চীনের হুবেইয়ে থাকা ১৭১ জনও ফিরবে জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

17

আগের অবস্থান পরিবর্তন করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে চীনের হুবেই প্রদেশে আটকে পড়া আরও ১৭১ জন বাংলাদেশিকে ফেরানোর কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন।
এর আগে সরকারি উদ্যোগে চীন থেকে আর কাউকে আনা হবে না বলে বক্তব্য দেওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি।
মোমেন বলেন, হুবেই প্রদেশে আরও ১৭১ জন বাংলাদেশি আছে, তারাও আসবে। আমরা ভবিষ্যতে তাদেরকে ফিরিয়ে আনব। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। খবর বিডিনিউজের
করোনা ভাইরাসে চীনে দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু এবং ৭০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হওয়ায় সে দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে উদগ্রীব।
নভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া শুরু হলে গত ১ ফেব্রূয়ারি বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ চীনের উহানে গিয়ে ৩১২ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনে। সেসময় চীন থেকে এক দফায় তিন শতাধিক জনকে আনতে ৩ কোটি টাকা খরচের হিসাব দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এরপর আর কাউকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ না নেওয়া প্রসঙ্গে এই ‘খরচের’ হিসাব দেওয়া নিয়ে সমালোচিতও হন তিনি। তবে চীনে থাকা বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অর্থ কোনো সমস্যা নয় বলে এরপর মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
৩১২ জন বাংলাদেশিকে ফেরানার পর ওই বিমান, পাইলট ও ক্রুদের অন্য দেশে ঢোকার ক্ষেত্রে অনুমতির ঝক্কি মোকাবেলার কথা ব্যাখ্যা হিসেবে উল্লেখ করে এদিন সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখন আমরা ৩১২ জনকে ফিরিয়ে এনেছি, তখন একটি বিশেষ বিমান গিয়েছিল। বিমানটি যখন ফিরে আসে তখন অনেক কথা শুনতে হয়েছে। ক্রু ও বিমানকর্মীদের অন্যদেশ ঢুকতে দেয়নি। তাদেরকেও কোয়ারেন্টিনে রাখতে হয়। যা আমাদের জন্য বড় জটিলতা তৈরি করে। একমাত্র বাড়িতেই কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা হয় তাদের। এখন কোয়ারেন্টিনের সময় শেষ হয়েছে, তারাও যেতে পারবে।
দেশে ফিরে আসার জন্য প্রথমে ১৭১ জন নিবন্ধন করলেও নিজ খরচে ফিরতে ৩০ জন রাজি হয়েছে বলে জানান তিনি। মোমেন বলেন, এক পর্যায়ে আমরা বলেছিলাম, যদি উনারা নিজের পয়সায় আসেন, তখন ৩০ জন রেজিস্ট্রি করেছে। আমরা এখন চিন্তা করছি, যদি ওরা কেউ আসতে চায়, কেউ কেউ আসতে চায়, তাহলে আমরা দেখি কীভাবে আয়োজন করা যায় ওদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য।
সরকারি খরচে চীনে থাকা বাংলাদেশিদের আনা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তো একদলকে এনেছি ট্যাক্সপেয়ারের পয়সায়, আরেকদলকেও হয়ত সেভাবে আনব।
কবে নাগাদ তাদের ফিরিয়ে আনা হতে পারে সে প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, শাট ডাউন করে রেখেছে। ওখানে বিমান যেতে হলে তাদের পূর্বানুমতি নিতে হয়। ওখান থেকে কোনো লোক বাইরে যেতে পারবে না। নতুবা আমাদের তো ফ্লাইট চালু আছে, কুনমিং ও গুয়াংজু থেকে। কিন্তু হুবেই প্রদেশ থেকে কেউ বের হতে পারে না। আমাদের উপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে চীনের উপরে। তারা পারমিশন দিলে আমরা আনতে পারব।
করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় ৫০০ কিট দিচ্ছে চীন : করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য বাংলাদেশে ৫০০টি টেস্ট কিট পাঠাচ্ছে চীন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে এই কিট আসার নথি তুলে দেন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। অনুষ্ঠানে জিমিং বলেন, আমরা ৫০০টি কিট দিচ্ছি, যাতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা যায়। যা এই দেশে ভাইরাসটি সংক্রমণ মোকাবেলায় কাজ করবে। আগামী দুইদিনে এই কিটগুলো এসে পৌঁছাবে।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত চীনের জন্য ‘সহমর্মিতামূলক সহায়তা’ হিসাবে মাস্ক, গাউন, ক্যাপ ও স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশটির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উপহার আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের হাতে তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একইসঙ্গে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় শোক ও সমবেদনা জানিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।