নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ জরুরি

1

দেশের সাধারণ মানুষ চরম আর্থিক অসহায়ত্বে দিন কাটছে। আর এ অসহায়ত্ব সৃষ্টি করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী যারা সিন্ডিকেট করে দেশের সরকার ও জনগণকে জিম্মি করছে। তবে রহস্যজনক কারণে এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে আইনগত কোন পদক্ষেপ কখনও নেয়া হয়নি। বাজারে এমন কোন নিত্যপণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ডিম আর আলু। দেশে ডিমের দাম প্রতি ডজন এখন ১৭০ টাকা আর আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০টাকা কেজিতে। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা আলুর দাম আর ডিমের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশব্যাপী তোলপাড় চলছে। এদিকে গত কয়েকদিন আগে পিঁয়াজের দাম বেড়ে কেজিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলো এ জন্য পরস্পরকে দূষছে। কিন্তু এর দায় নিচ্ছে না কোন পক্ষ। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে সরকার জরুরি ভিত্তিতে পিঁয়াজ, ডিম ও আলু আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সম্পাদকীয় যখন লেখা হচ্ছে, তখন জানা গেছে আমদানির খবর শুনে পিঁয়াজ, আলু, ও ডিমের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বিষয়টি সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলছে। সম্প্রতি কোন পণ্যের দাম বাড়ার পর সরকার আমদানির ঘোষণা করার সাথে সাথে এক লাফে দাম কমে যায় কয়েকগুণ। এখন পিঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আশা করি ডিম ও আলুর দামও কমতে শুরু করবে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে আলু, পিঁয়াজ ও ডিমের উৎপাদন সংকট কী এতো বেশি যে, তা আমদানি করে বাজার দর কমাতে হবে। আর যদি তাই না হয়, যারা সাধারণ মানুষের সস্তা তরকারি আলু দাম বাড়িয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে, জনগণকে জিম্মি তরছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নয় কেন?
আমরা লক্ষ করে আসছি এ বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন খাদ্রপণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে আসছে, তার ওপর যথাযথ যুক্তি ছাড়াই নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোয় হাহাকার চলছে। খোদ বিক্রেতারাই বলছেন, ভোজ্যতেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাইকারি দামে কিনতে গেলে রসিদ দেওয়া হয় না। আর এজেন্ট বা ডিলাররা বলছেন তাদের আমদানিকারক বা মিল মালিকরা রসিদ দিচ্ছেন না। এর ফলে অধিক দামে পাইকারদের কাছ থেকে কিনে খুচরা বিক্রি করতে গেলে জনরোষের শিকার হতে হয়। ফলে তেল-চিনির মতো অনেক পণ্যই তারা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। অন্যদিকে সাধারণ ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকার অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারের নমনিয়তা বাজার অস্থির হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে সরকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। এর আগে সরকারের একাধিক মন্ত্রী সিন্ডিকেট থাকার কথা স্বীকার করলেও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। বরং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে জনগণের কাছে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা কতটা রয়েছে তা সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে। সংসদে দেওয়া বক্তব্যে জনদুর্ভোগ লাঘবে কোনো শক্ত পদক্ষেপের কথা তো উঠে আসেইনি, বরং সিন্ডিকেট ভাঙতে গেলে জনগণকেই ভুগতে হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
এমনিতেও আমাদের দেশে কারণে-অকারণেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে আমরা দেখে থাকি। কোনো অজুহাত পেলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কখনো রোজা, কখনো ঈদ বা কখনো জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে-পরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি যেন এক নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অশুভ প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। তবে এ প্রবণতা এখন বেড়ে গেছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। বলতে গেলে, নিত্যপণ্যের বাজারে অর্থনীতির নিয়মের বদলে এখন সিন্ডিকেটের বিধিবিধান কার্যকর রয়েছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে বেআইনিভাবে এ চক্র লাভবান হলেও ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় নিয়োজিত সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও এর বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। উলটো তারা নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, মাঠ প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে নিত্যপণ্য নিয়ে কারা কারসাজি করে, তাদের শনাক্ত করেছে। এ সম্পর্কিত একাধিক তালিকা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোও হয়েছে। সরকার এসব সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অস্থির বাজারকে দ্রæত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে-এটাই প্রত্যাশা।