ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ভেদ করেছে ইরানের ৯ ক্ষেপণাস্ত্র

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

ইসরায়েলের দুটি বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে ইরানের ছোড়া অন্তত নয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের বিস্তৃত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ওই অঞ্চলে দেশটির মিত্রশক্তিগুলোর ছোড়া গুলি এড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে হয়েছে।
এর মধ্যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের নেভাটিম বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। এতে সেখানে থাকা ইসরায়েলের একটি সি-১৩০ রসদবাহী উড়োজাহাজ, একটি রানওয়ে এবং একটি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর চারটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে ইসরায়েলের নেগেভ বিমানঘাঁটিতে। তবে সেখানে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েল এবারই প্রথম অ্যারো-৩ নামের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা এই অ্যারো-৩ বিশেষত হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করার জন্য তৈরি হয়েছে।
এরপরও নয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানাটা দেশটির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শোনা যাচ্ছে, অ্যারো-৩ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে এখন কাটাছেঁড়া চলছে। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে এই ব্যবস্থা সফল হওয়ার কথা বলছেন।
গত শনিবার রাতে ইরান থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া হয়। এগুলোর ৯৯ শতাংশই আকাশে থাকতে ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। ইরানের এই হামলায় নেভাটিম বিমানঘাঁটি ‘সামান্য’ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে তারা। এ ছাড়া ইরানের হামলায় একটি শিশু গুরুতর আহত হয়েছে। খবর আল জাজিরা ও বিবিসির।
ইরান বলেছে, চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ায় ইরানের ক‚টনৈতিক কম্পাউন্ডে প্রাণঘাতী হামলার বদলা হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। তেহরান এটাও বলেছে যে ইসরায়েল যদি এর পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে আরও বড় পরিসরে হামলার মধ্য দিয়ে তার জবাব দেওয়া হবে।
সেই জাহাজ জব্দের কারণ জানাল ইরান : ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজ এমএসসি অ্যারাইস জব্দের কারণ জানালেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি। তিনি বলেছেন, সমুদ্র আইন ভঙ্গ করায় জাহাজটি জব্দ করেছে ইরান। গত শনিবার পর্তুগিজ পতাকাবাহী ওই জাহাজ জব্দ করা হয়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জাহাজটির সঙ্গে ইসরায়েলের যোগসাজশ রয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলে সাফ জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কানানি আরও বলেন, হরমুজ প্রণালি ও পারস্য উপসাগরে ইরান জাহাজ চলাচলের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে চায়। পর্তুগিজ পতাকাবাহী জাহাজটির গতিপথ বদলে ইরানের আঞ্চলিক জলসীমায় পাঠানো হয়েছে।
সমুদ্র আইন লঙ্ঘন ও ইরান সরকারের প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ায় জাহাজটিকে জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সব বিমানবন্দর খুলল ইরান : ইরানে তেহরানসহ দেশের সর্বত্র বিমানবন্দরগুলো গতকাল সোমবার থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এমনটি বলেছে।
সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জবাবে ইসরায়েলে তেহরানের পাল্টা হামলার কারণে ওই অঞ্চলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
শনিবার রাতে ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলের দিকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়। গেল ১ এপ্রিল দামেস্কে তেহরানের কনস্যুলেটে হামলা হয়। এর জন্য ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। ওই হামলার জবাবেই ইরান ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালায়।

জাতিসংঘকে যা জানাল ইরান : ইসরায়েলে হামলার কারণ জাতিসংঘকে জানিয়েছে ইরান। দেশটির পক্ষ থেকে এ হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক’ হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
ইরানের জাতিসংঘের দূত আমির সাইদ ইরাভানি নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, তেহরান ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ তার ‘আত্মরক্ষার সহজাত অধিকার’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
এ মাসের শুরুতে দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ।
তাই তেহরানের কাছে পাল্ট জবাব দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না, তার দেশ যুদ্ধ চায় না, তবে যে কোনো হুমকি বা আগ্রাসনের জবাব দেবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির-আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, আমাদের অভিযানের ৭২ ঘণ্টা আগে আমাদের বন্ধু এবং প্রতিবেশী দেশগুলোকে জানিয়েছি যে, ইসরায়েলকে অবশ্যই জবাব দেবে ইরান, যা বৈধ এবং এড়ানোর উপায় নেই।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ দাবির বিষয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হামলার আগে তারা ওয়াশিংটন ও তেহরান উভয়ের সঙ্গে কথা বলেছিল।
কিন্তু ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি অস্বীকার করে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এটি একেবারেই সত্য নয়। তারা (হামলার বিষয়ে) কোনো ধারণা দেয়নি, কোনো নোটিশ দেয়নি। তারা এমন কোনো ধারণা দেয়নি যে, ‘এরা লক্ষ্যবস্তু হবে, তাদের সরিয়ে দিন’।
হামলা শুরু হওয়ার পরেই তেহরান যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিল বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।

ইসরায়েলকে সংযত থাকার আহবান মিত্রদেশগুলোর : ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েল কী করে সেদিকে এখন সবার নজর। তবে ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো উত্তেজনা না বাড়ানোর আহŸান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলো গতকাল সোমবার ইসরায়েলকে সংযত থাকার আহŸান জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানির সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান এবং জাতিসংঘ মহাসচিবও ইসরায়েলকে সংযত থাকতে বলেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতি যেন খাদের কিনারায় চলে না যায় সেজন্য ইসরায়েলি নেতাদের সতর্ক করেছেন তারা।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইরানের সঙ্গে বিরোধে ইসরায়েল প্রতিরক্ষামূলকভাবে জিতেছে। এখন ওই অঞ্চলে আর সংঘাতের তীব্রতা বাড়া উচিত নয়।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ ইসরায়েলকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন এবং বলেছেন তার দেশ পরিস্থিতির আরও অবনতি না হওয়ার ব্যাপারে সম্ভাব্য সবকিছু করবে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ইরানকে পাল্টা জবাব দেওয়ার ব্যাপারে ইসরায়েলের যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। কিন্তু তাদের সাবধান থাকা এবং হৃদয় দিয়ে চিন্তা না করে মাথা দিয়ে চিন্তা করা দরকার।
ইসরায়েলের কর্মকর্তারা বলেছেন, যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রিসভা হামলার জবাব দেওয়ার পক্ষে। তবে এ জবাব কখন এবং কি মাত্রায় দেওয়া হবে তা নিয়ে মতভেদ আছে।
ইরানের মিত্রদেশ রাশিয়া ইসরায়েলে তেহরানের প্রতিশোধ হামলার প্রকাশ্য কোনও সমালোচনা করেনি। তবে তারা সোমবার পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ইসরায়েলকে সংযত থাকারও আহবান জানিয়েছেন।