ইসলামের দৃষ্টিতে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান

44

 

মহান আল্লাহ পাক মানুষের মৃত্যুর পর কিয়ামতের দিবসে আবার পুনরুত্থান করবেন এ কথা ঘোষণা করেছেন। এ বিষয়ে রয়েছে অসংখ্য হাদিস। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরানে বর্ণনা করেছেন, অনন্তর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন আবার পুনরুজ্জীবিত করবেন। (আল কোরান: ২: ২৮)।
এতে আত্মস্থ হয় যে, ইসলাম ধর্মে আগের জন্ম না থাকলেও পুনরুজন্ম রয়েছে। আল্লাহ পাক মানুষের হায়াতের জিন্দেগী পেরিয়ে গেলে জীবনশিখা নিভিয়ে দেন এবং নির্ধারিত সময়ের পর কিয়ামতের দিন আবার পুনরুজ্জীবিত করবেন। ইন্তেকালের পর কিয়ামতের পূর্বে সময়কে বলে হয় বরযখ’।
পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে, যখন শিংগায় ফু দেওয়া হবে তখন কবর হতে ছুটে আসবে প্রতিপালকের দিকে (আল কোরান: ৩৬:৫১)।
পবিত্র কোরানে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন তারা দ্রæত কবর থেকে বের হবে’ (আল কোরান : ৭০:৪৩)।
প্রথমাবস্থায় বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে এবং পরে দ্রæত গতিতে হাশরের ময়দানের দিকে দৌড়তে থাকবে। ফেরেস্তাগণ সবাইকে ডেকে একত্রিত করবেন। তখন কাফিরগণ বলবে, পবিত্র কোরানের ভাষায়, ‘আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে ঘুমন্ত স্থান হতে উঠালো ? (আল কোরান: ৩৬: ৫২)।
কাফিরগণ কবরে আরামে ছিল তা নয়, আজাবেই ছিল। কিন্তু কিয়ামতের আজাবের তুলনায় কবরের আজাবকে আরাম বলে মনে হবে। এমনি সময় মুমিনগণ বলবেন, দয়াময় আল্লাহ যে কিয়ামতের অঙ্গীকার করেছিল এই হলো সে কিয়ামত এবং রাসুলগণ সত্যিই বলেছিল। (আল কোরান: ৩৬:৫২)।
পবিত্র কোরানে অন্য এক আয়াতের পাকে ইরশাদ হয়েছে, যেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে তখন তোমরা দলে দলে সমাগত হবে। (আল কোরান: ৩৬:৫২)।
পবিত্র কোরানে মহান আল্লাহ পাকের ঘোষণা অনুসারে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মানুষের মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করা হবে এবং কিয়ামতের ময়দানে হাজির করে বিচার করবেন। হযরত আবু হুয়াইরা (রা.) হতে বর্ণিত মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয় তখন তার নিকট নীল চক্ষুবিশিষ্ট দুইজন কালো বর্ণের ফেরেস্তা হাজির হন ! এক জনের নাম ‘মুনকার এবং দ্বিতীয় জনের নাম ‘নাকির। তারা দুই জন জানতে চাইবেন, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তোমরা দুনিয়াতে কী বলতে? মৃত ব্যক্তি যদি মুমিন হন তখন তিনি বলবেন, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। অতঃপর তার কবরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সত্তর গজ করে প্রশস্ত করে দেয়া হবে। কবরকে আলোকিত করা হবে। বলা হবে তুমি ঘুমিয়ে থাকো। তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, আমি আমার পরিবারে ফিরে যেতে চাই এবং আমি তাদেরকে আমার এ সুসংবাদ জানিয়ে দিতে চাই। ফেরেস্তা বলবে বাসর ঘরের দুলহার মত তুমি ঘুমিয়ে যাও। যাকে তার পরিবারের সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি তথা প্রিয়তমা স্ত্রী ব্যতীত কেউ জাগাতে পারবে না। অতঃপর সে ঘুমাতে থাকবে যতক্ষণ না আল্লাহতা’লা তার এ শয্যাস্থান থেকে তাঁকে না উঠাবেন। যদি মৃত ব্যক্তি কাফির হয় তবে সে বলবে, আমরা মানুষ তার সম্পর্কে একটি মন্তব্য করতে শুনতাম। সুতরাং আমিও সেরূপ মন্তব্য করতাম। আমি তার সম্পর্কে কিছুই জানি না। তখন ফেরেস্তাদ্বয় বলবেন, আমরা পূর্ব হতেই জানতাম যে তুমি এ ধরনের উত্তর দিবে । অতঃপর জমিনকে বলা হবে, হে জমিন তুমি তাকে চেপে ধর, জমিন জোরে চেপে ধরবে। ফলে তার পাজরের একপাশের হাড় অপর পাশের হাড়ের ফাকে ঢুকে যাবে। এ স্থানে সে শাস্তিপ্রাপ্ত অবস্থায় থাকবে। যতদিন আল্লাহ পাক তাকে শয্যাস্থান হতে উঠাবেন না : (তিরমিজী শরীফ)হযরত যারা ইবন আজিজ (রা.) হতে বর্ণিত আছে, মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন মুসলমানকে প্রশ্ন করা হয় তখন তিনি সাক্ষী দেন, আল্লাহ পাক ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় রাসুল। এটি আল্লাহ তা’লার বাণীর মর্মার্থ- যারা ঈমান এনেছে, মহান আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব জগত এবং পরকাল তথা কবরে সত্যের সাক্ষ্য দানের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। এ আয়াতটি কবর আজাব সম্পর্কে অবতীর্ণ করা হয়েছে ! যে সব ব্যক্তি প্রশ্নকারী ফেরেস্তদ্বয়ের উত্তর দিতে পারবে না তাদের জন্য কবরে জাহান্নামের পথ খুলে দেয়া হবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের ওপর বিভিন্ন শাস্তির ব্যবস্থা চলতে থাকবে।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণেত প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কোন ব্যক্তি ইন্তেকাল করে তখন তার কবরে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তার আবাসস্থল তার নিকট উপস্থিত করা হয়। সে ব্যক্তি যদি জান্নতি হয় তবে জান্নাতিদের স্থান দেখানো হবে। আর যদি সে জাহান্নামী হয় তবে জাহান্নামীদের আবাসস্থল তাকে দেখানো হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, এটিই হলো তোমাদের প্রকৃত স্থান। (সহীহ বোখারী)।
মানুষ কবর জগতে নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পর যখন সিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে, তখন কবরে শান্তিতে ঘুমন্ত ব্যক্তিরাও দৌড়ে কেয়ামতের ময়দানে একত্রি হবে। আর সেখানে সৎকর্মশীলদের জন্য থাকবে একটি বৃক্ষ ছায়ার। সেখানে তারা আশ্রয় গ্রহণ করবে এবং পাপীদের জন্য কোন ধরনের ছায়া থাকবে না। সূর্য মাথার নিকটে আসবে। সূর্যের তাপে পাপীদের মাথার মগজ গলতে থাকবে।
এমন সময় মহান আল্লাহ পাক তার বিচারাসনে সমাসীন হবেন। আর প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদারত অবস্থায় থাকবেন উম্মতের মাগফিরাতের জন্য। যারা পাপী তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হবে। রেস্তারা তাদের হাত-পা বেঁধে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আবার জাহান্নামীদের মধ্যে যারা শুধু পাপী তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময় জাহান্নামে রাখার পর মুক্ত করে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে । আর কাফির মুশরিক চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকবে। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেছেন, “আহলে কিতাব ও মুশরিকদের যারা কাফির তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ী হবে। (আল কোরান: ৯৮:৬)।
কেয়ামতের দুর্যোগময় সময়ে সবাই নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকবে, দুনিয়ার সম্পর্ক সেখানে থাকবে না। তার ছেলেকে ছেলে তার পিতাকে চিনবে না। মা তার সন্তানকে চিনবে না : ভাই চিনবে না তার ভাইকে সবাই ভুলে যাবে রক্তের সম্পর্কের স্বজনদের দুনিয়ার কোন সম্পদ সেদিন কাজে আসবে না। সেদিন সম্পর্কে পবিত্র কোরানে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, আর সে দিনের ভয় করো, যখন কেউ কারো সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও গ্রহণযোগ্য হবে না, কারো কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও গৃহত হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না। (আল কোরান: ২:৪৮)।
এই কঠিন দিনের চিন্তা দুনিয়ায় বসে করতে হবে। কারণ দুনিয়ার ‘পুলসিরাত’, ‘ইহদিনাস সিরাতোয়াল মোস্তাকিম সরল সঠিক পথ অতিক্রম করতে না পারলে, পরকালের পুলসিরাত পার হওয়া সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে জান্নাত ইহকালে অর্জন করতে পারলেই পরকালে ভোগ করা যায়। দুনিয়ার কল্যাণ মানে আখিরাতের কল্যাণ বা মুক্তি। সকলের যেন দুনিয়ার কল্যাণ অর্জনের তৌফিক অর্জন হয় সে কামনা করছি।

লেখক : কলাম লেখক, রাজনীতিক