চার থেকে ১৪ বছর ধরে আছেন এগার কর্মকর্তা

106

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে প্রেষণে নিয়োগযোগ্য পদ রয়েছে ১৬টি। সরকারি কলেজের শিক্ষকরা প্রেষণে এসব পদে নিয়োগ পান। বিধি অনুযায়ী, প্রেষণে ৩ বছর দায়িত্বে থাকার কথা থাকলেও ১১ জন কর্মকর্তাই আছেন ৪ থেকে ১৪ বছর ধরে। এর মধ্যে ১৪ বছর ধরে ১ জন, ১০ বছর ধরে আছেন ৩ জন, ৯ বছর ধরে ২ জন, ৮ বছর ১ জন, ৫ বছর ১ জন এবং ৪ বছর ধরে রয়েছেন আরও ৩ জন।
অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের সহায়তায় বছরের পর বছর শিক্ষাবোর্ডে থেকে যাচ্ছেন এসব কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ পান প্রভাষক মো. আবুল মনছুর ভূঁঞা। ৫ বছর চাকুরি করার পর ২০০২ সালে পদোন্নতি নিয়ে পটিয়া সরকারি কলেজে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে আবারও শিক্ষাবোর্ডে একই পদে নিয়োগ পান এ শিক্ষক। সবমিলিয়ে ১৪ বছর ধরে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডেই কর্মরত রয়েছেন তিনি। শুধু তিনি নন, শিক্ষাবোর্ডের সচিব প্রফেসর শওকত আলম ৫ বছর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান ৯ বছর, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রসেনজিৎ পাল ৪ বছর, তাওরিক আলম ৪ বছর, উপ-কলেজ পরিদর্শক মো. হালিম ৯ বছর, অডিট অফিসার মৃণাল চন্দ্র নাথ ১০ বছর, হিসাবরক্ষণ অফিসার একেএম ইকবাল হেসেন ১০ বছর, সহকারি মূল্যায়ন কর্মকর্তা শুক্লা রক্ষিত ৮ বছর, সহকারি সচিব সম্পতা তালুকদার ১০ বছর, সহকারী সচিব মো. সাইফুদ্দিন ৪ বছর ধরে শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত রয়েছেন।
শিক্ষাবোর্ডে পদায়নেও রয়েছে বৈষম্য। বোর্ডের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে ৭টি পদে কর্মরত আছেন ১জন অধ্যাপক, ৫জন সহযোগি অধ্যাপক ও ১জন সহকারী অধ্যাপক। এ পদগুলোতে পদায়ন হওয়ার কথা ছিল সহকারি অধ্যাপক মর্যাদার শিক্ষকের।
চট্টগ্রামে সরকারি কলেজের শিক্ষকদের মাঝে প্রচলিত আছে একটি সিন্ডিকেটের গল্প। বছরের পর বছর শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত থাকার যুক্তি হিসেবে গল্পটি উপস্থাপন করেন তারা।
বিভিন্ন সরকারি কলেজের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার এপিএস পদে যোগদান করেন দুর্নীতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে বহিষ্কৃত সাবেক ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মন্থন রঞ্জন বাড়ৈ। ওই সময় বাড়ৈ এর ইশারায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে নিয়োগ পান সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন। এ সিন্ডিকেটই প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের বছরের পর বছর বহাল রেখেছে একই পদে।
প্রতিবছর শিক্ষা ক্যাডারের ১০ থেকে ১২জন উপসচিব হন। তাঁদের দাবি, এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে উপসচিবের পদোন্নতিও। তাদের হাত ধরেই ৯ বছর শিক্ষাবোর্ডে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকার পর ড. পীযূষ দত্ত, ৯ বছর বিদ্যালয় পরিদর্শক থাকার পর কাজী নাজিমুল ইসলাম, ৯ বছর কলেজ পরিদর্শক থাকার পর সুমন বড়ুয়া উপসচিব পদমর্যাদায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা হন।
এ বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পূর্বদেশকে বলেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষাবোর্ডে দীর্ঘদিন প্রেষণে থাকা যাবে না। যারা রয়েছেন, তাদের ব্যাপারে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।