অপরাধীদের আধিপত্যের লড়াই রোহিঙ্গা ক্যাম্প ক্যাম্পে বিশৃঙ্খলা দমনে কঠোর হতে হবে

42

দেশের সর্বদক্ষিণ-পূর্বের সীমান্ত জেলা কক্সবাজার। বিশাল সমুদ্রের উর্মিমালা যেখানে প্রশান্তির ঐকতান গায় সারাক্ষণ। একটু শান্তি, একটু স্বস্তি ও প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সারা দেশের মানুষ যেখানে ছুটে ছলে আর ঢেউয়ের তালে বদন জুড়ায় জলে, বালুচরে কল্পনার সৌধ নির্মাণ করে- সেই কক্সবাজারে আজ অশান্তির কালোমেঘ ঘুরপাক করছে। যার কারণে বড় শান্ত কক্সবাজারবাসীরা নয় শুধু, দেশের সকল মানুষ আজ শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। এ উদ্বেগ ও শঙ্কার কারণ রোহিঙ্গা শরণার্থী। মানবিক বিবেচনায় দেশের মানুষ ও সরকার মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু দুই বছর না যেতেই স্বদেশ ছাড়া এ রোহিঙ্গারা আশ্রয় ক্যাম্পে যেভাবে আধিপত্য বিস্তারসহ খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তির মত সব ভয়ঙ্কর অপরাধের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি একসপ্তাহের ব্যবধানে ক্যাম্পে ৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, যার কারণ হিসাবে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের এ অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ‘খাল কেটে কুমির আনা’ হয়েছে। যা পুরো কক্সবাজারজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বলাবাহুল্য যে, আমরা শুরু থেকেই এমনটি শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে, যা সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায় প্রকাশ পাচ্ছে। কক্সবাজারের দুই উপজেলার ৩২টি ক্যাম্পে গত আড়াই বছরে রোহিঙ্গাদের হাতে রোহিঙ্গা খুন হয়েছে অর্ধশতাধিকের বেশি। সর্বশেষ সপ্তাহে দুই দফায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্পে দুই সন্ত্রাসী গ্রæপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে। রোহিঙ্গারা কতটুকু অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠলে এমন খুনাখুরি ঘটনা ঘটতে পারে, তা সহজে অনুমেয়। এলাকাবাসীর ভাষ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প পুরোটাই অপরাধ জগতে পরিণত হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য উদ্বেগের খবর। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণ ব্যবসা নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতি রাতে ক্যাম্পগুলোতে শোনা যায় গুলির শব্দ। জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক একাধিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হাতে হাতে পৌঁছে গেছে অস্ত্র। অস্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে তারা ক্যাম্পের ভেতরে বাইরে ডাকাতি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অস্ত্র সরবরাহ করতে এ দেশের অস্ত্র কারবারিদের সম্পৃক্ততায় পাহাড়ের গহীন অরণ্যে স্থাপন করা হয়েছে অস্ত্র তৈরির কারখানা। গত শনিবার ভোর রাতের অভিযানে এমন একটি অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১৫) সদস্যরা। অভিযানে দুজন কারিগরকে আটক করা হয়েছে। এমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে দেখেছি। এরপরও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দমন করা যাচ্ছে না। জাতিগত নির্মূল অভিযানের ফলে গত বছরের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগেও এখানে অবস্থান করছিল ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে রাখা কঠিন কাজ বটে। শুধু ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নয়, ক্যাম্পের বাইরেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গেও বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে লেগে যায়। স্থানীয় অনেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছে। নানাভাবে তারা অপরাধ প্রবণতায় জড়িত। এদের এখনই দমন করতে হবে আর এরজন্য প্রয়োজন প্রশাসনের কঠোর অবস্থান। অন্যথায় রোহিঙ্গাদের বেপরোয়া মনোভাব আর অপরাধ আরো বাড়তে পারে। যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বটে। আশা করছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব ধরনের অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দক্ষতার পরিচয় দেবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে গোয়েন্দা নজরদারি। স্থায়ীভাবে পুলিশ ক্যাম্প বসাও এখন সময়ের দাবি।