ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছেন মানুষ যাত্রা নির্বিঘœ করতে সংশ্লিষ্টদের সতর্কতা জরুরি

10

 

পবিত্র ঈদ; উল আজহা তথা কুরবানির ঈদ উদযাপন শেষে মানুষ আবারও শহরে ফিরছেন, ফিরছেন কর্মস্থলে। চট্টগ্রাম নগরসহ সারা দেশের শহর বন্দরগুলোতে আবারও কর্মচঞ্চলতা ফিরে আসতে শুরু করেছে। সেই সাথে কয়েকদিন ট্রেন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে ফিরতি মানুষের ভিড় বাড়ছে। এই সময়ে বিভিন্ন পথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে পটিয়া এলাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় একসাথে ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। একইভাবে রাঙ্গুনীয়ায়ও সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কেও সড়ক দূর্ঘটনায় বেশ কয়েকজনের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। এবার পদ্মাসেতুর কারণে নদীপথে লঞ্চ চলাচল ও প্রতিযোগিতা কম ছিল ফলে দুর্ঘটনার খবরও নেই বললে চলে। এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য বড় স্বস্তির খবর। আমরা জানি, প্রতি বছরে দুটি ঈদ মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে বড় উৎসব। কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে যে যেখানেই থাকুক না কেন, দুটি ঈদে অন্তত তারা নিজ নিজ পরিবার ও স্বজনদের কাছে ফিরে যান। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। বরাবরের মতো এবার ঈদযাত্রায় টিকেটের ভোগান্তি ছিল। বিশেষ করে রেলে টিকেট পেতে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনলাইনে টিকেট সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখলেও এটা খুব বেশি কাজে এসেছে বলে মনে হয় না। ধীরগতি সার্ভারের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে টিকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। অন্যদিকে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের ঘটনা এবার কম দেখা গেলেও গাড়ি ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলার কারণে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। প্রচÐ গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের বাস মিনি বাসে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানুষ স্বস্তিতে ঘরে ফিরেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বরাবরের মতো সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, এবার ঈদে ঘরে ফেরার বিড়ম্বনা অন্যান্যবারের তুলনায় কম হয়েছে। ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়তি মানুষের চাপ অনেকটাই পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে ঈদে ফিরতি যাত্রায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনার খবর মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সড়ক দুর্ঘটনা চালকের অসতর্কতার কারণেই প্রধানত ঘটে থাকে। তাদের বেপরোয়া মনোভাব যাত্রাপথকে আতঙ্কিত ও ভীতিকর করে তুলে। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় শুধু ভুক্তভোগী ব্যক্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, বরং চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। নিকট-অতীতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাজধানীসহ দেশব্যাপী আন্দোলন ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভ করে। এই আইন মূলত চালকদের অনিয়ম ও এর শাস্তির বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই করা হয়েছে। গণপরিবহন ব্যবস্থার চূড়ান্ত নৈরাজ্যের ফলে জনমনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ওই আন্দোলনে। কিন্তু এরপরও সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন বেশ শক্তিশালী। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ পালনের রেওয়াজ চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। এ রেওয়াজ মানুষের সংবেদনশীলতার অংশ হয়েও দাঁড়িয়েছে। ফলে যারা কর্মস্থল ছেড়ে স্বজনদের মাঝে গিয়েছিলেন, তারা যাতে নির্বিঘেœ কর্মস্থলে ফিরতে পারেন এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা মনে করি, দেশের বিস্তৃত সড়কপথকে নিরাপদ করতে হলে সার্বিক সতর্কতা ও নজরদারি নিশ্চিত করা জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোও যেহেতু চিহ্নিত, সেহেতু সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। এক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন আইনের পূর্ণ বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই।