আলুসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই মনিটরিং জোরদার করতে হবে

28

নিত্যবাজারে আগুনঝরা দাম পুরনো কথা। তখনও গরিবের ডাল-চালের সাথে আলু হলেই চলত। আর সবজির বাজারে আলুই ছিল কম মূল্যের। কিন্তু হঠাৎ এই আলুই অস্বাভাবিক দামে উঠে গরিবের মুখে খাবার বন্ধ করার উপক্রম হয়েছে। সূত্র জানায়, এখানেও সিন্ডিকেট কারসাজি কাজ করছে। গতকাল সোমবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের তরকারির ম্যানুর সর্বাংশে যে আলু থাকত, সেই আলুর বাজার দরে আগুন। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে আলু কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হয়েছিল, বর্তমানে সেটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গরিবের সবজি হিসেবে পরিচিত এই নিত্যপণ্যটি সপ্তাহের ব্যবধানে আড়তদাররা কেজিতে ১০-১২ টাকা দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেন খুচরা বিক্রেতারা। তাদের দাবি, তেল-ডালের পাশাপাশি এবার আলুতেও সিন্ডিকেট গড়েছেন আড়তদাররা। অপরদিকে আড়তদারদের দাবি, কৃত্রিম সংকট নয় বরং করোনা ও বন্যার ত্রাণে আলু বিতরণ করায় মজুদ ফুরিয়ে এসেছে। এজন্যই বাজারে চাহিদার তুলনায় আলুর যোগান কম থাকায় দাম বেড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, করোনায় আয় সংকটে থাকা নিম্ন ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো চাল, লবণ আর আলু হলেই তিনবেলা কাটিয়ে দিতেন অনায়াসে। অথচ এখন এক কেজি আলু কিনতে ঘাম ঝরার অবস্থা। আর বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন বাজারে তেল-ডালের পর এবার আলু নিয়ে কারসাজি শুরু হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে এক কোটি ৯ লক্ষ টন আলু উৎপাদনের বিপরীতে বার্ষিক চাহিদা ৭০ লাখ টনের মত। সেই হিসেবে ৩৯ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকলেও দাম বাড়ার জন্য সংকটের দোহাই দিচ্ছেন গুদামজাতকারীরা। আমরা লক্ষ করে আসছি করোনার মত মহামারীতে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা যখন বিপর্যস্ত তখন একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। গণমাধ্যমে এনিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় লেখা হলেও সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন একটু নড়েচড়ে আবারও যেন ঝিমিয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা আর কমতে চায় না। গত বছর অক্টোবরে ভারত আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে অস্থিরতা দেখা যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় যে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হতো, সেই পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর সরকার তড়িঘড়ি করে পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলে দাম কমে যায়। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। কিন্তু একবছর যেতে না যেতে ফের পেঁয়াজের বাজারে ঊর্ধ্বগতি সাধারণ ভোক্তাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ৯০ থেকে ১০০টাকা। ইতিমধ্যে ভারত, মিযানমার ও তুরস্ক থেকে নতুন পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। তারপরও পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে বড় ধরনের কারসাজি আছে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। শুধু পেঁয়াজ নয়, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক সপ্তাহে আলু, চিনি, ভোজ্যতেল, ডিমের দাম কমবেশি বেড়েছে। ১৮টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বেশি। কম সাতটির দাম। বাজারের এই দুঃসংবাদের মধ্যে সুসংবাদ হলো গত ছয় বছরে সবজির উৎপাদন বেড়েছে এক-তৃতীয়াংশের বেশি। একটি অনলাইন নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে সবজি উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ টন; যা আগের বছরের চেয়ে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন বেশি। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো বিপণনব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে কৃষক ন্যায্য দাম পান না। বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কৃষক যে বেগুন ২০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন, সেই বেগুন শহরে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ব্যবধান ৪০ টাকা। এতে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন। লাভের গুড় প্রায় পুরোটাই নিয়ে যায় মধ্যস্বত্বভোগীরা। সবজিসহ সব খাদ্যপণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার ও প্রশানের কঠোর নজরদারি ও মনিটরিং দরকার। এছাড়া উন্নত বিপণনব্যবস্থাও প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে কৃষকের বাজার বা বিপণনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা গেলে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিক্রি করতে পারবেন। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন।