ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪৩ জন

15

পূর্বদেশ ডেস্ক

এবারের ঈদযাত্রায় দেশের সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৪৪৩ জন নিহত এবং ৮৬৮ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৮৪৪ জন। রেলপথে ২৭টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত এবং আহত হন চার জন। নৌ-পথে তিনটি দুর্ঘটনায় দুই জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সমিতির মহাসচিব মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী।
এ সময় তিনি এবারের ঈদযাত্রার দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান এবং কারণ উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেন।প্রতিবেদনে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২৬ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা (১০ মে) পর্যন্ত ১৫ দিনে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। ২০২১ সালের তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১৪.৫১ শতাংশ, নিহত ২২.৩৫ শতাংশ ও আহত ২৬.৩০ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে মোটরসাইকেল। এবার ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত এবং ১১০ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৪.০৮ শতাংশ, নিহতের ৩৪.৮৫ শতাংশ এবং আহতের ১৩.০৩ শতাংশ প্রায়।’
তিনি বলেন, এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনার শিকার ২০৯ চালক, ২৪ পরিবহন শ্রমিক, ৮৮ পথচারী, ৬২ নারী, ৩৫ শিশু, ৩৩ শিক্ষার্থী, দুই সাংবাদিক, আট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুই শিক্ষক, ছয় জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, দুই জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একজন চিকিৎসকের পরিচয় মিলেছে।
দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট যানবাহনের ৩৮.৭৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৫.৪৯ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান-লরি, ৮.৪৫ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৫.২৩ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্র, ৮.৮৫ শতাংশ অটোরিকশা, ৫.৪৩ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল এবং ১৭.৯০ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
দুর্ঘটনার ২০.৯৬ শতাংশ মুখোমুখি, ৪২.৪৭ শতাংশ পথচারীকে চাপা, ১৫.৩২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, ১৯.৮৯ শতাংশ অজ্ঞাত কারণে, ১.০৭ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ এবং ০.২৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট দুর্ঘটনার ৩৩.৮৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৪.৩৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৩.৪৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৮৩ শতাংশ ঢাকা মহানগরে, ২.৪১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরে সংঘটিত হয়েছে।দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, জাতীয় মহাসড়কে ঈদযাত্রার বহরে মোটরসাইকেলের ব্যাপক ব্যবহার; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো; জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকরা এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রæটি, যানবাহনের ত্রæটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টো পথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও বেপরোয়া যানবাহন চালানো।
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন-বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল প্রমুখ।