আশা-নিরাশার দোলাচলে আলুচাষিরা

69

উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার খ্যাত বগুড়ার বেশিভাগ মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে বিস্তীর্ণ আলু। বর্তমানে আলুর পরিচর্যা করেই সময় পার করছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। তবে প্রত্যেক চাষির মনে আনন্দের পাশাপাশি কাজ করছে চরম শঙ্কা। তাই ক্ষেতের আলু নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচলে রয়েছেন চাষিরা।
আনন্দের কারণ জানতে চাইলে আলু চাষি মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বরাবরের মতোই এবার সাত বিঘা জমিতে ডায়মন্ড জাতের আলু লাগিয়েছি। আলু লাগানোর পর থেকে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। গাছের চেহারাও ভালো হয়েছে। এবার গত বছরের চেয়ে আলুর বাম্পার ফলন হবে।
শঙ্কার কারণ হিসেবে অপর আলু চাষি ইউসুফ বলেন, ‘সবকিছু অনুকূলে থাকায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হবে। যে কারণে দাম নিয়ে বাজারে ধস দেখা দিতে পারে। বর্তমানে জেলার বেশ কিছু স্থানে ডায়মন্ড জাতের আলু পাইকারি হিসাবে প্রতিকেজি ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাহলে পুরো মাত্রায় আলু উঠানো শুরু হলে দাম কেমন হতে পারে সে বিষয়টি ভাবতে গেলে গা শিউরে ওঠে।
চলতি মৌসুমে বগুড়ার ১২টি উপজেলায় প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। অথচ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় ৫৭ হাজার হেক্টর।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বাবলু সূত্রধর জানান, জেলার সদর, শিবগঞ্জ, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, গাবতলী উপজেলায় বেশি পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে।
এছাড়া জেলার বাকি উপজেলাগুলোতেও কমবেশি আলু লাগানো হয়েছে। অ্যাস্টারিকা, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, রোমান, অ্যালিভেরি, পাকড়ি জাতের আলু চাষ করেছেন চাষিরা। আগামজাতের কিছু আলু উঠতে শুরু করেছে। তবে পুরোদমে আলু উঠতে শুরু করবে ফেব্রুয়ারি মাসে। বার্তা সংস্থার খবর
তিনি জানান, সবকিছু অনুকূলে থাকায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হবে। এ কারণে চাষিরা দাম নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন বলেও জানান কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা। এরপরও কৃষক তার উৎপাদিত আলুর দাম ভালোই পাবেন বলে আশা করেন তিনি।
আলু চাষিরা জানান, জমিতে আলু লাগাতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে ভালোভাবে জমি চাষ দিতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় সার দিয়ে রোপন করতে হয় আলুর বীজ। ১০-১২ দিনের মাথায় জমিতে সেচ দিতে হয়। এর ১৫-১৬ দিনের মাথায় আলু গাছ বেঁধে দিতে হয়। তারপর শুরু হয় কীটনাশক ছিটানোর পালা। আবহাওয়া ভালো থাকলে ১৫ দিন পরপর আর আলু ক্ষেতে কীটনাশক দিতে হয়। এভাবে ৮৫-৯০ দিন পার করতে হয় প্রত্যেক আলু চাষিকে। এরপর শুরু হয় ক্ষেত থেকে আলু উঠানোর পালা।
আলু চাষি কাওছার আলী জানান, প্রতিবিঘা জমিতে ডায়মন্ড জাতের আলু লাগাতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা করে ব্যয় করতে হয়েছে। আগাম অভিজ্ঞতা ও গাছের চেহারা দেখে তাদের ধারণা, এবার প্রতিবিঘা জমি থেকে কমপক্ষে ৫০-৫৫ বস্তা (৯০ কেজির বস্তা) আলু পাওয়া যাবে। তাই এবার আলু চাষিরা আনন্দ অনুভব করছেন। তবে দাম পাওয়া নিয়ে চরম শঙ্কায় রয়েছেন আলু চাষিরা। বার্তা সংস্থার খবর