আট পণ্যে আটকে আছে রপ্তানি আয়

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

আট পণ্যে আটকে আছে দেশের রপ্তানি খাত। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সহায়তা এবং উদ্যোক্তাদের নানা উদ্যোগের পরও যেন একটি নির্দিষ্ট বলয়ে থমকে আছে রপ্তানি আয়। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ওই আট পণ্য থেকে এসেছে মোট রপ্তানি আয়ের ৯৪ শতাংশেরও বেশি। ৬ শতাংশেরও কম এসেছে রপ্তানি খাতের বাদবাকি সব পণ্য থেকে। রপ্তানি তালিকায় ছোট-বড় মিলে পণ্য সংখ্যা এখন সাত শতাধিক। কিন্তু এসব পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। রপ্তানিতে প্রধান আটটি পণ্য হচ্ছে- তৈরি পোশাকের ওভেন ও নিটওয়্যার, হোমটেক্সটাইল, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাতপণ্য, চামড়া ও চামড়াপণ্য ও প্রকৌশল পণ্য। গত অর্থবছরে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলার মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ওই আট পণ্য থেকে এসেছে ৪ হাজার ৯১০ কোটি ডলার। অর্থবছরটিতে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ বাকি প্রায় ৭০০ পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে মাত্র ২৯৯ কোটি ডলারের মতো।
এর আগে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ে এই আট পণ্যের অংশ ছিল ৯৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৯৫ শতাংশ। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৯৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান মনে করেন, রপ্তানি নীতি ও কাঠামোগত সমস্যার কারণে পণ্য রপ্তানি বছর বছর আরও কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। সমকালকে তিনি বলেন, বন্ডেডওয়্যার হাউসের সুবিধা রপ্তানি খাতের সব পণ্যের জন্য উন্মুক্ত। অথচ বাস্তবে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য কোনো খাত এ সুবিধা নিতে পারে না। কারণ এতসব কাগজপত্র চাওয়া হয় যে, অন্য খাতের অনেক উদ্যোক্তাদের পক্ষে সেগুলো দেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পনগরী কমপ্লায়েন্ট না হওয়ার কারণে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে চামড়াপণ্য নিচ্ছেন না। বাজার হিসেবে চীন একমাত্র ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে। কারণ তারা কমপ্লায়েন্সের ধার ধারে না। দর কম পেলেই হলো। কৃষি, হালকা প্রকৌশলসহ সব সম্ভাবনাময় খাতেই একই পরিস্থিতি।
২০২১-২২ অর্থবছরের রপ্তানি তথ্য বিশ্নেষণে দেখা যায়, আট পণ্যের মধ্যে আবার তৈরি পোশাকের দাপট নিরঙ্কুশ। পোশাক খাতের নিট এবং ওভেন থেকেই এসেছে মোট রপ্তানির ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশ। হোমটেক্সটাইলও পোশাকের সমজাতীয় ধরা হয়। রপ্তানিতে হোমটেক্সটাইলের অংশ ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। এ হিসাবে মোট রপ্তানিতে পোশাক খাতের অবদান প্রায় ৮৫ শতাংশ। আবার পোশাক খাত নিজেই আটকে আছে পাঁচ পণ্যে। পণ্যগুলো হচ্ছে- ট্রাউজার, টি-শার্ট, সোয়েটার, শার্ট এবং ব্লাউজ ও আন্ডারওয়্যার। মোট পোশাক রপ্তানির ৮২ শতাংশেরও বেশি আয় আসে এ পণ্যগুলো থেকে। গত অর্থবছরে এ পাঁচ পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে তিন হাজার ৫১১ কোটি ডলার। এ খাতের বাকি পণ্যে রপ্তানি ৭৫০ কোটি ডলারের।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পণ্য উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, ১৪টি সরকারি সংস্থা রপ্তানি-সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কী ধরনের সীমাবদ্ধতা আছে, তা চিহ্নিত করতে একটি জরিপ করা হচ্ছে। চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে কৌশল নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরিকল্পনা আছে তাদের।