রাতের আঁধারে হয়ে গেলো বঙ্গবন্ধু ফিশল্যান্ডিং সেন্টার!

82

রাতারাতি বাংলাদেশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য বাজার এবং বঙ্গবন্ধু ফিস ল্যান্ডিং সেন্টার’ নামে সাইনবোর্ড তোলা হয়েছে সেখানে। সোমবার থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দেয়া হয় কেন্দ্রটির সাইনবোর্ডে। মূলত হাইকোর্টের আদেশে উচ্ছেদ ঠেকাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এ কাজটি করা হয়েছে।
সোমবার বাংলাদেশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ‘মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি’র সাইনবোর্ড সরিয়ে নতুন সাইনবোর্ড লাগানো হয়। নতুন সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য বাজার এবং বঙ্গবন্ধু ফিস ল্যান্ডিং সেন্টার’। সাইনবোর্ডটি লাগানোর পর থেকেই এলাকাবাসী ও পথচারীরা বিরূপ মন্তব্য করছেন। সবাই বলছেন, অবৈধ প্রতিষ্ঠানটির দখল বজায় রাখতে বঙ্গবন্ধুর নাম বিক্রি করছেন মৎস্যজীবী সমিতি। এটি অমার্জনীয় অপরাধ হিসাবে দেখছেন সবাই।
বাংলাদেশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল সরকার বলেন, সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কেটের নাম বঙ্গুবন্ধুর নামে করার। আমরা ট্রাস্ট্রে আবেদন করেছি। অনুমোদন আসলে নাম পরিবর্তন করবো। এখনও আমরা নাম পরিবর্তন করিনি। আইনে কভার না করলে নাম পরিবর্তন করবো না।
উচ্ছেদ ঠেকাতেই কি নাম পরিবর্তন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না না আমরা মুজিববর্ষ উপলক্ষে এটা করেছি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মাঝখানে প্রায় চার একর জায়গায় এই স্থাপনা নির্মাণ করে বাংলাদেশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। বন্দর কর্তৃপক্ষ ইজারা দিলেও জায়গাটির মালিকানা দাবি করে আসছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এ অবস্থায় গতবছর ৯ এপ্রিল কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা অবিলম্বে অপসারণ করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু স্থাপনাগুলো যথাযথ উচ্ছেদ না হওয়ায় এবং আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করার বিষয় ব্যাখ্যা দিতে গত ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে তলব করে হাইকোর্ট। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সাথে বন্দর চেয়ারম্যানকে গত ২৬ জানুয়ারি স্বশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়। ওইদিন তিনি কোর্টে হাজির হলে পুনরায় আদালতের নির্দেশ মেনে উচ্ছেদ চালাতে বলা হয়েছে।
এর নয় বছর আগে কর্ণফুলী নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইআরপিবি)। এর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনাসহ রায় দেন। রায়ে নদীর তীরে থাকা ২ হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে কর্ণফুলী তীরের বাংলাদেশ মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য সমবায় সমিতি লিমিটেডের এই অবৈধ স্থাপনা সহ বাকি সব স্থাপনা উচ্ছেদের দাবিতে ১০টি সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধনও করা হয়। এতে বক্তারা বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী কর্ণফুলী তীরের ২১৮১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে উচ্চ আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে।