অনিন্দ্যসুন্দর আনন্দ সম্মিলন : ওয়াজ্ঞাছড়া চা বাগানে

7

বিপুল বড়ুয়া

নাগরিক জীবনের ঘোরে বাঁধা-দোরে আটকা জীবন নিয়ে মানুষ কতই বা বিশ্রস্ত। বিপর্যস্তও বলা যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। এরি মধ্যে তার চাওয়া দু’দন্ড অবসর-নিবিড় নিরিবিলিতে কিছুটা সময় কাটানো প্রাণের উচ্ছ্বাসে খানিকটা ‘ফুয়েল’ জোগান এক পর্যায়ে অনিবার্যও হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম একাডেমি-চট্টগ্রামের শিল্প-সাহিত্য-গবেষণার একটি স্বনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। একাডেমির উদ্যোগে তেমনি দূরে কোথাও ঘুরে বেড়ানোর-বেড়িয়ে আসার একাডেমির সংশ্লিষ্টজনদের একান্ত চাওয়ার প্রতিফলন ঘটলো-যখন চট্টগ্রাম একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক লেখক-চা গবেষক আমিনুর রশীদ কাদেরী আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর ‘ওয়াজ্ঞাছড়া চা বাগানে’ এবারের বনভোজন-পিকনিক সারতে। যেই কথা সেই কাজ। কবি-সাংবাদিক রাশেদ রউফ নেমে পড়লেন কাদেরী ভাইয়ের আমন্ত্রণের পর সেই বিশাল কর্মযজ্ঞের সুষ্ঠু আয়োজন-ব্যবস্থাপনায়।

সেই বিশাল বহর : চট্টগ্রাম একাডেমির সংশ্লিষ্টজন বা একাডেমির শুভানুধ্যায়ীজন মানে অনেক বড়সড় জমজমাট উপস্থিতি। অতসবের মাঝেও একান্নজনের বিরাট বহর কাদেরী ভাইয়ের কাপ্তাই ওয়াজ্ঞাছড়া চা বাগানের পিকনিকে যেতে প্রস্ততি নিয়ে নেয়। এর আগেও একাডেমি চারবার পিকনিক আয়োজন করে এ ওয়াজ্ঞাছড়া চা বাগানে-গেলবার একাডেমি পিকনিক সারে মহাআয়োজনের মাধ্যমে-পটিয়ার বিখ্যাত বিটা কমপ্লেক্সে। সেও ছিল এক বিশাল ব্যাপার-স্যাপার।

