আমাদের শৈশব

68

বোনটা আমার এনে দিল খাতা, কতগুলো রং, তুলি
বলছে যে ভাই আঁকতে পারো কী ? মাছরাঙা বুলবুলি।
মেঘ রোদ্দুর দখিন হাওয়া সূর্যটা হাসে ফিক,
পাখিদের গানে সুরে সুরে কথা, মেতে ওঠে চারদিক।

আঁকতে বলে সে হাসি মাখা মুখ কাজল গাঁয়ের ছবি,
ডান দিকে ছুটে বামে মোড় নেয়া মাঠ ঘাট বিল সবই।
ফসলের ক্ষেতে সর্ষের ফুলে হলুদের মাখামাখি,
ভাঙা আলপথ ঝোপ-ঝাড় ফুল, দিতে যদি ফের আঁকি।

থমকে দাঁড়াই কার্পেটে মোড়া সবুজ দূর্বাঘাসে,
পাহাড়ের চূড়ো দিগন্ত ছুঁয়ে আকাশের নীল হাসে।
গাছ পাতা বন নদী আর ঢেউ, পাখিদের কোলাহল,
হাঁড়ি পেতে বসা পুকুরের ঘাটে শেফালির চোখে জল।

চৌকাঠে বাবা উঠোনেতে খেলা, পুবে রামধনু আঁকা,
হাতের মুঠোয় মিশে আছে যেনো আমাদের ভালো থাকা।
বল তুমি ভাই, রঙ-তুলিটার ছোঁয়ায় মিলেছে সব ?
মাঝখানে দেখো উঁকি দিয়ে কাঁদে আমাদের শৈশব ।

ফুল ফুটেছে
সৈয়দ খালেদুল আনোয়ার

রঙঝলমল ফুল ফুটেছে
খুকুমণির বাগানে
সে খুশিরই আমেজ লাগে
খুকুর কবিতা গানে।

ফুলকন্যা ইলিক ঝিলিক
রূপের ছটা ছড়ালো
পরাগ রেণু হাওয়ায় উড়ে
খুকুর জামায় জড়ালো।

মৃদু হাওয়ার দূত পাঠিয়ে
ভ্রমরকে সে আনালো
ফুলসন্দেশ ফুল� মনে
ভ্রমরকে সে জানালো।

ভ্রমর খুকু ফুলের হলো
গলায় গলায় মিতালি
খুকুর মনে ক্ষণে ক্ষণে
বাজে খুশির গীতালি।

হেমন্তকাল
কাজী মারুফ

হেমন্তকাল ঋতুর কথা
সব বাঙ্গালি জানে
এই ঋতুতে বসতবাড়ি
ভরা থাকে ধানে।

রৌদ্র হাসে ঝিলিক মেরে
ঠিক দুপুরের কালে
কৃষক-চাষি ক্ষেতে তখন
থাকে কর্মজালে।

নতুন চালের পিঠাপুলির
গন্ধ আসে নাকে
নবান্নেরই সুখ আমেজে
সবাই মত্ত থাকে।

শুভ্র রঙের শিশিরকণা
পড়ে সবুজ ঘাসে
কদিন পরে শীতের বুড়ি
কুটুম সেজে আসে।

ছেলেবেলা
শওকত আলী

হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা
ছবি দেখার বায়স্কোপ,
রেগে গেলে মা বলতেন-
দুষ্টুমি নয় আর,চুপ।

হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা
দখিন দিকের মাঠ,
গ্রামের পাশে ছোট্ট নদীর
নৌকা বাধা ঘাট।

হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা
কেমনে ভুলি বল?
তখন কি আর,এসব ছিল
নেটের তেমন চল?

তখন ছিল বায়স্কোপ আর
নানান রকম খেলা,
এখন তো সব হারিয়ে গেছে
পুরানো সেই মেলা।

স্বপ্নলোকের সিঁড়ি
কানিজ ফাতিমা

ভালো লাগে পড়া লেখা ভালো লাগে বই
ভালো লাগে বিদ্যালয়ের আনন্দ হৈ চৈ।
লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে মিছে মিছি খেলা
বিদ্যালয়ে যায় কেটে যায় সকাল দুপুর বেলা।

বাংলা ক্লাসে নানান রকম মজার মজার পাঠে
কখনো মন উড়ে বেড়ায় কখনো মন হাঁটে।
গনিত ক্লাসে সংখ্যা নিয়ে জাদুকরের মতো
নিত্য নতুন অংক কষি আমি অবিরত।

বাংলাদেশের ছেলে আমি ইংরেজিতে বলি
মুঠোয় পুরে বিশ্বটাকে বুক ফুলিয়ে চলি।
বিশ্ব নিয়ে আপন মনে বসে যখন ভাবি
বিশ্বপরিচয়ে আছে বিশ্বজানার চাবি।

প্রযুক্তি আর তথ্য জেনে খুলি মনের দ্বার
বিজ্ঞানের জ্ঞান দেয় জানিয়ে কত আবিষ্কার।
স্নিগ্ধ সুরভ প্রশান্তিতে মন প্রাণ যায় ভরে
নৈতিকতার আদর্শ নিই ধর্ম ক্লাসে পড়ে।

জ্ঞানের পাড়ায় সকাল সন্ধ্যা আলোক খুঁজে ফিরি
একদিন আমি পাবো ঠিকই স্বপ্নলোকের সিঁড়ি।
বিদ্যাসাগর হয়ে জ্ঞানের দরজা দেবো খুলে
ভরাবো এই পৃথিবীকে রাঙা আলোর ফুলে।