‘ফণী’ আতঙ্কে রোহিঙ্গারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়

54

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ঘনীভূত হয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ ঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত ১০ বছরের মধ্যে শক্তিশালী ঝড় হবে এই ফণী। বর্তমানে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। তবে ভারতের ওপর দিয়ে আসার কারণে ও নিজেদের প্রস্তুতি থাকায় বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি কম হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আতঙ্কে স্থানীয়দের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত ১১লাখ রোহিঙ্গা।
আবহাওয়া দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত দশ বছরে দেশে মোট পাঁচটি বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ‘মোরা’। ২০১৭ সালের ৩০ মে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হেনেছিল। এর গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার।
এর আগে, ২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ আঘাত হানে। এর গতিবেগ ছিল ১২৮ কিলোমিটার। ২০১৩ সালের ১৬ মে আসে মহাসেন, যার গতি ছিল ১০০ কিলোমিটার। আর ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই আসে কামেন। এর গতি ছিল ৬৫ কিলোমিটার। আর ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে আইলা। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শুক্রবার (৩ মে) বিকাল নাগাদ ফণী ওড়িষা উপকূলে উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে সন্ধ্যার দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার কথা। ঝড়ের শক্তি বোঝা যায় বাতাসের গতি দিয়ে। এখন যে গতি অর্থাৎ ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার, একে বলা হয় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়। তবে ভারত উপকূল হয়ে এলে ফণীর গতি কিছুটা কমতে পারে। আমাদের প্রেডিকশন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এটি হয়তো ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে যেতে পারে। একে আমরা ঘূর্ণিঝড় বলি।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ের গতি পরিবর্তন হয়। এটি এখন বাংলাদেশ থেকে ৯১৫ কিলোমিটার দূরে আছে। ঝড়টি যে সময় আসবে, তখন এর গতি হয়তো পরিবর্তন হবে। কিন্তু গতির কারণে এটি এখন অনেক শক্তিশালী।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় ফণীর দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে ইতিমধ্যে সিপিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভলান্টিয়াররা ইতিমধ্যে এলাকায় এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাইকে সবাইকে সতর্ক করছে। ঝড়ের অবস্থা বুঝে লোকজনকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আসার নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিপিপি উখিয়াস্থ সেক্রেটারি রফিক উদ্দিন।
আবহাওয়া বিভাগের বিশেষ বুলেটিনে জানা যায়, ফণী বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
কক্সবাজারের উখিয়ার উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লোকজনকে আপাততে নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী। এসময় তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণী আতঙ্কে রয়েছে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের ঘূর্ণিঝড়ের মত দুর্যোগ মোকাবেলার তেমন কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মুহাম্মদ আলী জানান, একটু বৃষ্টি আর বাতাস হলে ত্রিপল দিয়ে তৈরি ঝুপড়ি ঘরগুলো লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেখানে এত বড় ঘূর্ণিঝড়ে কি অবস্থা হয় একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ জানেনা। একই কথা বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা, মাঝি ও হেডমাঝি সহ সাধারণ রোহিঙ্গা নাগরিকদের।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এমনকি ইতিমধ্যে প্রস্তুতি সভা, অ্যাম্বুলেন্স, খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধসহ অন্যান্য সামগ্রি মজুদ রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি যেন না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি ক্যাম্পে কর্মরত বেশ কিছু এনজিও সংস্থাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ২টি সাইক্লোন সেন্টার ছাড়া অন্যসব সাইক্লোন সেন্টার, প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিপিপির পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।