নারী জাগরণে নজরুল : প্রেক্ষিত সিলেট

417

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সিলেটে মুসলমানরা শিক্ষা, সম্পদ, জ্ঞান-গরিমায় সমৃদ্ধ ছিল। ১৭৬৫ সালের পর থেকে একদিকে শাসকশ্রেণীর মুসলমান বিদ্বেষী মনোভাব, অন্যদিকে মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষার প্রতি অনিহা প্রদর্শন মুসলমানদেরকে অনেক পেছনে টেলে দেয়। এদিকে হিন্দু সম্প্রদায় শাসকশ্রেণীর আনুকল্য লাভের সুযোগ পেয়ে রাতারাতি সরকারি বড় পদপদবী ও জমিদারীতে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নেয়। ফলে, সম্ভ্রান্ত মুসলমানরা পর্যন্ত চরম দারিদ্রতায়, হতাশায় জীবন কাটাতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ শাসনের শেষদিকেও সিলেটের কিছু পরিবার সবকিছু কাটিয়ে পারিবারিক ঐতিহ্য, শিক্ষা ও মুসলিম সংস্কৃতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। তখনও মুসলমান নারীদের বাইরে যাতায়াত সীমাবদ্ধ ছিল। মুসলিম নারীগণের প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে যোগদান করার কোনো রেওয়াজ ছিলনা।
কবি নজরুলের সিলেট সফরে মুসলিম নারীর প্রকাশ্য সভায় যোগদানের মাধ্যমে জাগরণের এক নব উত্থান সংঘটিত হয়েছিল। এর আগে মুসলিম নারীরা কোন সভা সমিতিতে প্রকাশ্যে যোগদান করেন নি। সিলেটের মহিলারা তখন ভীষণ অবরোধের মধ্যে ছিলেন। কোথাও যেতে হলে বোরকা তো পরতেনই তার উপর ঘেরা টোপ লাগান হত। গাড়ী হতে নৌকায় বা পালকিতে উঠতে হলে নৌকার মাঝি বা গারোয়ানদেরকে সরিয়ে দেয়া হত। তারপর আপনজনেরা পর্দা দিয়ে দেয়াল সৃষ্টি করে গন্তব্যপথ বেষ্টন করে ধরত। তখন মহিলারা বেষ্টনির মধ্যে দিয়েই চলাচল করতেন। ঘরোয়া কোনো সভা সমাবেশে যোগদান করতে হলেও বোরকা পরে, আড়ালে থেকে তাদেরকে প্রত্যক্ষ করতে হতো অনুষ্ঠান। কিন্তু দীর্ঘদিনের এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না নারীরা। ঠিক তখনই প্রথা ভেঙ্গে নজরুল বাংলার সাহিত্যাঙ্গনে ধূমকেতুরূপে আর্বিভূত হন। মাওলানারা নজরুলের বিরুদ্ধে নানা ফতোয়া দেন, প্রকাশ্যে নজরুলের সঙ্গিতের বিরোধীতা করেন। বিরোধীতায় গোড়া হিন্দুরাও ছিলেন। তথাপি নজরুল আপন পথে অটল। বিরুদ্ধতা অতিক্রম করে দিকে দিকে চলে নজরুলের জয়গান। সেই জয়যাত্রার ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে সুরমা উপত্যকায়। গড়ে উঠে সিলেটে নজরুল প্রেমিদের বিশাল বলয়। প্রগতিশীল সাহিত্যপ্রেমিরা নজরুলকে সিলেটে নিয়ে আসার ব্যাপারে ব্যাকুল হয়ে উঠেন। তাদের আকুলতায় সিলেটে আসেন বিদ্রোহী কবি।
কাজী নজরুল ইসলাম প্রথমবার সিলেটে আসেন ১৯২৬সালে। সেবার কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগদান ছাড়া আর কোনো আনুষ্ঠানিকতার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেননি। কারণ বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কবি প্রায় একমাস অবস্থান করেন শহরের নয়াসড়কে রায়বাহাদুর রমণীমোহন দাশের বাড়িতে। কিছুটা সুস্থ হলে কবি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। তাঁর দ্বিতীয় সফর