স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ ক্রেতাদের ভিড় ফুটপাতে

39

করোনা মহামারিতে নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ফুটপাতে বসেছে ঈদ বাজার। ছেলেদের সব রকমের আইটেম বিক্রি করা হচ্ছে ফুটপাতে। এছাড়া মার্কেটের ভেতরে দোকানের শাটার অর্ধেক খোলা রেখে মেয়েদের আইটেম বিক্রি হচ্ছে। তবে হকার্স সমিতির নেতৃবৃন্দ বলছেন, হকাররা কোন ব্যবসা করছেন না। তাদের অনেকেই গ্রামে চলে গেছেন। যারা শহরে আছেন, তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
গতকাল রবিবার সরেজমিন নিউমার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজারের সামনে ফুটপাতে দেখা গেছে নারী ক্রেতারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে মহা খুশি। করোনা ভাইরাসকে উপেক্ষা করে মহা আনন্দে নগরীর ফুটপাতের দোকানগুলোতে কেনাকাটা করছেন। শারীরিক সুরক্ষার কথা ভুলে গিয়ে একে অপরের গা-ঘেঁষে কেনাকাটায় মগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা। দেখে মনে হয় ঈদ উৎসবের আনন্দে ভুলে গেছেন লকডাউনের কথা।
এদিকে বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দরা পুলিশ কমিশনারের আহ্বানে দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও ঈদ বাজারের লোভনীয় আয়োজনের কারণে ভুলে গেছেন সেই সিদ্ধান্ত। মালিক সমিতির অধিকাংশ সদস্য তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠানের অর্ধেক শাটার খুলে চালিয়ে যাচ্ছেন বেচা-বিক্রি। আর সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন নারী ক্রেতারা।
রেডিমেড দোকানের পাশাপাশি সড়কের ফুটপাতে বসেছে অজস্র দোকান। সেখানে মহিলা ক্রেতাদের সঙ্গে রয়েছে পুরুষ ক্রেতাদের ভিড়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিক্রেতা জানান, বণিক সমিতির লোকজন বন্ধ করবে তো দূরের কথা আরও উল্টো বলে মালামাল বের করতে কোন ধরনের ঝামেলা হলে আমাদেরকে জানাবেন। এ সুযোগে আমরাও ফুটপাতে বসেছি।
ভ্রাম্যমাণ দোকানীরা বলেন, গত দুই মাস আমাদের মালিকরা আমাদের বেতন দেননি। এখন ঈদের আগে আবার দোকান বন্ধ রয়েছে। তাই মালিকের কাছ থেকে কিছু অল্প দামের পণ্য নিয়ে রাস্তায় বসেছি। আয়ের ৮০ ভাগ মালিককে দিয়ে ২০ ভাগ আমরা নেব।
তারা আরও বলেন, গত দেড় মাস পর শুনেছি প্রশাসন থেকে নামের তালিকা চেয়েছে। তারা কি দেবে? কিছু চাল, ডাল তেল, আলু আর পেঁয়াজ। তা দিয়ে কি একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার চলে? আমরা আমাদের দুঃখের কথা কারো কাছে বলতে না পারার কারণে কেউ আমাদের একবারের জন্য খোঁজ নেয়নি।
ঈদ বাজার করতে আসা আহমেদুর রহমান নামে এক ক্রেতা জানান, নতুন বিয়ে করেছি। প্রথম ঈদ চাইলেই এড়িয়ে যেতে পারি না। তাই শ্বশুরবাড়ির লোকজনের জন্য কিছু পোশাক কিনতে এসেছি। তিনি বলেন, মানুষের এত চাপ থাকবে বুঝলে আমিও আসতাম না। আমি মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইলেও মানুষ আমার শরীর ঘেঁষে দাঁড়ায়। এখানে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই।
চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার্স সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু বলেন, আমাদের সংগঠনের যারা হকার ছিলেন তাদের কেউই ব্যবসা করতে পারছেন না। সবাই এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আপনি যাদেরকে ফুটপাতে ব্যবসা করতে দেখেছেন তারা আমাদের কেউ নন।
তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম জানান, আমাদের ১১০টি মার্কেট রয়েছে। সবাইকে একইভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে মার্কেট বা দোকান খোলা না রাখে। তারপরও তারা আমাদের কথার অমান্য করছে। আমি চাই এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, করোনা মহামারির পর থেকে বেশ কিছু দোকান খোলা রাখার কারণে আমরা মামলা দিয়েছি। আবার অনেক দোকানকে মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। আমাদের অভিযান এখনো চলছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিল্লুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও তার আশপাশে কিছু দোকানপাট খোলা রেখে ব্যবসা পরিচালনা করার সংবাদ পেয়েছি। আমরা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে আহবান করেছি। তাছাড়া জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনা মতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ক্রেতা বিক্রেতাকে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। সবাইকে অনুরোধ করবো আপনারা ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন।