অবশেষে শাহ আমানতে বসল থার্মাল স্ক্যানার

148

করোনা ভাইরাস শনাক্তে অবশেষে শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে বসানো হল থার্মাল স্ক্যানার। এর ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে আসা যাত্রীরা এ স্ক্যানারের ক্যামেরার সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেই জ্বর আছে কিনা শনাক্ত করা যাবে সহজেই। অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকলে এ মেশিন সংকেত দেবে। এতদিন ইনফ্রায়েড হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপা হচ্ছিল।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ৩১ জানুয়ারি থেকেই বিদেশফেরত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়। তবে প্রথমদিকে শুধু চীন থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এখন সবাইকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ভাইরাসমুক্ত সনদ নিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত ৬টি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ওপর বাড়তি নজর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। দেশগুলো হচ্ছে- চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ইরান।
২০১৪ সালে বিশ্বের কয়েকটি দেশে ইবোলা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে শাহজালাল, শাহ আমানতসহ সব আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়। কিন্তু গত সাত মাস ধরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে স্থাপিত স্ক্যানার মেশিনটি বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। এ কারণে ব্যবহার করা হচ্ছিল হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কপালের এক ফুট দূরে মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা হাতে নিয়ে হ্যান্ডহেল্ড মেশিনটি ধরলেই কত ডিগ্রি জ্বর রয়েছে তা স্ক্রিনে ডিজিটালি ভেসে ওঠে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, শাহ আমানতে মধ্যপ্রাচ্য, কলকাতা ও চেন্নাইয়ের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীরাই আসেন। এখানে ইতালি, ইরান, চীন বা আক্রান্ত অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট নেই। অনেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম আসেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার বলেন, থার্মাল স্ক্যানারটি স্থাপন করা হয়েছে। বুধবার (আজ) থেকে পুরোদমে চালু হবে এটি। আর্ন্তজাতিক ফ্লাইটের যাত্রীরা ইমিগ্রেশন হলে পৌঁছার আগেই মেশিনটির ভেতর দিয়ে আসতে হবে। এতে কারও জ্বর-সর্দি বা অতিরিক্ত তাপমাত্রাজনিত কোনো সমস্যা থাকলে তা নির্ণয় হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমরা ২টি থার্মাল স্ক্যানারের চাহিদা জানিয়েছিলাম। একটি বিমানবন্দরের জন্য এবং আরেকটি সমুদ্রবন্দরের জন্য। বিমানবন্দরেরটি জরুরি ভিত্তিতে পাঠানো হয়েছে। সমুদ্রবন্দরেরটা সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে আসবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এতদিন আমরা ইনফ্রায়েড থার্মোমিটারে প্রত্যেক যাত্রীকে ধরে একজন একজন করে জ্বর পরীক্ষা করতাম। এতে অনেক সময় লাগত। এখন স্ক্যানার বসানোর পর কাজটা অনেক দ্রæত হবে। স্ক্যানার নিয়ে অনেক যাত্রী একসঙ্গে বের হবে। কারও জ্বর থাকলে সেটা সংকেতের মাধ্যমে শনাক্ত হবে। ইনফ্রায়েড থার্মোমিটার এবং থার্মাল স্ক্যানার- দুটোর কাজ একই। শুধু একটা একজন একজনকে ধরে করতে হত। আর স্ক্যানারে অটোমেটিক হবে।’
সূত্র জানায়, শাহ আমানত বিমানবন্দরে দেশি-বিদেশি ফ্লাইটে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪ হাজার আর্ন্তজাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী চলাচল করে থাকেন। এর মধ্যে আর্ন্তজাতিক যাত্রী প্রায় দেড় হাজার। যদিও শাহ আমানতে চীন থেকে সরাসরি কোনো ফ্লাইট আসেন না। তবে চীনের অনেক যাত্রী দুবাই, আবুধাবি, দোহা, মাসকাট ও ভারত হয়ে চট্টগ্রামে আসেন। চট্টগ্রাম ঘিরে বড় উন্নয়ন প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক চীনা নাগরিক কর্মরত থাকায় তারা ওইসব দেশ ট্রানজিট বা ফ্লাইট পরিবর্তন করে যাতায়াত করেন। এ বিমানবন্দর দিয়ে সোমবার পর্যন্ত ৪১ হাজার ৬৩১ জন আর্ন্তজাতিক রুটের যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। আর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে ৪ হাজার ৪৩৫ যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে কারো শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, শাহ আমানত বিমানবন্দরে দায়সারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। সকল যাত্রীকে এ পরীক্ষার আওতায় আনা হয়নি।
বর্তমানে এ বিমানবন্দরে পালা করে ২৪ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন।