আলোচনায় এক রোহিঙ্গা বাড়ছে সন্দেহ-কৌতূহল

87

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুন্ডের কেশবপুর এলাকার সাবেক কাশেম জুট মিলের জায়গায় গড়ে তোলা বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজদের তালিকায় নাম এসেছে মিয়ানমারের এক রোহিঙ্গা নাগরিকের। নিখোঁজ ওই রোহিঙ্গার নাম মোহাম্মদ ফারুক। একজন রোহিঙ্গা নাগরিক কীভাবে ডিপোতে নিয়োগ পেল, তা স্বয়ং কর্তৃপক্ষেরও জানা নেই।
এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা সন্দেহ ও কৌতূহল দানা বেঁধেছে। তাকে ঘিরে ‘নাশকতার’ অভিযোগটিও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ঘনীভূত হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত ওই রোহিঙ্গা নাগরিকের অবস্থান সম্পর্কে কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. এমদাদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘ডিপোতে দুর্ঘটনা অনাকাক্ষিত হলেও মিয়ানমার থেকে শরণার্থী হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকের সেখানে শ্রমিক হিসেবে চাকরি করাটা মোটেও অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা নাগরিকরা ধীরে ধীরে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্পের বাইরে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়া অনেক রোহিঙ্গাকে আবার ক্যাম্পে ফেরতও পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গা নাগরিকদের অনেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ার খবরও আমাদের অজানা নয়। বিএম ডিপোতে সংঘটিত ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় একজন রোহিঙ্গা নাগরিকও নিখোঁজ হওয়ার কথা উঠে এসেছে। সঙ্গত কারণেই এ ঘটনায় নিখোঁজ বলে দাবি করা ওই রোহিঙ্গা নাগরিককে নাশকতার উদ্দেশ্যে স্বার্থান্বেষী কোন মহল ব্যবহার করেছে কিনা, সেটাও তদন্তকারীদের খতিয়ে দেখা উচিত। নিখোঁজ রোহিঙ্গা নাগরিককে নিয়ে সন্দেহ-কৌতুহল তৈরি হওয়া মোটেও অমূলক নয়।
এদিকে, ডিপোতে অনাকাক্সিক্ষত অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ৭ মে সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে ভাইকে খুঁজতে আসা যুবক মো. কায়েস তার ভাই ফারুক বিএম ডিপোতে কাজ করত এবং নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করলেও এ ব্যাপারে কারও কিছু জানা নেই। ডিপো কর্তৃপক্ষ কোন রোহিঙ্গা নাগরিকের চাকরির বিষয়টিই তাদের জানা নেই বলে উল্লেখ করেছে। আর জেলা প্রশাসনের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে।
নিখোঁজ রোহিঙ্গার বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তার জন্য অস্থায়ীভাবে চালু করা বুথে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুসাইন মুহাম্মদ বলেন, এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনও তথ্য তাদের কাছে আসেনি। তবে, এমন একটি কথা তাদের কানে আসার পর খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
বিএম কন্টেইনার ডিপোর মহাব্যবস্থাপক মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, ডিপোতে রোহিঙ্গা কাজ করতেন- এমন কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা তদন্ত কমিটিগুলোকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করব।
জানা গেছে, ডিপোতে দুর্ঘটনায় হতাহতের তিনদিন পর গত ৬ মে সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে কথিত নিখোঁজ রোহিঙ্গা নাগরিক মোহাম্মদ ফারুককে খুঁজতে আসেন তার ভাই মো. কায়েস। দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। ১৫ জনের মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি। এছাড়া অজ্ঞাত বেশ ক’জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এসব অজ্ঞাতদের মধ্যেই ওই রোহিঙ্গা ফারুকও থাকতে পারেন।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, রোহিঙ্গা কেন্দ্রিক একটি চক্র কন্টেইনার ডিপোতে কাজ করে বলে নিজেরাই প্রচার করে আসছিল। যদিও এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কিছুই জানা নেই। বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। এ কারণেই নাশকতার সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে এবং বিষয়টিকে তদন্ত সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, সীতাকুন্ডে নেদারল্যান্ড ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি ইনল্যান্ড কন্টেইনার টার্মিনাল বিএম কন্টেইনার ডিপোর অভ্যন্তরে লোডিং শেডে গত ৪ মে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগুন লাগে। এরপর রাত ১১ টার দিকে সেখানে কন্টেইনারে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থার তরফে পৃথক পাঁচটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিগুলোকে বিভিন্ন মেয়াদে প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছে।