অভিনন্দন টেস্ট টিম টাইগার এ অদম্য পথচলা অব্যাহত থাক

8

 

চোখ ধাঁধাঁনো এক খেলা। না কল্পনা নয়, বাস্তবতার কঠিন সত্যে দাঁড়িয়ে বক্স অফিসের ঘোষণা মঞ্চ থেকে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটারদের প্রশংসার দ্যোতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। হৈচৈ-এ মেতে উঠল তামাম দুনিয়া। একি অঘটন! নাকি বাংলাদেশের বাস্তবতা। না অঘটন নয়, বাংলাদেশের টিম টাইগারের পূর্ণতার বাস্তবতা। হ্যাঁ তাই হোক, আগামী দিনগুলিতেও। ইবাদত আর তাসকিনের জাদুকরি বুলিং স্পিডে তছনছ হয়ে গেল ক্রিকেট দুনিয়ার টেস্ট কিং হিসাবে খ্যাত নিউজিল্যান্ড। গত টেস্ট আসওে ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়ে চ্যাস্পিয়ানের মালা গলায় নিয়ে যে কিউরা ডানা মেলে উড়েছে; এবার তারাই একই পরিনতিতে ধরাশয়ী হল টিম টাগারদের হাতে। সেই সাথে ক্রিকেট বিশ্বের টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশ নতুন করে জায়গা করে নিল। শাবাশ বাংলাদেশ। অভিনন্দন টেস্ট টিম টাইগার।
কথায় বলে, ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের মধ্যে সবচেয়ে অভিজাত ঘরানা টেস্ট। বাকি দুটি ওয়ানডে ও টি-টোয়ান্টি। বাংলাদেশ গত দুই দশক প্রায় ওয়ানডে ও টি-টোয়ান্টিতে মধ্যম মানের অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হলেও টেস্ট ইতিহাসে শিশুই বলা যায়। ওয়ানডেতে সবকটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টিমকে হারিয়ে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়লেও টেস্টে তেমন অর্জন নাই বললেই চলে। টেস্টে টাইগারদের দুর্বলতা ওপেন সিক্রেট। এ নিয়ে টিম টাইগার ও ক্রিকেটপ্রেমিদের চরম হতাশার মধ্যে আকাশছোঁয়ার ন্যায় সুসংবাদটা আসল স্বয়ং নিউজিল্যান্ডের মাটি থেকে। সেই টেস্ট ক্রিকেটের দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ বিশ্বসেরা নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে ৮ উইকেটে। আনন্দ ও সুখের বিষযটি হচ্ছে নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে প্রথমবার হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। ইবাদত হোসেনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে দাপট দেখিয়ে ৮ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে মুমিনুল বাহিনী। গত ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ও শেষ দিনে ইবাদত হোসেন ও তাসকিনের বোলিং তোপে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। মাত্র ১৬৯ রানে অলআউট হয় তারা। তাতে বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় মাত্র ৪০ রান। আর সেটা ১৬.৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলে। ঐতিহাসিক এ জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন সূর্যোদয় বলে বিবেচিত হচ্ছে। শুরুতে বলা হয়েছে, গত বছরের জুনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে হওয়া ফাইনাল ম্যাচটিতে বিরাট কোহলির ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা হাতে তোলে কিউইরা। ওই আসরে সর্বনিম্নে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় আসরে এসে হারিয়ে দেয় চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে। গত বছরের শেষ দিকে দুবাই ও ওমানে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপে অংশ নিতে যায় বাংলাদেশ গর্ব করার মতো দুটি বিজয় সঙ্গী করে। স্বদেশে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দুই সুপার পাওয়ারের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব নিয়ে। কিন্তু বিশ্বকাপে টাইগাররা ছিল যাচ্ছেতাই। দেশে ফিরে পাকিস্তানের কাছে তারা হারে বড় ব্যবধানে। ক্রিকেটকে বলা হয় অনিশ্চিত খেলা। যেকোনো সাধারণ মাপের দলও জয়ী হতে পারে অতিশক্তিমান দলের বিরুদ্ধে। শক্তিশালী দলও হারতে পারে সাধারণ কোনো দলের কাছে। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং পরে দেশের মাটিতে টাইগারদের বাজে পারফরম্যান্সে ক্রিকেট প্রেমিকদের হতাশ করলেও কিছু লোকের প্রতিক্রিয়া ছিল অনাকাক্সিক্ষত, বাজে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ঘাপটিমেরে থাকা পাকিস্তানি বশংবদরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে যেভাবে তাদের পিতৃভূমির (পাকিস্তানি) জার্সি গায়ে খেলা দেখতে গেছে তা ছিল অকল্পনীয়, নিন্দনীয়, দুঃখজনক। স্যোশাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে তখন এসব অর্বাচিনদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবির কথাও এসেছিল। কিন্তু ঘটনা ওখানে থেমে যায়। তবে এধরনের ঘটনা যেন সামনে না ঘটে-এর প্রতি সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। বিজয়ের মাস শেষ হলেও চলছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এর মধ্যে টাইগাররা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাঠেই বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রমাণ করেছে তারা অদম্য, মানসিকভাবে অপরাজেয়। ইচ্ছে করলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, বাংলাদেশ অতীতেও এর প্রমাণ রেখেছে- এখনও মুমিনুল বাহিনী রেখে যাচ্ছে। আবারও অভিনন্দন টিম টাইগার, এ অদম্য পথচলা অব্যাহত থাক।