অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৮৮০-১৯১৮)

29

সাহিত্যিক, সমালোচক। ১৮৮০ সালের ২০ আগস্ট ফরিদপুর জেলার মঠবাড়ি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শ্রীচরণ চক্রবর্তী, মাতা সুশীলা দেবী। ১৯০৩ সালে বিএ পাস করে শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এ সময়ে তিনি রবীন্দ্র-সাহিত্য ও ব্যক্তি-রবীন্দ্রনাথের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন। ১৯১০ সালে বৃত্তি পেয়ে ধর্মতত্ত¡ অধ্যয়নের জন্য তিনি ইংল্যান্ডে যান। সেখানে রবীন্দ্রনাথের স্বকৃত অনুবাদ প্রকাশ হওয়ার আগেই তাঁর রবীন্দ্র-সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ অংশের অনুবাদসমূহ প্রচারিত হয়। তাঁর কৃত অনুবাদের মাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথ বিদেশে বিদ্বৎসমাজে প্রথম পরিচিতি পান। শিক্ষাদানকর্মে তিনি অত্যন্ত যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। সাহিত্য-রসাস্বাদনে, অভিনয়ে, সঙ্গীতে, ছাত্রদের মনকে উদ্বোধিত করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর ক্ষমতা, নিষ্ঠা, উদ্যম ও উদ্ভাবনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শকে রূপায়িত করে তোলার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর ব্রহ্মবিদ্যালয় (১৯১১) গ্রন্থে তিনি এ বিদ্যালয়ের প্রথম দশকের ইতিহাস ও আদর্শ বিশ্লেষণ করেন। যিশুখ্রিস্টকে সম্পর্কে তিনি কিশোর-উপযোগী বই লিখেছিলেন খৃস্ট (১৯১১) নামে। বইটি উক্ত বিদ্যালয়ে ছাত্রপাঠ্য হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। উল্লেখ, উক্ত বইটিতে রবীন্দ্রনাথ যে ভূমিকা লিখেছেন, যিশুখ্রিস্ট সম্পর্কে সেটা ছিল তাঁর লিখিত প্রথম মূল্যায়ন। অজিতকুমার চক্রবর্তী ছিলেন রবীন্দ্র-সাহিত্যের একজন প্রধান ব্যাখ্যাতা। তাঁর রবীন্দ্রনাথ (১৯১২) ও কাব্যপরিক্রমা (১৯১৪) সমালোচনা গ্রন্থ দুটি রবীন্দ্র-সাহিত্যপাঠকদের দীর্ঘদিন সহায়ক ছিল। তিনি আধুনিক পাশ্চাত্য সাহিত্যের দিকেও সমানভাবে নজর দিয়েছিলেন। ফলে তাঁর হাতে বাংলা ভাষায় পশ্চিমা সাহিত্যের সমালোচনার ধারা বেগবান হয়। তিনি মেটারলিঙ্ক, ফ্রান্সিস টমসন, হুইটম্যান প্রমুখ কবি ও নাট্যকারের সাহিত্যকর্ম নিয়ে যেসব আলোচনা লিখেছেন, তাঁর বাতায়ন (১৩২২) গ্রন্থে তার কিছু সঙ্কলিত হয়েছে। তাঁর অপর দুটি জীবনী গ্রন্থ রাজা রামমোহন (১৯১৬) ও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯১৬)। ক্ষিতিমোহন সেন কবীর সঙ্কলিত ‘দোঁহা’-র অনেকগুলির ইংরেজিতে অনুবাদ করেন অজিতকুমার চক্রবর্তী। তার ওপর ভিত্তি করে রবীন্দ্রনাথ সম্পাদনা করেন ঙহব ঐঁহফৎবফ চড়বসং ড়ভ কধনরৎ। অজিতকুমার চক্রবর্তী অকালপ্রয়াত বন্ধু কবি সতীশচন্দ্র রায়ের রচনাবলীও (১৩১৯) সম্পাদনা করেন। বাংলা ভাষায় সাহিত্য-সমালোচনার প্রথম পর্বে তিনি বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। পরবর্তীকালে সাহিত্য-সমালোচনার ধারা পরিবর্তিত হলেও তাঁকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়। অজিতকুমার চক্রবর্তী নাট্যাভিনয়ে বিশেষ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ প্রযোজিত বেশকিছু নাটকে তাঁর সাক্ষর রয়েছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতচর্চার তিনি অন্যতম বাহক ছিলেন। সুকণ্ঠ গায়ক হিসেবেও তাঁর সুনাম ছিল। ১৩২৫ সনের ১৪ পৌষ তাঁর মৃত্যু হয়। সূত্র : বাংলাপিডিয়া