আলোকিত শিক্ষক রাজনীতিক লেখক অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ

16

 

একাধারে শিক্ষক, রাজনীতিক, রম্য সাহিত্যিক ও সমাজসেবক এরকম নানান গুণের অধিকারী মানুষ খুব বেশি জন্মায় না। যে কজন মহান ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধে উঠে সমাজকে জাগিয়ে আলোর পথে এগিয়ে নেওয়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন তাঁদের অন্যতম অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ যুগে বাঁশখালী থানা এলাকার মধ্যে পঞ্চম এবং মুসলমানদের মধ্যে দ্বিতীয় এমএ পাস ব্যক্তি। তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন এবং ১৯৫৪ সালে বাঁশখালী থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
জন্ম-পরিচয়: অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদের জন্ম ১৯১৪ সালের মার্চ মাসে, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামে। পিতা সফর আলী মুন্সি ও মা নাসিমা খাতুন। সফর আলী মুন্সি সে যুগে ব্রিটিশ কোম্পানি ‘ব্রাংলো টি এস্টেট’ এর (পরবর্তী সময়ে মোমেন এস্টেট) ব্যবস্থাপক ও সমাজসেবক ছিলেন। তিনি ১৯২১ সালে অর্থাৎ আসহাব উদ্দিনের জন্মেও সাত বছর পর মারা যান। মা-বাবার তিন সন্তানের মধ্যে আসহাব উদ্দিন দ্বিতীয়। বড় ভাই আশরাফ মিয়া চৌধুরী ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন বোর্ডের সেক্রেটারি। পাশাপাশি তিনি পারিবারিক বিষয়-আশয় দেখাশোনা করতেন। মূলত তাঁর আর্থিক সহায়তা ও অনুপ্রেরণায় আসহাব উদ্দিন লেখাপড়ায় এগিয়ে যাওয়ার সাহস পান। ছোট ভাই ডা. আলী আহমদ চৌধুরী ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক।
শিক্ষা: শৈশব থেকে আসহাব উদ্দিন আহমদ ছিলেন মেধাবী। তিনি স্থানীয় মকতব ও মাইনর স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বাণিগ্রাম-সাধনপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৩২ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি ১৯৩৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ২০ টাকা বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে আইএ, ১৯৩৬ সালে ডিসটিংশন নিয়ে বিএ এবং ১৯৪১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় বিভাগে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, ইতিহাসবিদ ড. আবদুল করিম ছিলেন আসহাব উদ্দিনের ছাত্র। তাঁর অনুসন্ধানে দেখা যায়, আসহাব উদ্দিন আহমদ বাঁশখালী উপজেলার মধ্যে পঞ্চম এবং এখানকার মুসলমানদের মধ্যে দ্বিতীয় এমএ পাস ব্যক্তি।
কর্মজীবন: আসহাব উদ্দিন আহমদ প্রথম জীবনে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তবে ১৯৩৯ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত মাত্র প্রায় ১৪ বছর শিক্ষকতা করার পর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং তিন যুগের বেশি সময় নিজেকে বিলিয়ে দেন রাজনীতির মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের নেশায়। এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি শিক্ষক হিসেবে ১৯৩৯ সালে যোগ দেন চট্টগ্রাম কলেজে। এরপর একে একে চট্টগ্রাম ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে হাজি মুহাম্মদ মহসীন কলেজ), লাকসাম নবাব ফয়েজুন্নেসা কলেজ, ফেনী কলেজ এবং সর্বশেষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৩ সালে এই কলেজ থেকে পদত্যাগ করেন।
রাজনীতি: একাধিক তথ্যসূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন শিক্ষকতাকালীন পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত থেকে শিক্ষক রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি শিক্ষক আন্দোলনের মুখপত্র ‘দি টিচার’ এর সম্পাদনা করেন এবং তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত শিক্ষক কনভেনশনে শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনা করার সময় সেখানকার বাম ধারার রাজনীতিক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল খায়ের আহমদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৫২ সালে কুমিল্লায় চলমান ভাষা আন্দোলনে তিনি অধ্যাপক খায়েরের সঙ্গে নেতৃত্ব দেন।
অধ্যাপক ইয়াকুব আলী মোল্লার মতে, ‘এই ভাষা আন্দোলন তাঁর (আসহাব উদ্দিনের) জীবনের একটি স্মরণীয় বছর। সর্বজনপ্রিয় শিক্ষককে নেতৃত্বে বরণ করে ছাত্ররা তাঁকে ক্লাসরুমের নিরুদ্বিগ্ন শান্ত নিরাপদ জীবন থেকে উৎপাটিত করে একেবারে আন্দোলনের ময়দানের মাঝখানে এনে দাঁড় করিয়েছিলেন। মাতৃভাষার দাবি, ন্যায়ের দাবি, সত্যের দাবি, এ দাবির লড়াইয়ে মিথ্যার কাছে, অন্যায়ের কাছে, শক্তির কাছে, বন্দুক বেয়নটের সামনে নতি স্বীকার না করে কুমিল্লার ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে সেই যে তিনি জীবনের ভিড়ের মধ্যে এসে ঠাঁই করে নিলেন, তাঁর আর সারা জীবন পিছু হঠবার অবসর হয়নি।’ ১৯৫৩ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে পদত্যাগ করে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেন। বামধারার রাজনীতির দীক্ষা পেলেও প্রথমে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং দলের কেন্দীয় কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির সহসভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগ বিরোধী হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোট যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। ১৯৫৫ সালে বাঁশখালীর সাধনপুর হাই স্কুল মাঠে নির্বাচনোত্তর সংবর্ধনা সভায় মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও যোগ দেন। তাঁরা এক রাত আসহাব উদ্দিনের বাড়িতে অবস্থান করেন। অন্যদিকে আসহাব উদ্দিন নেপথ্যে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে মাওলানা ভাসানী ন্যাপ (ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি) গঠন করলে এতে যোগ দেন আসহাব উদ্দিন আহমদ এবং ন্যাপের কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রম জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদ- লেলিনবাদ) সদস্য এবং কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি হন। পরবর্তী সময়ে তিনি মোহাম্মদ তোয়াহার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দলে যুক্ত হয়ে গোপন আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। রাজনৈতিক কারণে তিনি ১৯৫৪ সালে কারাবরণ করেন এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে প্রায় ১৫ বছর আত্মগোপনে কাটান। এক পর্যায়ে মোহাম্মদ তোয়াহার সুবিধাবাদী রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন।
জ্ঞান-সাধনা, সাহিত্য: অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ অধ্যাপনা ও রাজনীতির পাশাপাশি লেখালেখিতেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর প্রকাশিত ছোটবড়ো বইয়ের সংখ্যা ৪০টির কাছাকাছি। সমসাময়িক পত্রপত্রিকায় নানান বিষয়ে প্রচুর প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। প্রায় বই বলা যায় রম্য সাহিত্য। এসব বই ও প্রবন্ধ-নিবন্ধে তাঁর রাজনৈতিক চেতনা, সমাজের অসঙ্গতি, দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার ইত্যাদি রম্য-রসাত্মক ভঙ্গিতে তুলে ধরার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। ড. আবদুল করিম বলেন, ‘তিনি একজন সফল লেখক, তাঁর লেখালোখর জীবন ছিল আলোকোজ্জ্বল। তিনি ছিলেন এক অপূর্ব কথাশিল্পী, রম্যরচনা বা স্যাটায়ার সৃষ্টিতে তাঁর তুলনা পাওয়া মুস্কিল।’
ড. আহমদ শরীফ বলেন, ‘এই বইগুলোর নামের মধ্যেই প্রতিফলিত হয়েছে আসহাব উদ্দিন আহমদের মনের, মেজাজের, আদর্শের, লক্ষ্যের, রুচির ও রসবোধের সাক্ষ্য ও প্রমাণ। এভাবে তিনি তাঁর রচনার মধ্যে তাঁর অনাবিল সারল্যের, চারিত্রিক বৈশিষ্টের, আদর্শ নিষ্ঠার, লক্ষ্য চেতনার শোষিত গণমানবদের অকৃত্রিম স্বাক্ষর রেখে গেলেন।’ নিজের সাহিত্য জীবন সম্পর্কে আসহাব উদ্দিন লিখেছেন, ‘রীতিমত সাহিত্যিক বলতে যা বোঝায় আমি তা নই, খেয়ালের চাপে লিখি। … আমার লেখায় হাসি-ঠাট্টার ভেতর দিয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও অবিচারকে তুলে ধরা হয়েছে এবং জনগণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিকে প্রচার করা হয়েছে, জনপ্রিয় করা হয়েছে, প্রোপাগান্ডার আকারে নয়, সাহিত্যরূপে।’
আসহাব উদ্দিনের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বাদলের ধারা ঝরঝর (প্রথম গ্রন্থ), ধার, জান ও মান, হাতের পাঁচ আঙ্গুল, দাঁড়ি সমাচার, বাঁশ সমাচার, আমার সাহিত্য জীবন, উজান স্রোতে জীবনের ভেলা, দাম শাসন দেশ শাসন, ঘুষ, আসহাব উদ্দিনের সেরা রম্য রচনা, কলেজ জীবনের স্মৃতি ইত্যাদি। তাঁর মৃত্যুর পর ‘আসহাব উদ্দিন রচনাসমগ্র’ তিন খÐে বের হয় তাঁর ছেলে এনতেজার উদ্দিন ও অধ্যাপক আনু মোহাম্মদের সম্পাদনায়। এ ছাড়া, ‘বোকা মিয়ার ইতিকথা’ এবং ‘বিপ্লবী আসহাব উদ্দিন আহমদ মানবমুক্তির স্বাপ্নিক পুরুষ’ বের হয় এতেজার উদ্দিনের সম্পাদনায়।
সমাজসেবা, স্কুল-কলেজ, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা: অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ শিক্ষকতা ও রাজনীতির পাশাপাশি সমাজ সেবামূলক কাজেও যথেষ্ট অবদান রাখেন। তিনি বাঁশখালীর সাধনপুর পল্লীউন্নয়ন উচ্চবিদ্যালয় ও বাঁশখালী কলেজের রূপকার ও প্রতিষ্ঠাতা। চট্টগ্রাম সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠায়ও তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রণী। এ ছাড়া তিনি সাতকানিয় কলেজ, পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চবিদ্যালয়, বাহারচড়া রতœপুর উচ্চবিদ্যালয় এবং সরল আমির হামজা উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন।
ছোটকাল থেকেই তিনি নিজে যেমন বইয়ের প্রতি মনোযোগী ছিলেন তেমনি জ্ঞান-বিজ্ঞানে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে এলাকার ছেলেমেয়েদেরও বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করতেন। এ জন্যই তিনি বাণীগ্রাম স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় সহপাঠীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘সাধনপুর পল্লীমঙ্গল পাঠাগার’। ড. আবদুল করিম লিখেছেন, ‘আমৃত্যু পড়া এবং লেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি তাঁর আগ্রহ নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে অপরকেও এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন। এ জন্যই আমরা দেখি তিনি দুইটি কাজ ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন-পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা। পাঠাগার প্রতিষ্ঠা তাঁর একটা বাতিকের মতো ছিল। কারণ তিনি জানতেন যে, শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে জনগণ শিখতে পারবে না।’ সে যুগে পাঠাগারের জন্য বই যোগাড় করা ও পাঠক আকৃষ্ট করা যে কী কষ্টের সে অভিজ্ঞতার সারকথা তুলে ধরছি আসহাব উদ্দিন আহমদের স্মৃতিকথা থেকে। বিভিন্ন বাড়ি থেকে বাংলা সাহিত্যের বাতিল হওয়া বিভিন্ন শ্রেণির বই সংগ্রহ করে পাঠাগারে এনে বড় চায়ের পেটিতে রাখা হতো। পাঠককে দরকারি বইটি দেওয়ার সময় কখনো কখনো পেটি থেকে সব বই নামাতে হতো। রোববারে ছুটির দিন তিন-চারজন মিলে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বই দিয়ে আগের বই নিয়ে আসতেন যাতে বই পাঠে উৎসাহ বজায় থাকে। এলাকার পারিবারিক অনুষ্ঠানাদিতে সামিয়ানা টানানো, বিছানা সাজানো, অতিথিদের আপ্যায়ন ইত্যাদি করে দেওয়ার বিনিময়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে পাওয়া বখশিশের টাকা পাঠাগারের জন্য চাঁদা গণ্য করে খরচ করা হতো। বইয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আলমিরার প্রয়োজন হলে একটি নাট্টাভিনয়ের জন্য দুই মন চাল যোগাড় করে তা চার টাকায় বিক্রি করে আলমিরা কেনা হয়। পরবর্তী সময়ে এলাকার রাজনৈতিক ও সাহিত্যানুরাগী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পাঠাগারটি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
পারিবারিক জীবন: শিক্ষকতার পাশাপাশি সংগ্রামী রাজনৈতিক কর্মকাÐ, লেখালেখি ও সমাজসেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগকারী আসহাব উদ্দিন আহমদের সংসার তথা পারিবারিক জীবন তেমন একটা স্থিতিশীল ছিল না। পারিবারিক সূত্রে আলাপ করে জানা যায়, তিনি দুইটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার চেমন বাহার বেগম ২০০২ সালে মারা যান। তাঁদের ঘরে দুই সন্তান-নাসিমন আরা এপি এবং এনতেজার উদ্দিন। নাসিমনের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল আহাদ। দ্বিতীয় স্ত্রী জোহরা বেগমের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায় (ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলামের ফুফু)। তিনি আসহাব উদ্দিনের সঙ্গে কুমিল্লার বাসায় থাকতেন। সেখানে প্রথম সন্তানের জন্মের সময়ই তিনি মারা যান। মাস দুয়েকের মধ্যে মারা যায় সন্তানটিও। পরবর্তী সময়ে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আর যোগাযোগ ছিল না।
সম্মাননা: আসহাব উদ্দিন অনেক সংবর্ধনা ও সম্মাননা পদকে সিক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ১৯৮৯ সালে ঢাকায় নাগরিক সংবর্ধনা পরিষদ কর্তৃক ৮৫ হাজার টাকার তোড়া উপহার, বৌদ্ধ একাডেমী পদক, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাকেন্দ্র পদক, চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ পদক ও লেখিকা সংঘ পদক।
মৃত্যু: গৌরবময় নানামুখি প্রতিভার অধিকারী এই মহান ব্যক্তি ৮০ বছর বয়সে, ১৯৯৪ সালের ২৮ মে সন্ধ্যায় মারা যান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজের মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
সম্পাদক ইতিহাসের খসড়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণাকর্মী