প্রেমিককে নিয়ে স্বামী-কন্যাকে হত্যা করেন নাছিমা

83

শুরুর সন্দেহ দিনের ব্যবধানে সত্যে পরিণত হল। নৈতিক চরিত্র ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বলিই হয়েছিলেন বন্দরের নিমতলার শাহ আলম ভবনের বাসিন্দা গুদামশ্রমিক আবু তাহের (৩৫) ও তার সাড়ে তিন বছর বয়সী শিশুকন্যা ফাতেমা নুর। পাশের বাসার বাসিন্দা শ্রমিক-সর্দার মাইনউদ্দিন (৪৫)-এর সাথে অনৈতিক ও আপত্তিকর মেলামেশায় জড়িয়ে পড়েছিলেন গৃহকর্ত্রী হাছিনা বেগম (৩০)। অবুঝ ফাতেমা বাবাকে সব জানিয়ে দেবে বলে মাকে ‘ধমক’ দেয়। আর তাতেই মেয়ে আর স্বামীর কাছে নিজেকে ভয়ঙ্কর খুনি রূপে ধরা দেন হাছিনা। সাথে ছিলেন পরকীয়া প্রেমিক মাইনউদ্দিন। দু’জনেই এখন কারাগারে।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, মায়ের কোল আর স্ত্রীর সান্নিধ্য নিরাপদ আশ্রয়ের বদলে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার এ ভয়ঙ্কর কাহিনীর বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে দেয়া গৃহকর্ত্রী হাছিনার জবানবন্দিতে। হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে একই আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তার পরকীয়া-সঙ্গী মাইনউদ্দিনও। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে সকালে নগরীর দামপাড়ায় সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিমতলার বাসায় বাবা ও মেয়ে খুনের রহস্য উদঘাটন করার কথা জানান নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম। তিনি বলেন, বাসা থেকে বাবা ও মেয়ের লাশ উদ্ধারের সময় থেকেই গৃহকর্ত্রী হাছিনার আচরণ সন্দেহের জন্ম দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রথমে দাবি করেন, মেয়েকে খুন করার পর তার স্বামী নিজে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এক পর্যায়ে খুনের কথা স্বীকার করেন।
বন্দর থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, নিমতলা এলাকার শাহআলম ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষকে পিসবোর্ড দিয়ে দু’ভাগ করে একপাশে স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে থাকতেন গুদামশ্রমিক আবু তাহের। অন্যপাশে একা থাকতেন শ্রমিক-সর্দার মাইন উদ্দিন। তার পরিবার থাকে নোয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে। মাইনুদ্দীন একটি কনটেইনার ডিপোতে শ্রমিকদের মাঝি বা সর্দার হিসেবে কাজ করেন। তাহের ওই কনটেইনার ডিপোসহ বিভিন্ন গুদামে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতেন। তাহের ও হাছিনা উভয়েরই আগে বিয়ে হয়েছিল। তাহেরের আগের স্ত্রী মারা গেছে। আর হাছিনার সাথে তার আগের স্বামীর ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর পারিবারিকভাবে আবু তাহেরের সাথে বিয়ে হয়। গত পাঁচ বছর তারা সংসার করছেন। বিয়ের পর তাদের কোলজুড়ে আসে একমাত্র কন্যা সন্তান ফাতেমা নুর।
ওসি জানান, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে তাহের নিজের বাসা থেকে বাইরে বের হন। তিনি বেরিয়ে যাবার পর নিজের কক্ষে মাইন উদ্দিনের সাথে অনৈতিক মেলামেশায় লিপ্ত হন হাছিনা। শিশুকন্য ফাতেমা তা দেখে বাবাকে বলে দেয়ার কথা জানায়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মাইন উদ্দিন শিশুকন্যা ফাতেমার হাত-পা চেপে ধরেন এবং মা হাছিনা ছুরি দিয়ে নিজের কন্যশিশুকে জবাই করেন। হত্যার পর দু’জন মিলে শিশুকন্যার লাশ খাটের ওপর চাদর মুড়িয়ে রেখে দেন। দু’জন একইকক্ষে বসা অবস্থায় কিছুক্ষণ পর গৃহকর্তা আবু তাহের বাইরে থেকে বাসায় ফেরেন। আর বাসায় ঢোকামাত্রই তাকে ঝাপটে ধরেন মাইনউদ্দিন ও হাছিনা। এরপর গলায় রশি দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করেন। তাহের নিস্তেজ হয়ে পড়লে তার পেট ও মাথায় ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। হত্যাকান্ডের পর হাছিনা বেগম বাসায় অবস্থান করলেও নোয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে পালিয়ে যান মাইন উদ্দিন। জিজ্ঞাসাবাদে হাছিনার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে নোয়াখালী সদর থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে খবর পেয়ে নগরীর বন্দর থানার নিমতলা এলাকার শাহ আলম ভবনে যায় পুলিশ। সেখানে নিচতলার একটি বাসায় দুজনের রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। নিহত দুজন হলেন, গুদাম শ্রমিক মো. আবু তাহের (৩৫) ও তার সাড়ে তিনবছর বয়সী মেয়ে ফাতেমা নুর। তাদের বাড়ি নোয়াখালীর বসুরহাট উপজেলার চরকাঁকড়া গ্রামে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাছিনা বেগমসহ দুই নিকটাত্মীয়কে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরে হাছিনাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে অপর দু’জনকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। নিহত আবু তাহেরের বড় ভাই নুর আলম বাদি হয়ে হাছিনাকে আসামি করে বন্দর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।