নারীর মর্যাদার বিরুদ্ধে কথা বললে শাস্তি দিতে হবে

74

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি লেখক-সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে নারী সমাজের অনন্যসাধারণ অংশগ্রহণ এবং অপরিসীম ত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা এখনও সমাজ ও রাজনীতির সর্বক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি বলেই সমাজে নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা, সন্ত্রাস বাড়ছে। ৭১-এ যারা ধর্মের নামে গণহত্যা ও নারী নির্যাতনকে বৈধতা দিয়েছিল, তারা এখন ওয়াজ ও খুতবার নামে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও কদর্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, সমাজে নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হলে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ১৯৯৭ সালে যে নারীনীতি প্রণয়ন করেছিলেন, সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর সম অধিকার ও মর্যাদার বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক থেকে আরম্ভ করে শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং নারীর সম অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার শহীদজননী জাহানারা ইমামের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সমাজের বিবেক জাগ্রত হোক নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে এবং মুক্ত হোক নারীর চলাচল’- এই প্রতিপাদ্যে সারাদেশে অব্যাহত নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রাম জেলার আয়োজনে গণজাগরণযাত্রায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় শহীদ জননী আমৃত্যু লড়েছেন এবং নারী জাগরণে অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছেন।
জাহানারা ইমামের চেতনায় তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে শাণিত ও প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে দেশের নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল এবং এখনও আছে। জোহরা তাজউদ্দিন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ দলের নিবেদিতপ্রাণ নারীরা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে পুনরায় দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁদের দেখানো পথে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সারাবিশে^ উন্নয়নের রোল মডেল এবং নিজেকে একজন সফল ও স্বপ্নবান মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
গণজাগরণযাত্রায় সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন- কবি সুফিয়া কামাল, রাজনীতিক জোহরা তাজউদ্দিন, নারীনেত্রী বেগম উমরতুল ফজল, নীলুফার কায়সার (মরণোত্তর), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা প্রফেসর হামিদা বানু, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর হান্নানা বেগম, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী ও নীলুফার কায়সার। অনুষ্ঠানে নীলুফার কায়সারের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা প্রফেসর ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. অলিদ চৌধুরী এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিথুন মল্লিকের যৌথ সঞ্চালনায় গতকাল বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণজাগরণযাত্রায় প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালি।
আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রাম সভাপতি একিউএম সিরাজুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আইয়ুব খান, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল চৌধুরী, সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, সহ-সভাপতি স্বপন সেন, দীপংকর চৌধুরী কাজল, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মইনুদ্দিন, মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মিলি চৌধুরী, মো. হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক রেখা আলম চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক হাবিব উল্লাহ চৌধুরী ভাস্কর, একেএম জাবেদুল আলম সুমন, আবু সাদাত মো. সায়েম, আবদুল মান্নান শিমুল, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলম খান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক চৌধুরী, সুমন চৌধুরী, আসাদুজ্জামান জেবিন, মো. সাহাব উদ্দিন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রুবা আহসান, সহ- মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সূচিত্রা গুহ টুম্পা, সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আলাউদ্দিন বাবু, প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক সনেট চক্রবর্ত্তী, সহ-প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক রুবেল চৌধুরী, সহ-প্রকাশনা সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদিন, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ কামাল উদ্দীন, সহ-আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট রক্তিম বিশ^াস, শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ড. মোজাহেরুল আলম, সহ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাজীব চৌধুরী, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক রুবেল আহমেদ বাবু, সহ-দফতর সম্পাদক ইমরান আহমেদ, সদস্য আবুল কালাম, এম. হামিদ হোছাইন, জেডএএম রুকনুজ্জামান রোকন, মো. রাসেল, চন্দন চক্রবর্তী, মো. আলমগীর, মুক্তা জামান, মো. আকতার উজ জামান, আবু সুফিয়ান, আকিব জাবেদ, আব্দুল কাদের, আখতার হোসেন, মোহাম্মদ হাসান, হাসান মোহাম্মদ মাসুদ, মোস্তাক আহমেদ মুরাদ, আবদুল্লাহ মুহিত, আবদুল হাকিম, রুবেল কুমার শীল, সৈকত দাশ প্রমুখ। এছাড়া খ্যাতিমান রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী কাবেরী সেন গুপ্তার পরিচালনায় ‘শোক সঙ্গীত’ পরিবেশন করেন সঙ্গীত ভবনের শিল্পীরা।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, জঙ্গি-মৌলবাদী সন্ত্রাসের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’র ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়েছে। তবে এ কথা আমরা বার বার বলছি জঙ্গিদমনই যথেষ্ট নয়, জঙ্গিদের আদর্শ ও রাজনীতি- যাকে আমরা ‘মওদুদিবাদ’ ও ‘ওয়াহাবিবাদ’ বলি, তাকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে নির্মূলের কোন সমন্বিত কার্যক্রম কোথাও দেখছি না।