একান্নজনের বহর : একান্নজনের বিশাল বহর। ভাবা কি যায়। এতজন মানুষ নিয়ে ঘুরে-খেয়ে-দেয়ে-বেড়িয়ে আসা তা কি চাট্টিখানি কথা! কে নেই এই বিশাল বহরে। লেখক-কথাসাহিত্যিক-শিশুসাহিত্যিক-গল্পকার-প্রাবন্ধিক-সাংবাদিক-ছড়াকার-গীতিকার-সঙ্গীতশিল্পী-আবৃত্তিশিল্পী-সংস্কৃতিব্যক্তিত্ব, নিরেট আড্ডার“-কে নেই এ বহরে। সব মেধা ও মননের বেসাতি করা খ্যাতিমান যাঁরা রয়েছেন ভ্রমণে শওকত আলী সুজন, কানিজ ফাতেমা লিমা, অপু বড়ুয়া, বিপুল বড়ুয়া, দীপক বড়ুয়া, ইসমাইল জসীম, শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, জাহানারা মুন্নী, এস এম মোখলেসুর রহমান, রুনা তাসমিনা, মারজিয়া খানম সিদ্দিকা, মুহাম্মদ মহসীন চৌধুরী, রোজিনা খানম, পিংকু দাশ, রায়হানা হাসিব, সিমলা চৌধুরী, বনশ্রী বড়ুয়া, শিরিন আফরোজ, মুন্না, অমিত বড়ুয়া, লিপি বড়ুয়া, আমানউদ্দিন আবদুল্লাহ, সরওয়ার আরমান, অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানু, রাবেয়া খাতুন, সুমি দাশ, লিটন দাশ শিবু, এম কামাল উদ্দিন, আজিজ রাহমান, বাসুদেব খাস্তগীর, মোহাম্মদ জহির, রাশেদ রউফ, আয়েশা হক শিমু, আয়মান রউফ, ফেরদৌস আরা রীনু, আরিফ রায়হান, ইফতেখার মারুফ, রেবেকা সুলতানা, শিপ্রা দাশ, সুপ্রতিম বড়ুয়া, সুরভী কান্তা, রেজাউল করিম স্বপন, মাজহারুল হক, আবুল কালাম বেলাল, সমীরণ বড়ুয়া, সৌভিক চৌধুরী, সাগ্নিকা চৌধুরী, প্রিয়াংকা সরকার, শ্রেয়ান বিশ্বাস মুগ্ধ এবং আমিনুর রশীদ কাদেরী।
গাড়ি চলে রে : গাড়ি চলে না-কথাটা এখানে মোটেই চলে না। এখানে গাড়ি চলে রে। ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার। শীতের মুগ্ধ আমেজ-লেপ-কাঁথার ওম দু’চোখে আসা যাওয়া ঘুম। অতসব হার মানিয়ে-সেই সাফরান-দস্তগীরের মুখোমুখি রাস্তায়-আমরা এসে পৌঁছেছি। শীত এবং রোদের লুকোচুরিতে হেলায় বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে। শীতকে বলা-শীত তুমি হিমেল নেকাব পরে থাকো-আমরা যাচ্ছি পিকনিকে। এরি মধ্যে রাশেদ ভাই বাসে ওঠলেন-কথা বললেন সবার সাথে। সঙ্গে তো রয়েছেন বরাবরের মতো সকল কাজের কাজি এম কামাল উদ্দিন।

শীত যাত্রা : ভোরের শহর এখনও জাগেনি। আড়মোড়া ভাঙছে শুধু একটু একটু করে। লাল রঙের ঝকঝকে তকতকে বাহন-ভাই ভাই এক্সপ্রেস বাস ছুটে চলেছে শহরের সীমানা ছাড়িয়ে। সে কোন সুদূরের পানে। বহরে আরো রয়েছে আমিনুর রশীদ কাদেরী, রেজাউল করিম স্বপন ও মোহাম্মদ জহিরের তিনটা ঝকমকে কার।
বাস বৃত্তান্ত : বাসে কত কথা। আলাপন। বলা আর শোনা একেবারে সমার্থক হয়ে পড়েছে। উচ্ছ¡াসের মাঠে নেমে পড়েছে-অতপর রুনা তাসমিনা-লিপি বড়ুয়া-সিমলা চৌধুরী, সুমি দাশ, সরওয়ার আরমান। রুনা সবার ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত। সবাইকে কিছু না কিছু বলতেই হবে-হয় গান-নয় কথামালা। রুনার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচা অসাধ্য নয়, দুঃসাধ্যও বটে। কোনোরকমে এটা সেটা ভাবভঙ্গি করে তবে পেরিয়ে আসা। অপু জম্পেস গেয়ে দিলো পাঁচমিশালী গান-আঞ্চলিক-ভাওয়াইয়া-মিউজিকও যথাযথ সেট করে দেয়া, রুনার মিশন চলছেই। পেছন দিকেও ঝড় ওঠছে গান-সুরে-বেসুরে। বাসের সাউন্ডবক্সে বাজছে নানা কিসিমের গান। এদিকে রুনা-লিপি-সিমলা-সুমি তো বাস নাচিয়ে ছাড়ছে। কোন গান থেকে কোন গানে জাম্প চলছে-মিলিয়ে ঝিলিয়ে মিউজিক দিচ্ছে-এক্কেবারে ভয়ংকর অবস্থা।

মজার ফিসফাস : টুকরো টুকরো ফিসফাস। বাসে নাস্তা কই, পানি কই, উত্তরও হচ্ছে হবে হবে-সব হবে। নাস্তা রেডি। নেমেই পেয়ে যাবেন। কারও হাঁস-ফাঁস। কারও চুপ মারা। ইঁদুর-বিড়াল লুকোচুরি চলছে।

বাগান বাংলোয় : অতসব হৈ-হুল্লার মাঝে যেন শীত কাঁপুনি পালিয়ে বেঁচেছে। রোদ তাপ নিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাসে এক ঝাঁক প্রিয় মুখ। বাস শহর-আশপাশ ছাড়িয়ে-বিআইটি-রাঙ্গুনিয়া-মরিয়মনগর-লিচুবাগান পেরোলো এবং অনতিবিলম্বে পৌঁছল-ওয়াজ্ঞাছড়া চা বাগান গেটে। ছোট-বড় ঘর দোর ঘুরে ফ্রেশ হয়ে সবার রুম-বারান্দায় নাস্তার প্যাকেট নিয়ে বসে পড়া। দারুণ কাজ দিল এ প্যাকেট। পিঠেপুলি, রোল-পিয়াঁজু, ঢাউস সিঙারার সাথে বাগানের চা পাতার চা। ভীষণ তদারকিতে কাদেরী ভাই, রাশেদ ভাই, মায় কামাল ভাই পর্যন্ত। গাড়িতে দেয়া কথা রেখেছেন কামাল ভাই। নাস্তায় কোনো ধরনের ঘাটতি রাখেননি। খোলা মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া সবার। ভাই ভাই এক্সপ্রেসের সাথে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি সুদৃশ্য কার রাজকীয় যাত্রা যেন। চারদিকে উচ্চ-অনুচ্চ বাহারি গাছ-ঝোপঝাড়বেষ্টিত চারপাশ দীর্ঘদিন পর একদঙ্গল জনমানবের উচ্ছ্বাস-উল্লাসে। প্রথমদিকে ঘুম ভাঙার বিরক্তি দেখালেও আবার ধীরে ধীরে এ সৃজনশীল মানুষদের ঠিকুজির কথা ভেবে আবার নিজেদের সমঝে নিল। হাতে হাত পাতল। ভাবসাব জমে গেল প্রকৃতির সাথে।

ফটোসেশন : নানা এঙ্গেলে ফটোসেশন চলছে। মোবাইল-ক্যামেরাগুলোর আর বাঁচোয়া নেই। অনেকের সাথে ক্যামেরার ক্লিক নিয়ে ব্যস্ত মুজিবও। চারদিকে তার খোঁজ খোঁজ রব। রাস্তার ওপাড়ে ওয়াজ্ঞাছড়া চেক পোস্ট। সদা সতর্ক স্মার্ট সেন্ট্রি। চারদিকে সুনসান নীরবতা। এদিকে তপন স্টোর। গরম গরম ধোঁয়া ওঠা দুধ চায়ে গলা ভেজাল বিপুল, দীপক, অপু, বাসুদেব। দেখা হল রাস্তায় স্বপন ভাইয়ের। হল সেলফি। বাসুদেবও নিলেন।

বাসে উপজেলা : এবার বাস চেপে উপজেলা। নেমেই ঘাটক‚ল। ঘাটক‚লে দেখা হয়ে গেল রূপসী কাপ্তাই সম্পাদক সাংবাদিক মোশাররফ হোসেনের সাথে। কারো কারো হাতে চমৎকার রূপসী কাপ্তাই পত্রিকা তুলে দিলেন। চমৎকার হয়েছে রূপসী কাপ্তাইর চলতি সংখ্যা।

ছোট্ট জলযাত্রা : নদী পারাপার। ইঞ্জিনবোট চাপা। বোটচালক মোয়াইংয়ের বেশ আদুরে চেহারা। কায়দা করে লগি-ঠেলে-ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে বোট ভাসাল নদীতে। ছোট্ট নদী নিস্তরঙ্গ। বেশ উপভোগ করা হল ছোট্ট জলযাত্রা। জল-কথার কলকাকলিতে মুখর আগাম দুপুর।

কাদেরী ভাইয়ের ব্রিফিং : ডাঙায় ওঠেই একটু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাগান মুখ। বাগান মুখেই বাগান-চা চাষ সম্পর্কিত কাদেরী ভাইয়ের সুন্দর ব্রিফিং। ব্রিটিশ সময়কালের প্রাচীন এই চা বাগান তাদের মালিকানায় এসেছে ১৯৭৮ সাল থেকে। সেই থেকে মনেপ্রাণে এই বাগানকে সৌকর্যে নিয়ে যাচ্ছে কাদেরী ভাইয়ের পরিবার। দুটি পাতা-একটি কুঁড়ির বিশদ ব্যাখ্যা-ক্যামেলিয়ার-জেনিস-স্পেসিস-এমনকি ফ্যামিলি নিয়ে কথা বলে-সবাইকে অবাক করে দিলেন। চমকে দিলেন বোটানির স্টুডেন্টকে। শুধু বাগান মালিক বলে নন, হাতে কলমে চা’র জীবনচক্র নিয়ে গবেষণা করা, চা নিয়ে অনেক অনেক লেখালেখি করা বিশেষজ্ঞ টি প্ল্যানটার কাদেরী ভাইয়ের চা-প্রীতি-চা অনুভ‚তিতে মুগ্ধ হল সবাই।

মধুর আনন্দক্ষণ : বাগানে ঘুরে বেড়িয়ে সবাই উৎফুল­। কাছে-দূরে-পাহাড়ে-চা গাছের ঢালে-সমতলে আড্ডা আর আড্ডা। ছবি তোলার মচ্ছব। কথার কাহন-কাহিনি-আঁকাবাঁকা কথা যাত্রার বিরাম নেই। রঙ বাহারি-কথার গাড়ি চলছেই। ব্রেকলেস। গিয়ার চেপে ধরা এখানে অসম্ভব। এ যেনো প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার কথাকাব্য। গান-নাচ-মিউজিক্যাল চেয়ার কি নেই। বলি, আলবৎ আছে। ওদিকে চলছে-দারুণ কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলা। চেনা অচেনা নানা গান-নানা সুর ইথারে ইথারে ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ উপভোগ করে, কেউ অনুভব করে মনপ্রাণ দিয়ে-ছুঁয়ে দেখে অন্তর বিলিয়ে দিয়ে।
অদূরে ছোট্ট বাঁশ সেতুর ওপর চলছে ভিন্নতর ফটোসেশন। বাঁশসেতু ভেঙে পড়ছে কি পড়ছে না তা নিয়ে এদিকে চলছে নিদারুণ গবেষণা। কথা হচ্ছে ম্যালা বয়সকাল, দোচোয়ানি, অডিট কান্ডের ফুলপরি, গোদোহন ধাঁধা, ওঠা-নামার সরসকথা, কোমড়ের বাত ব্যথা, ঐক্য পরিষদের ছবি বৃত্তান্ত, শীত নিদ্রার বিষয় নিয়ে-যা সব নিয়ে যথেষ্ট গবেষণাও করা যায়।

ঘুন্টিঘরে ঢু : এক পর্যায়ে ওপরের ছোট্ট ঘুন্টিঘরে কিছুটা বিশ্রাম নেয়া। এতক্ষণ পর কিছুটা দুষ্টুমি-হৈ হুল্লোড়-খুনসুটি এবং বিটলামি বেশ একেবারেই কেটে গেল ছোট্ট ঘুন্টি ঘরে দু’দন্ড নিজকে হারানোর মধ্যে। ক’ফোঁটা অবাক জলপান, ঘোরা তামামির বয়ান, এই শীতেও পাখার মিষ্টি বাতাস মন জুড়িয়ে দিয়ে যায় যেনো।

বাংলো ফেরা : আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ-ইঞ্জিনবোটে নদী পার-উপজেলা থেকে বাসে-বাগান বাংলো। দেখতে দেখতে যেনো ছবির মতো ঘটে গেল। রান্নার ভারি সুগন্ধে চারদিক মৌ মৌ করছে। কাদেরী ভাই হাঁকডাকে ব্যস্ত। যেনো পান থেকে চুন না খসে।

খাওয়াসমগ্র : আমরা যাঁরা আগেই এখানে কাদেরী ভাইয়ের আতিথ্য নিয়েছি-তাঁরা জানেন খাওয়াটা কেমন হবে-কাদেরী ভাইয়ের আয়োজন কোথায় গিয়ে পৌঁছবে। খাওয়ার আয়োজনে এবারও তার অন্যথা হলো না। সেই চমৎকার দেশি মুরগি, লেকের রাজ রুই, সুস্বাদু ডাল-আর কি চাই। কব্জি ডুবিয়ে খাও-আর কি চাই-নাও আরো নাও। পেট পুরে খাও। এ আয়োজনের স্বাদবিচিত্রা, কাদেরী ভাইয়ের ঔদার্য তের পংক্তিতেও শেষ হবে না যা আমি অত্যন্ত কৃপণভাবে তিন পঙক্তিতে শেষ করলাম।

র‌্যফল ড্র : জমজমাট র‌্যাফল ড্র হল-ছোট্ট ছিমছাম বাংলো কম্পাউন্ডে। সবাই গোল করে চেয়ারে বসা। আবারও সেই ট্র্যাডিশনাল চা-দারুণ চা। রাশেদ রউফ-আমিনুর রশীদ কাদেরী-রেজাউল করিম স্বপন একে একে তুলে দিলেন সবার হাতে র‌্যফল ড্র’র পুরস্কার। সঙ্গে দারুণ বোনাস কাদেরী ভাইয়ের বাগানের চা’র একটি করে প্যাকেট। জয়তু কাদেরীভাই। সাঁঝ নামছে। প্রকৃতি ঘুমিয়ে পড়ছে। আমরা আগামীতে এমন আর একটা সুন্দর দিনের অপেক্ষায় দিন গুনতে গুনতে ভাই ভাই এক্সপ্রেসে চাপলাম। গন্তব্য নিজ বাসভূমে।

পথের কড়চা : পথে যা আনন্দ হল-উচ্ছ্বাস হল তা অনেক গল্পকে হার মানবে। আবার সেই রুনা-লিপি-সুমি-সিমলা কান্ড। কান্ড মাত্র নয়। যেনো সাত কান্ড। সঙ্গে সরওয়ার আরমান। যা জামাল কুড বা জামাল কদু যা-ই হোক না কেনো যেন আনন্দের এক ফুলঝুরি। হাত নাচিয়ে-নেচে-মুচড়ে-পুচড়ে উনারা যা গেয়ে দেখালেন তা দেখে আমাদের আক্কেল গুড়ুম-কী পরিবেশনা-কী নান্দনিক তা ভাষায় অপ্রকাশ্য। বলিহারি বন্ধু চতুষ্ঠয়-মাঝে খানিকটা বাগড়া এলো এবং এক সময় তা চুকেও গেল। আনন্দ তো উপভোগের সময় সাপেক্ষের। সাথে সাথে আরো গীত হল-ক’ফোঁটা চোখের জল ফেলেছো যে তুমি ভালোবাসবে, দুটি মন আজ দুজনার, খাইরুল লো, অহ্ টুনির মা তোয়ার টুনি-এত্তসব অ¤øমধুর গান। সবাই রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করল নিখরচে এই ব্যতিক্রমী সঙ্গীতায়োজন। উনারা সিউর অ্যা প্লাস পাচ্ছেন। আমাদের নট্ নড়ন নট্ চড়ন। যেন বা সবাই কাকের মতো চেয়ে আছে ওদের দিকে।

শেষ পর্যন্ত : শেষ পর্যন্ত-শেষ তো হলোই না। শেষের রেশটুকু অন্ধ বাউলের একতারার গানের মতো জিইয়ে থাকল-সবার অন্তরে মানস চেতনায়। তারপর-তার আর পর নেই। নেই কোনো ঠিকানা। শুধু মনে পড়া-একটি অনিন্দ্যসুন্দর দিনকে-অনেক অনেক মুখছবি-স্মৃতির প্রহরকে। স্মৃতির সেই প্রহর সবার মনো ব্যঞ্জনায় মুখর হয় রইল আমাদের পথচলতিতে।