আবারও শিক্ষক লাঞ্ছিত ছাত্রলীগ নেতার হাতে

20

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমইএস কলেজে ছাত্রলীগ নেতার হাতে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরও এক ছাত্রলীগ নেতার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের এক শিক্ষক। পরীক্ষার হলে দেখে লিখতে বারণ করায় হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মুজাহিদুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করেছেন কলেজ ছাত্রলীগ আহŸায়ক কাজী নাঈম। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর দাশ পদত্যাগ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাটি ঘটে। গত রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ঘটনার সাথে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছে মাফ চেয়েছে।
ঘটনার শিকার শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আর কথা বলতে চাইছি না। সকাল থেকে গণমাধ্যমে যা বলেছি তাই সঠিক। সে (নাঈম) কি করেছে এগুলো সবাই জানে। পরে প্রিন্সিপালের সামনে সে আমার কাছ থেকে মাফ চেয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর স্যারও পদত্যাগ করেছেন’।
সাংবাদিকদের ওই শিক্ষক বলেন, বৃহস্পতিবার ডিগ্রি প্রথমবর্ষের পরীক্ষা চলাকালে সরকারি কমার্স কলেজের এক ছাত্র অন্যজন থেকে দেখে পরীক্ষায় লিখছিল। এসময় আমি দায়িত্ব পালনকালে এমন অনিয়মে বাধা দিই। কিন্তু তারা কোনোভাবেই কথা না শুনলে আমি কিছুটা কঠোর হই। পরে এক ছাত্র ১ ঘণ্টা পর খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ছেলেটি কলেজ ছাত্রলীগের আহব্বায়ক কাজী নাঈমকে নিয়ে আসে। তাদের সঙ্গে আরও ৮-১০ জন ছাত্র ছিল। নাঈম আমাকে জিজ্ঞেস করে, তাদের কেন লিখতে দেওয়া হচ্ছে না? আমি বলি, এভাবে পরীক্ষার হলে দেখে লেখার সুযোগ নেই। এরপর নাঈম আমাকে বলে, আপনি লিখতে দেবেন কি-না? আমি বলি, পারবো না। এরপর নাঈম বলে, ‘আপনাকে মেরে কলেজ থেকে ট্রান্সফার করবো। এই সময় আরও কিছু অশালীন কথা বলে সে চলে যায়। এমনকি এই ঘটনায় আমাদের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সুবির স্যার নাঈমের কাছ থেকে ঘটনার কারণ জানতে চাইলে সে বলে, আপনি কে? আপনাকে কেন কৈফিয়ত দিতে যাবো?
কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, কলেজ অধ্যক্ষ নিজেই নাঈমকে আস্কারা দিয়েছেন। এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেক ঘটনায় নাঈমকে ছাড় দেয়া হয়েছে। সে বারবার পার পেয়ে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও তাকে কৌশলে মাফ চাইয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের আহব্বায়ক কাজী নাঈম পূর্বদেশকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের কয়েকজন পরিচিত ছেলে পরীক্ষা দিচ্ছিল। তাদের কাছ থেকে মুজাহিদ স্যার খাতা নিয়ে ফেলে। আমরা কলেজের নিচে দাঁড়ানো অবস্থায় তারা আমাদেরকে সেটি জানালে আমি প্রিন্সিপাল স্যারকে অভিযোগ দিতে বলি। তারা অভিযোগও দিয়েছে। এখানে আমার সাথে কোনো স্যারের ঝামেলা হয়নি। আমার মাফ চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। অন্যদের সাথে ঝামেলা হয়েছে আমি কেন মাফ চাইবো’।
হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. কামরুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে একটা ছাত্র দুর্ব্যবহার করেছিল। পরবর্তী কর্মদিবস (রবিবার) অভিযুক্তদের ডেকেছিলাম। অভিযুক্তরা এসে সকল শিক্ষকের উপস্থিতিতে ক্ষমা চেয়েছে। ওই শিক্ষকও তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। তারা নিজেরাও ভুল শিকার করেছেন। প্রধান অভিযুক্ত নাঈমের কর্মকান্ডের উপর আমাদের নজরদারি থাকবে।
এ ঘটনায় জের ধরে শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর দাশ পদত্যাগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনার সাথে বিভিন্ন সময় তারা ঝামেলা করেন। এরপরেও উনি পদত্যাগ করবেন কেন? আমরা উনাকে রাখতে চাইছি। উনি নিজেও অসুস্থ বলে সরে দাঁড়াতে চাইছেন। সামনে জুন মাসে এমনিতেই আরেকজন দায়িত্ব নিবেন। এ পর্যন্ত উনি যাতে থাকেন সেটি বলেছি’।
পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবীর দাশ পূর্বদেশকে বলেন, আমি পারিবারিক ও অসুস্থতাজনিত কারনে পদত্যাগ করেছি। হয়তো অনেকেই এটিকে এ ঘটনার সাথে মেলাচ্ছে। তবে যে ছেলেটির বিরুদ্ধে অভিযোগ সে কার সাথে বেয়াদবি করে নাই সেটি আপনারাই বের করেন। ও এমন অবস্থা করে যেন সেই কলেজের সর্বেসর্বা। আমি ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সে আমাকে বলে, আপনি কে? আপনাকে কেন কৈফিয়ত দিব? আমাকে ট্রান্সফার করার হুমকি দিয়েছে। হয়তো দেখবেন, কয়েকদিনের মধ্যে আমাকে ঠিকঠিক ট্রান্সফার করে ফেলছে। আমি তাকে বারবার বুঝাতে চেয়েছি, ছাত্রলীগ স্বনামধন্য সংগঠন। এই সংগঠনের আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য আছে। কিন্তু কিছুতেই সে এগুলো মানতে চায় না।