নানা কারণে ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। ১৯২৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কবির এই সফর সিলেটে আলোড়ন তুলে। আসাম প্রাদেশিক স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের সম্মেলন সিলেটে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ উপলক্ষে কবি নজরুল ইসলাম, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হক এবং শিক্ষাবিদ ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কে এতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁরা সানন্দে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। আব্দুল মান্নান সৈয়দ লিখেছেন, এই তিন মনিষী একসাথে কলকাতা থেকে সিলেটে আসেন। গোয়ালন্দ থেকে স্টিমারে চাঁদপুর। চাঁদপুর থেকে ট্রেনে সিলেট এসে সকালে পৌঁছেন। স্টেশনে অনুরাগীদের ভিড়। একে ফজলুল হককে রাখা হয় ডাকবাংলোতে। শহীদুল্লাহ উঠেন তাঁর প্রাক্তন ছাত্র সৈয়দ মোস্তফা আলীর বাড়ীতে। আর কবি নজরুল কে নিয়ে আসা হয় মকবুল হোসেন চৌধুরীর দরগামহল্লাস্থ ভাড়াটে বাসা ‘ভাদেশ্বর লজে’। তখন এই বাসায়ই রাতদিন প্রচুর ভিড় লেগে থাকত। আড্ডা চলত সর্বক্ষণ। কবি কখনো আবৃত্তি করতেন, গান গাইতেন।
আসাম প্রাদেশিক মুসলিম স্টূডেন্টস এসোসিয়েশনের সম্মেলনে যোগ দিতে এলে কবি সিলেটের সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলোর আথিতেয়তা গ্রহণ ছাড়াও একাধিক সভা এবং সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সম্মিলনী অনুষ্ঠানে বিদ্রোহী কবির যোগদান সূচিত করে এক নতুন অধ্যায়ের। চার দেয়ালের বৃত্তে বন্দি থাকা মুসলিম নারীরা এই সম্মেলন থেকেই পায় মুক্তির সন্ধান। নজরুলের পরোক্ষ ইন্ধন ও কটাক্ষের কারণে ঘটে ইতিহাসিক কিছু ঘটনা। প্রথাভাঙার উদ্যোগ নিয়ে দুজন মহীয়সী স্থাপন করেন নব ইতিহাস। যে পথের পথিক হয়ে মুসলিম নারী সমাজ ঘুচিয়েছে রক্ষণশীলতার বেড়ী। অধ্যাপক নৃপেন্দ্রলাল দাশ তার ‘সিলেটে নজরুল’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে অল্পবিস্তর আলোকপাত করেছেন। বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠায় তিনি উলে­খ করেছেন, ‘দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন এক বাধার বিন্ধ্যাচল অতিক্রম করে, সিলেটের অচলায়তনিক পর্দা ভেঙে, আব্দুর রশীদ চৌধুরীর স্ত্রী বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ও আব্দুর রহীম চৌধুরীর স্ত্রী সভায় নজরুলের ভাষণ ও গান শুনতে যান। বেগম রহিমতো চিকের আড়ালে না বসে একেবারে হিন্দু মহিলাদের সারিতে গিয়ে বসেন। তার পিতা সরাফত আলী সভা শেষে সগর্বে বলেন, ‘প্রথম সারিতে এতক্ষণ বসে রয়েছে সে কার মেয়ে, আমারই থার্ড ডটার। আজকে সিলেটের ইতিহাসে এক নতুন চ্যাপ্টার দেখা দিল।’ নজরুলের আগমন নারী সমাজে এমন আলোড়ন সম্ভবত: এটিই সিলেটে নারী জাগরণের প্রথম সূচনা এবং নারী প্রগতির স্মরণীয় দিন।
সত্যি এক নতুন বিপ্লব এটা। সিলেটের নারী সমাজে জাগরণ এনে দিল। ‘জাগো নারী বহ্নিশিখা’ বলে নজরুল ডাক দিলেন। প্রাচীন সিংহদ্বারের আগল ভেঙে গেল। নজরুলের সিলেট পরিক্রমার সুফল হলো।এখানে প্রচলিত অবরোধ প্রথাকে তিনি শিথিল করে দিয়েছিলেন, অভিজাত ঘরের মহিলারা নেমে এসেছিলেন জনতার সামনে। যার ফলশ্রুতিতে দেখা যায় বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী পরবর্তীকালে দেশনেত্রী হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করে বিখ্যাত হয়েছিলেন।
সংগ্রামী নারীর জীবনালেখ্য গ্রন্থে জোবায়দা রহিম চৌধুরীর সেদিনকার ভূমিকা বিস্তৃত পরিসরে উঠে এসেছে।
গবেষক তাজুল মোহাম্মদের ভাষায়, ‘১৯২৮ সালের কথা। সিলেটে অনুষ্ঠিত হবে মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সম্মিলনী। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলার তিন ক্ষণজন্মা পুরুষ, ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের তিন দিকপাল। তাঁরা হলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বহু ভাষাবিদ, পন্ডিত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। সম্মিলনীর স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে শহরের রতনমণি লোকনাথ টাউন হল। এর জন্য চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ছাত্রনেতারা খাটছেন দিনরাত। সভা সফল করতে তারা গ্রহণ করছেন নানা পরিকল্পনা। নির্দিষ্ট দায়িত্ব নিয়ে কাজে নেমে পড়েছেন প্রত্যেকে। যোগাযোগ করছেন তারা শহরময়। ছাড়িয়ে গেছেন কেউ কেউ শহরের সীমা। অন্যান্য মহকুমা এবং থানায়ও চলছে প্রস্তুতি। সম্মিলনী সফল করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন চলছে। আয়োজকরা এক সময় ভাবলেন, নারীদের সমাবেশ ঘটানোর কথা। এ বিষয়েও তাঁরা গ্রহণ করলেন সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নারীদের উপস্থিতি ঘটানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়। নির্ধারণ করা হলো মহিলা আসন। এর চারদিকে চিকের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয় পর্দা ব্যবস্থা। বোরখা পরিহিতা হয়ে মহিলারা বসবেন চিক দিয়ে ঘেরা অংশে। বিভিন্ন স্তরের মহিলারা হলেন আমন্ত্রিত। এর মধ্যে ছিলেন জোবায়দা চৌধুরীও।
সম্মিলনীতে নারী সমাবেশ ঘটানোর পরিকল্পনার বিরোধী ছিলেন জোবায়দা চৌধুরীর স্বামী দেওয়ান আবদুর রহিম চৌধুরী। তবুও সাদরে আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন জোবায়দা চৌধুরী। নির্দিষ্ট দিনে হাজির হলেন বরাবরের মতো বোরখা পরে। আসনও গ্রহণ করেন মহিলাদের নির্ধারিত স্থানে, পর্দার ভেতরে। মঞ্চে এলেন বাংলা ভাষা, কবিতা ও রাজনীতির তিন দিকপালসহ অন্য নেতৃবৃন্দ। এমনকি জোবায়দা চৌধুরীর পিতা খান বাহাদুর সরাফত আলী চৌধুরীও আসন গ্রহণ করেছেন মঞ্চে। অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন। মাইক্রোফোনের সামনে দন্ডায়মান ঘোষকের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো অনুষ্ঠান শুরুর ঘোষণা। এরপর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের দরাজ কণ্ঠে পরিবেশিত হয় উদ্বোধনী সঙ্গীত। ঠিক তখনই ঘটে এক অভাবিত ঘটনা। মুহূর্তে হলভর্তি লোকজনের দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো নারী-পুরুষ আসনের মধ্যবর্তী স্থানে। চিকের বেড়া আর নেই সেখানে। উদ্বোধনী সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গেই এক টানে জোবায়দা চৌধুরী খুলে দিয়েছেন নারী আর পুরুষের মধ্যকার পর্দা। তখনকার বাস্তবতায় এটি কোনো সামান্য ঘটনা নয়। মুসলিম সমাজের কাছে তা ছিল অকল্পনীয়। বিস্ময়ের ঘোরমুক্ত হওয়ার আগেই ঘটে আরো আশ্চর্যজনক ঘটনা। জোবায়দা চৌধুরী ততক্ষণে খুলে ফেলেছেন তাঁর বোরখা। পুরোপুরি পর্দামুক্ত মহিলা হিসেবে নির্বিকার বসে আছেন তিনি। না, নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউ কেউ। একজন মাত্র মহিলা এরকম একটা ঝুঁকি নিতে পারেন, তা অবিশ্বাস্যই বটে! সমগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতেই পারে। বিশেষ করে চিকের আড়াল সরিয়ে দেয়ার পর আবার নিজেকে বোরখামুক্ত করে আরও শতগুণ বেশি ঝুঁকি নিয়েছেন তিনি। পশ্চাৎপদতা, অন্ধ গোঁড়ামির বিরুদ্ধে অনেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও এমন বিদ্রোহ কখনো দেখেনি কেউ।ফলে পুরো বিষয়টাকে কারো কাছে মনে হচ্ছিল স্বপ্ন, কেউ ভাবছিলেন দুঃস্বপ্ন। আর জেল সুপার ম্যাককয়ের মতে, ‘তোমরা একদিনে পঞ্চাশ বছরের পথ অতিক্রম করিয়াছ। মহিলারা পর্দাপ্রথা ভাঙিয়া রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িয়াছেন।’
অতিথিরা যে দিন সিলেট পৌঁছেছিলেন ঐ দিনই বিকাল বেলা গিরিশ চন্দ্র বিদ্যালয়ে সভার আয়োজন করা হয়। নজরুল গান শুরু করার আগে ঘটে গেল কিছু তিক্ত-মধুর ঘটনা। একজন মৌলভী সাহের প্রশ্ন তুললেন- গান গাওয়া জায়েজ কি না? কবি নজরুল জবাব দেয়ার আগেই শেরে বাংলা বললেন, গান গাওয়া গায়কের নিয়তের উপর নির্ভর করে। আরও একটি প্রশ্ন আসল, কবি নামাজ পড়েন কিনা? নজরুল বললেন, এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার এবং অপরকে জিজ্ঞেস করার কিছুই নেই। সঙ্গীত পিপাসু শ্রোতাবৃন্দের চাপে নজরুল গান ধরলেন। তিনি গাইলেন, ‘বাজলো কিরে ভোরের শানাই’, ‘চল চল চল’, মিঠা নদীর পানি’ ও ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ প্রভৃতি গান। মন্ত্রমুগ্ধের মত শ্রোতাগণ গান শুনলেন।
ফলশ্রুতিতে ধারাবাহিকভাবে বদলে যেতে শুরু করে এই অঞ্চলের মুসলিম নারীদের বঞ্চনার ইতিহাস। নারীরাও অংশ নিতে শুরু করে আন্দোলনে সংগ্রামে। মূল গ্রোতধারার সাথে সম্পৃক্ত হয় তাদের মেধা ও মননশীলতা।
নজরুলের বিদ্রোহী সত্ত্বাই নারীদ্বয়ের মনের মাঝে থাকা বিদ্রোহকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল সেদিন। আর এরই ধারাবাহিকতায় আজ সিলেট অঞ্চলের নারীরা দেশে ও দেশের বাইরে পুরুষের পাশাপাশি সমানভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এমনকি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সিলেটের নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। সেদিনের সেই কবি নজরুল এক মহা-যাদুকরের ভূমিকায় যুগ-যুগান্তরের অচলায়তন ভেঙ্গে নারী জাগরণে যে ঢেউ জাগিয়ে গেছেন, তা আজো বিকাশমান।