অভিমান নিয়ে চিরকালের জন্যে চলে গেলো সাফায়েত

41

সন্দ্বীপ প্রতিনিধি:
গত বৃহস্পতিবার রাত ৭টা ৩০মিনিটে সন্দ্বীপ পৌরসভা কলাতলি বাজারে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে মিটার সংযোগ ঠিক করার জন্যে খুঁটির উপরে উঠে ২০ বছর বয়সী কাজী সাফায়েত উল্যা। সেখানেই বিদ্যুৎ স্পষ্ট হয়। দ্রুত এলাকাবাসী এবং স্বজনরা সরকারি ৫০শয্যা গাছুয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। আইসিউ না থাকার কারণে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে চট্টগ্রাম রেফার করেন। স্বজনরা এরপর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকেও তাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এবং চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার রেফার করে তারা। পরবর্তীতে গুপ্তছড়া ঘাট দিয়ে লালবোটে করে চট্টগ্রাম আনা হয়। রাতেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিউতে ভর্তি করানো হয়। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে লড়তে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে কাজী সাফায়েত। রবিবার ৬ আগস্ট দুপুর ১২:৩০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইসিওতে কর্তব্যরত চিকিৎসক। চট্টগ্রাম হালিশহর বিডিআর মাঠ সংলগ্ন শিশু পল্লীতে রাত ১১টায় তার জানাজার প্রথম নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার ভোরে সাফায়েতের মরদেহ তার নিজ গ্রাম সন্দ্বীপ নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেই তাকে দাফন করা হবে, বলে জানা গেছে। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে সন্দ্বীপ পৌরসভা ৫নং ওয়ার্ড বাসিন্দা কাজী বাকায়েত উল্যাহর ছেলে কাজী সাফায়েত উল্যাহ ২০বছর বয়সে বিদ্যুতের মিস্ত্রির কাজ করা শুরু করে। তার মাঝে ছিলো চাপা অভিমান আর ক্ষোভ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ভাবে তার ক্ষোভ এবং কষ্টের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তার স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীর মাধ্যমে জানা যায়, সাফায়েত ছিলো নম্রভদ্র এক তরুণ। তাকে সবাই ভালো জানতো। সবার আড়ালে পারিবারিক অসচ্ছলতা তিলে তিলে তাকে গ্রাস করেছিলো। সকলের বারণকে উপেক্ষা করে বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সে করেছে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করার আক্ষেপ ছিলো তার। শেষ পর্যন্ত অভিমান আর আক্ষেপ নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন এই তরুণ। পুরোপুরি ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে তার স্বজনরা। শোকের মাতন চলছে পরিবার জুড়ে। এদিকে জনগণ তার মৃত্যুর জন্যে দায় করছে সন্দ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতিকে। এই ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে সরব সন্দ্বীপের জনগণ। তারা বলছে, রাত নামার পরে মূলভুখণ্ডের সাথে দ্বীপের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রাতে উত্তাল সাগরে রোগী পারাপারের মাধ্যম নেই। ঝুঁকিপূর্ণ লালবোট দিয়ে রোগী পারাপার করানো হয়। তাতে শহরে পৌঁছাতে লম্বা সময় লেগে যায়। আর এই সমস্যার সমাধান না হওয়ার কারণেই একের পর এক লাশের মিছিল। সন্দ্বীপ আসলেই একটি কারাগার। রাত নামলেই বন্দি হয়ে যায় এই বিছিন্ন দ্বীপের জনগণ। সন্ধ্যার পর মূল ভূখণ্ডের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য সেবার যাচ্ছেতাই অবস্থার কারণে কেউ রাতে অসুস্থ হলে শহরে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। দুই হাত তোলে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া এদের আর কিছুই থাকে না।