অভিযুক্ত রিকশাচালক মিন্টু গ্রেপ্তার

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর পোর্ট কলোনির একটি পরিত্যক্ত বাসায় ধর্ষণের পর সাত বছরের শিশুকে হত্যার ২৫ দিন পর অভিযুক্ত রিকশাচালককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর ছদ্মবেশে থাকা সন্দেহভাজন রিকশাচালক ওসমান হারুন ওরফে মিন্টুকে (৪৪) গত বুধবার রাতে নগরীর আগ্রাবাদের বেপারীপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পৈশাচিক এই ঘটনার পর থেকেই পুলিশের সন্দেহের শীর্ষে থাকা রিকশাচালক ওসমান হারুন ওরফে মিন্টুর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। তিনি সেখানকার বেগমগঞ্জ থানার চৌমুহনী পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের হাজিপুর সিরাজ সর্দার বাড়ির মৃত আলী আজমের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নগরীতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খালার বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয় সাত বছর বয়সী শিশু সুরমা আক্তার। বিরিয়ানি খাওয়ানোর কথা বলে হালিশহর কে ব্লক এলাকা থেকে শিশুটিকে বন্দর থানার পোর্ট কলোনির আট নম্বর সড়কের মুখে পরিত্যক্ত একটি বাসায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক কিশোর মজুমদার বলেন, পোর্ট কলোনির পরিত্যক্ত বাসা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর এক রিকশাচালকের জড়িত থাকার কথা জানা গেলেও তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না। হত্যাকান্ডের পর ওই রিকশাচালক ছদ্মবেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তাকে শনাক্তের পর তার অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। এরপর গত বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর ঘটনার দিন সন্ধ্যায় যার কাছ থেকে বিরিয়ানি কিনে তিনি নিজে খাওয়ার পাশাপাশি সুরমা আক্তারকে খাইয়েছিলেন; সেই বিরিয়ানি বিক্রেতা তাকে শনাক্ত করেছেন। এছাড়া সুরমাকে বিরিয়ানি কিনে দেয়ার প্রলোভনে ফেলে রিকশায় তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় আরেক শিশু তাকে দেখেছিল। সেও তাকে শনাক্ত করেছে। ঘটনায় ব্যবহৃত রিকশাটিও জব্দ করা হয়েছে।
বর্বরতার পর নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার শিশু সুরমার বাবা রিকশাচালক মো. কাউছার কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘একটা মাছুম শিশুকে বিরিয়ানি কিনে দেয়ার লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে রাতভর পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। শ্বাসরোধ করে আমার নিস্পাপ মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ কী করে এমন জঘন্য কাজ করতে পারে। আমি আমার মেয়ে হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।’
উল্লেখ্য, নগরীর পোর্ট কলোনির পরিত্যক্ত একটি একতলা বাড়ির ভেতর থেকে বন্দর থানা পুলিশ গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাত বছর বয়সী কন্যাশিশু সুরমা আক্তারের নিথর মরদেহ উদ্ধার করে। ওই কন্যাশিশু তার মা-বাবার সাথে বড়পোল এলাকার বুইল্ল্যার কলোনিতে বসবাস করত। আগের দিন সন্ধ্যায় বাসা থেকে বেরিয়ে সে আর ফেরেনি। নিখোঁজ হওয়ার ১৭ ঘণ্টা পেরিয়ে পরদিন সকাল এগারটার দিকে পুলিশ পোর্ট কলোনির আট নম্বর সড়কের মুখে একটি পরিত্যক্ত একতলা বাড়ির ভেতরে তার লাশের সন্ধান পায়। পুলিশ কর্মকর্তারা তখনই ধারণা করেছিলেন, তাকে ফুঁসলিয়ে সেখানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনায় বন্দর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা রেকর্ড করা হয়।