আনোয়ার হোসেন

0

আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশের একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা। তিনি চলচ্চিত্র ভুবনে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও মুকুটহীন নবাব নামে খ্যাত। তিনি ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, নাট্যধর্মী, লোককাহিনীভিত্তিক, পোশাকি ফ্যান্টাসি, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, পারিবারিক মেলোড্রামা, বক্তব্যধর্মীসহ বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি ১৯৫৮ সালে চিত্রায়িত তোমার আমার চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে অভিনয় জীবনে প্রবেশ করেন। ঢাকার চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তী অভিনেতা ৫২ বছরের অভিনয় জীবনে পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।
১৯৭৫ সালে লাঠিয়াল ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে প্রথমবারের মত আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারলাভ করেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে একুশে পদক প্রদান করা হয় এবং অভিনেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই পুরস্কার লাভ করেন।
আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে। তার পিতা একেএম নজির হোসেন ছিলেন সাব-রেজিস্টার এবং মাতা সাঈদা খাতুন। নজির-সাঈদা দম্পতির তৃতীয় সন্তান আনোয়ার হোসেন। তিনি ১৯৪০ সালে দেওয়ানগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৫১ সালে তিনি জামালপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে। কলেজের প্রথম বর্ষে অভিনয় করেন আসকার ইবনে শাইখের পদক্ষেপ নাটকে। প্রথম বর্ষের পরীক্ষার পর তার পিতার বন্ধু আবদুল্লাহ খানের সেলকন ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে সুপারভাইজার হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং নাসিমা খানমকে বিয়ে করেন।
হোসেন ১৯৫৯ সালে ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে ননী দাস নির্দেশিত এক টুকরো জমি নাটকে অভিনয় করেন। পরে তিনি ঢাকা বেতারে অডিশন দেন এবং হাতেম তাই নাটকে একটি অপ্রধান চরিত্রে কাজ করেন। মঞ্চনাটকে কাজের সুবাদে তিনি আবদুল জব্বার খান, মোহাম্মদ আনিস ও হাবিবুর রহমানের সাথে পরিচিত হন। এসময়ে তারা ঝিনুক পত্রিকার সম্পাদক আসিরুদ্দিনের সহযোগিতায় মিনার্ভা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন এবং এতে যুক্ত হন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফতেহ লোহানী, মেহফুজ, সুভাষ দত্ত, চিত্রা সিনহাসহ আরও অনেক অভিনয়শিল্পী।
পরিচালক মহিউদ্দিনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুবাদে প্রথম পরিচয়েই আনোয়ার হোসেন তার অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করে তোমার আমার (১৯৬১) ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। এতে তিনি খলচরিত্রে অভিনয় করেন। বিডিনিউজ ২৪ ডট কম দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অভিনয় জীবনের শুরুর কথা তিনি জানান।
একই বছর তিনি তার অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র সূর্যস্নান-এ মুখ্য অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর তিনি জোয়ার এলো(১৯৬২), কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩), নাচঘর (১৯৬৩), দুই দিগন্ত (১৯৬৬), বন্ধন (১৯৬৪), একালের রূপকথা (১৯৬৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার ও সুমিতা দেবী অভিনীত দুই দিগন্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ঢাকার বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন হয়েছিল। তার অভিনীত প্রথম উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র উজালা। এটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। ১৯৬৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাচলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেন। এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে নিগার পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৭৫ সালে তিনি নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে কাদের লাঠিয়াল চরিত্রে অভিনয় করেন। এই কাজের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রথম আয়োজনে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
২০১০ সালে হোসেনকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।
সূত্র : উইকিপিডিয়া