চকরিয়ায় দুষ্প্রাপ্য স্ট্রবেরির ভালো ফলন, চাষীরা খুশি

42

চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের সিকদারপাড়া গ্রামের আকতার আহমদের ছেলে হুমায়ুন কবির। পেশায় একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ী। ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুডস (ক্রেল) প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৫ সালে রাজশাহী আকাফুজি এগ্রিকালচার টেকনোলজী থেকে স্ট্রবেরি চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
এ প্রশিক্ষণ কোর্সে হুমায়ুন কবিরসহ মোট ৪০ জন অংশ নেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ডক্টর মঞ্জুরুল হোসেনের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন তারা। ২০১৫ সালে প্রশিক্ষণ নিয়ে ওই বছরই চকরিয়ায় স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন হুমায়ুন কবিরসহ কয়েকজন যুবক। প্রথম চাষ শুরু হয় কাকারা, লক্ষ্যারচর ও ফাঁসিয়াখালীসহ কয়েকটি ইউনিয়নে। অল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফার পাশাপাশি সৌন্দর্য্য ও ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রথমে এ স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করে তরুণরা। কিন্তু বিভিন্ন সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাষিদের লোকসান গুনতে হওয়ায় পরবর্তীতে এ চাষ বন্ধ করে দেয় প্রায় সকলেই। অথচ হাল ছাড়েননি হুমায়ুন কবির।
এ বছরও শখের বসে খুটাখালী এলাকায় ১৩ শতক জমি বর্গা নিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন তিনি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার ফলন ভাল হয়েছে। এতে ব্যয়ের তুলনায় অধিক মুনাফার আশা করছেন হুমায়ুন কবির।
স্ট্রবেরি চাষি হুমায়ুন কবির বলেন, ২০১৫ সালে ক্রেল প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশাহী আকাফুজি এগ্রিকালচার টেকনোলজি থেকে স্ট্রবেরি চাষের উপর পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ শেষ করেই ওই বছর ১৫ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক স্ট্রবেরি চাষ করি। এ চাষে ৫০ হাজার টাকা খরচ হলেও লভ্যাংশ আসে অন্তত এক লাখ টাকা। অন্যান্য বছর চাষ করলেও আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় কাক্সিক্ষত ফলন আসেনি। ফলে অনেক চাষিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে এই স্টবেরি চাষ ছেড়ে দেন। কিন্তু হাল ছাড়িনি আমি। এবছরও শখের বসে ১৩ শতক জমি বর্গানিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করেছি। জমিতে কেমারোসা প্রজাতির ১৩’শ চারা লাগিয়েছি। রাজশাহী আকাফুজি এগ্রিকালচার টেকনোলজি থেকে এ চারা সংগ্রহ করি। চারা ক্রয় ও অন্যান্য খরচসহ পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো। বর্তমানে রোপিত চারার বয়স চলছে ৫০ থেকে ৬০দিন। কিছু কিছু চারায় ফলন আসতেও শুরু করেছে। এবছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং ফলন ভাল হচ্ছে। পুঁজির চেয়ে দ্বিগুণ অথবা তিনগুণ মুনাফার আশা করছি আমি। আগামী বছর বানিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির স্ট্রবেরি চাষ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন বলেও জানান হুমায়ুন কবির।
স্ট্রবেরি চাষে লোকসানের মুখে পড়া উপজেলার কাকারা ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের কয়েকজন চাষি বলেন, চকরিয়ায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসনের ফলে জমির দুষ্পাপ্যতায় সবজি, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ফল-ফুলের চাষ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তামাক চাষিরা প্রতি কানি জমি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে তামাক চাষ করেছে। অন্যান্য চাষিদের ওই পরিমাণ টাকা দিয়ে জমি বর্গা নেওয়া সম্ভব হয়না। জমির দুষ্পাপ্যতায় এসব ফসলের চাষ করতে আগ্রহ হারাচ্ছে অনেক কৃষক।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শোভন দত্ত বলেন, স্ট্রবেরি একটি দুষ্পাপ্য ফল। এই অঞ্চলে স্ট্রবেরি চাষ খুবই কম হয়। স্ট্রবেরি ফলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এফলে রয়েছে ভিটামিন-এ, কার্বহাইড্রেট ও ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন মিনারেল। এ ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, স্ট্রবেরি একটি লাভজনক চাষ। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে স্বল্প পুঁজির এ চাষে দ্বিগুণ লাভ করা সম্ভব। যেসব এলাকা স্ট্রবেরি চাষের উপযোগী সেসব এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।