৪শ ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নসহ যানবাহনের আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সড়ক আলোকায়ন’ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ১৭ শতাংশ এবং ২০২০ সালের জুনে সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া ১শ ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প ৭৬ শতাংশ, ২০১৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া ১২শ ৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বহদ্দারহাট বারৈপাড়া হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন’ প্রকল্পের কাজ ৯ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া ‘সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিবাস নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ ২ শতাংশ শেষ হয়েছে।
সর্বশেষ ১২৩০ কোটি ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং বাস/ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ’ প্রকল্প। এ প্রকল্পটি শতভাগ জিওবির অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পুরো প্রকল্পটিকে ২শ ২০টি লটে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১শটি লটের টেন্ডার চলতি মাসে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ। এছাড়া আগামী দুইমাসের মধ্যে এ প্রকল্পের ভৌত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ পূর্বদেশকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন সাধারণত আদায়কৃত রাজস্ব থেকেই সড়ক উন্নয়ন ও বাকি কাজগুলো করে থাকে। সেক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। কিন্তু মেয়র মহোদয়ের সহযোগিতায় আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রম করেছি। কাউন্সিলররা সাধারণ সভায় যতগুলো প্রকল্পের কথা বলেছেন, সেগুলো সমন্বিত ডিপিপি ( উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা) করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি। এরপর সেগুলো অনুমোদন হয়ে কাজ চলছে। ফলে একদিকে যেমন দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাবে চট্টগ্রামবাসী, অন্যদিকে রাজস্বের উপর চাপ কমবে।
তিনি আরও বলেন, এলইডি বাতিতে সড়ক আলোকায়নে ২৭ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। বর্তমানে আরও একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেটির বাস্তবায়ন শেষ হলে নগরীরতে শতভাগ সড়ক এলইডি আলোকায়নের আওতায় আসবে।
এছাড়া সড়ক উন্নয়নের চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শেষ হলে নগরীতে কোনো রাস্তা কাঁচা থাকবে না। নতুন কোনো সড়ক তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এমন সুফল ভোগ করতে পারবে নগরবাসী।
চট্টগ্রামকে পরিকল্পিত নগরীর করার ঘোষণা দিয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, চট্টগ্রাম নগরীকে আগামী প্রজন্মের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই। তাই গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে নিয়মিত রুটিন কাজের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছি। এ চার বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সুদৃষ্টির কারণে রেকর্ড সংখ্যক প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে সিটি কর্পোরেশন। ফলে একটি পরিকল্পিত নগরীর পথে হাঁটছে চট্টগ্রাম। আগে মানুষ যেখানে সেখানে গরু বা গবাদি পশু জবাই করত, যা নগরীর পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করত। আমরা আধুনিক কসাইখানা করেছি যাতে এ সমস্যা থেকে নগরবাসী মুক্তি পায়। এছাড়াও বাস টার্মিনাল করছি, যাতে নগরীতে যানজট না হয়। তাছাড়া ডাস্টবিন সরিয়ে সবুজায়ন করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে আমরা গ্রিন এন্ড ক্লিন সিটি হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি।