ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান কাদের কারাগারে

51

ক্রিসেন্ট গ্রুপের নামে ৯১৯ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার ওই কোম্পানির চেয়ারম্যান এম এ কাদেরকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এম এ কাদেরকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করা হলে জামিন আবেদন নাকচ করে মহানগর হাকিম জসিমউদ্দিন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন আদালতে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এই আসামিকে ভবিষ্যতে রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে’। ‘সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে’ আসামিকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে রাখার অনুমতি চান তদন্ত কর্মকর্তা।
অন্যদিকে এম এ কাদেরের পক্ষে জামিন চেয়ে তার আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ আদালতে বলেন, ‘মামলাটি করার কথা ছিল দুদকের, কিন্তু করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর পেছনে গোপন কারণ রয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বলে প্রতিপক্ষ ব্যবসায়ীদের হিংসার শিকার হয়েছেন’। এই আইনজীবী বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগে আগে মামলা করে পরে গ্রেপ্তার করতে হয়। তা না করে এম এ কাদেরকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করে মামলা করা হয়েছে। অতি উৎসাহিত হয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে’।
এর বিরোধিতা করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলী আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কয়েক হাজার কোটি টাকা তিনি বিদেশে পাচার করেছেন, এই টাকার বিপরীতে তার মালামাল আমদানি করার কথা। কিন্তু কোনো মালামাল দেশে আসেনি। এটি হয়রানিমূলক মামলা না, আমরা বিচারে প্রমাণ করব এটি সঠিক মামলা’। খবর বিডিনিউজের
ক্রিসেন্ট গ্রæপের তিনটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৯১৯ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে গত বুধবার রাজধানীর চকবাজার থানায় এমএ কাদেরের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়। ক্রিসেন্ট গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদের চার কর্মকর্তাসহ জনতা ব্যাংকের ১৩ জন কর্মকর্তাকে তাতে আসামি করা হয়।
অধিদপ্তরের মহাব্যবস্থাপক মো. শহীদুল ইসলাম গত বুধবার বলেন, মুদ্রাপাচারে সংশ্লিষ্টতার ‘প্রমাণ পাওয়ায়’ রাজধানীর কাকরাইল থেকে এম এ কাদেরকে তারা গ্রেপ্তার করেন। এছাড়াও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার জানানো হয়, ক্রিসেন্ট গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধাপে ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে তিন মামলায়। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ৪২২.৪৬ কোটি টাকা, রিমেক্স ফুটওয়্যার ৪৮১.২৬ কোটি টাকা ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ ১৫.৮৪ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট ৯১৯.৫৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছে বলে শুল্ক গোয়েন্দাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
এমএ কাদের ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান। তার ভাই চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজও এসব মামলার আসামি। আজিজ রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান। তিন মামলায় বাকি আসামিরা হলেন- ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগম মনি, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের এমডি লিটুল জাহান (মিরা), জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ডিএমডি (সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন জিএম) মো. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি (জনতা ব্যাংক লিমিটেডের তৎকালীন জিএম) ফখরুল আলম, জিএম মো. রেজাউল করিম, ডিজিএম কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ, এ কে এম আসাদুজ্জামান, মো. ইকবাল, এজিএম (সাময়িক বরখাস্ত) মো. আতাউর রহমান সরকার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বারখাস্ত) মো. খায়রুল আমিন, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. মগরেব আলী, প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মুহাম্মদ রুহুল আমিন, সিনিয়র অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. সাইদুজ্জাহান, মো. মনিরুজ্জামান ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।