আশার আলো বাংলাদেশ দারিদ্র্য জয়ের পথে আরো একধাপ এগিয়ে

64

গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আমাদের জন্য সুখবর দেন যে, গত জুন মাসের শেষে দেশের দারিদ্র্যহার সাড়ে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৮ সালের জুন মাস শেষে এই হার ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। এদিকে গত জুন শেষে অতি দারিদ্র্যহার নেমেছে সাড়ে ১০ শতাংশে। এক বছর আগে এর হার ছিল ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৬ সালের খানা ব্যয় ও আয় জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এই অনুমিত হিসাব করেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, দৈনিক আয় ১ ডলার ৯০ সেন্ট করতে পারলে ওই ব্যক্তিকে দরিদ্র হিসাবে ধরা হয় না। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্য হার কমানোয় খুশি। আমরা মনে করি, শুধু প্রধানমন্ত্রী কেন, এদেশের সকল সকল মানুষ এ সুসংবাদে খুশী হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, দেশের শ্রমিক, কৃষকসহ মেহনতি মানুষের অবদানের কারণে দারিদ্র্য কমেছে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ কিশোর দাস বলেন, বাংলাদেশে উচ্চ বৈষম্যের কারণে দারিদ্র্য কমানোর গতি কম।
অতি দারিদ্র্যের হারকেই আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা হিসেবে ধরা হয়। কোনো দেশে এ হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে এলে ওই দেশকে ‘দারিদ্র্যমুক্ত দেশ’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) মূল উদ্দেশ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হওয়ার লক্ষ্য আছে। বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে প্রায় এক কোটি লোক নিজেদের হতদরিদ্র অবস্থা কাটানোর যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতার পরপর ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে এ দেশে প্রায় অর্ধেক মানুষই হতদরিদ্র ছিল। তখন হতদরিদ্রের হার ছিল ৪৮ শতাংশ। আর দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত সাড়ে ৮২ শতাংশ মানুষ। নব্বইয়ের দশকের আগ পর্যন্ত এই পরিস্থিতির খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সালে থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাতবছরে ৮০ লাখ মানুষ অতিদারিদ্র্য সীমার উপরে উঠেছে। বাংলাদেশের শতকরা ১৮ ভাগ মানুষ অতিদারিদ্র্য সীমার নীচে রয়েছে? তখন এটাকে বাংলাদেশের একটি অর্জন বলে অভিহিত করেছে বিশ্বব্যাংক? আর বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাধারণ আয় বৃদ্ধির হারের চেয়ে অতিদরিদ্রদের আয় বৃদ্ধির হার এখন বেশি? ‘টকিং অন ইন-ইকোয়ালটি’ শিরোনামে বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে ২ কোটি ৮০ লাখ হতদরিদ্র লোক ছিল। বিশ্বব্যাংকের মতে, যাদের মাসিক আয় ১ হাজার ২৯৭ টাকার নীচে তারা হতদরিদ্র অথবা অতিদরিদ্র।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের আয়ের সক্ষতমা বেড়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে লিঙ্গসমতা ও সফল পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এ দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করেছে? জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও এসব কর্মসূচি ভূমিকা রাখছে। সার্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে সরকার, এনজিও, সুশীল সমাজের ভূমিকা আছে। আর এটা বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন। আমারা আশা করি, প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে অতিদারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ হবে। এসডিজি-র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে? আর ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য হ্রাসের ধারা বজায় রাখতে হলে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশে যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ে তাহলে দারিদ্র্য ১ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমে। আমরা মনে করি, দারিদ্র্য হ্রাসের হার দ্রæত করতে উচ্চ বৈষম্যের হার কমানোর প্রতি সরকারকে জোর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কালো টাকার প্রবাহ বন্ধ, ব্যাংক ঋণের খেলাপি সংক্যা কমানোসহ অর্থনীতির গতিধারায় স্বচ্চতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা জরুরি। আমরা দারিদ্র্য হারের ক্রমহ্রাসমান এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে-এমনটি প্রত্যাশা করি।