কৃষি ও কৃষককে অবহেলা করে শিল্পায়ন নয়

54

কৃষি এবং কৃষককে গুরুত্ব দিয়ে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনা করে থাকে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা উন্নত হব, শিল্পায়নে যাব। কিন্তু কৃষককে ত্যাগ করে নয়, কৃষিকে ত্যাগ করে নয়। কারণ কৃষি আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। খাদ্য দেয়, পুষ্টি দেয়, সবকিছু করে। কাজেই আমাদের দেশে উন্নয়ন প্রকল্পটা আমরা এমনভাবে নিই, যাতে কৃষকদেরকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পর অনেকের কৃষিকাজ করতে না চাওয়ার প্রবণতার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
আমাদের যারা লেখাপড়া শেখে.. লেখাপড়া শিখলেই তারা আর মাঠে যেতে চায় না। কৃষকের ছেলে, বাবা কৃষি কাজ করে লেখাপড়া শিখিয়েছে। তার ছেলেমেয়ের অবশ্যই মাঠে যাওয়া উচিত। দুর্ভাগ্য আমাদের, দু’পাতা পড়েই মনে করে আমি কেন যাব? আমার মনে হয় ওই চিন্তা থেকে দূরে থাকা দরকার।এবার কৃষকের ধান কাটতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দেওয়া নির্দেশের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নিজের কাজ নিজে করায় লজ্জার কিছু থাকেনা। নিজের ফসল নিজে উৎপাদন করব, নিজের খাবার নিজে খাব, তাতে লজ্জার কি আছে? কোনো কাজে লজ্জার কিছু নেই। এ বিষয়ে কৃষকলীগের একটা ভূমিকা থাকা দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের স্কুলজীবন থেকে এটা অভ্যাস করা দরকার। খবর বিডিনিউজের
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যার ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের প্রথম কেবিনেট মিটিংয়ে সারের দাম কমিয়ে দিলাম। প্রায় চার দফা আমরা কমিয়েছি। আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি।
কৃষক ও শ্রমিকের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির জনকের আজীবন সংগ্রামের কথা স্মরণ করে কৃষকের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
কৃষকের ন্যায্যমূল্যে উন্নতমানের বীজ পাওয়া নিশ্চিতে জাতির পিতা প্রতিষ্ঠিত বিএডিসি লাভজনক না বলে বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সব সময় সব কিছুতে লাভ লোকসান দেখলে চলে না। আমার দেশের মানুষ কতটুকু উপকার পাবে সেটাই আমাদের চিন্তার বিষয় হতে হবে।
যত্রতত্র শিল্প-কারখানা স্থাপন না করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। এটার অর্থ হল কোনো কৃষিজমি যেন নষ্ট না হয়। যেখানে সেখানে যত্রতত্র একটা ইন্ডাস্ট্রি এটা কেউ করতে পারবে না। যারা ইন্ডাস্ট্রি করতে চায় ওই ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের প্লট দেওয়া হবে এবং সব ধরনের সার্ভিস সেখানে দেওয়া হবে। সেখানেই তারা শিল্প করে তুলবে।
রপ্তানিতে কৃষি পণ্যের প্রাধান্য নিশ্চিত করার পরিকল্পনার পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রতিটি মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সামসুল হক রেজা, সর্বভারতীয় কিষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক অতুল কুমার অঞ্জন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক লীগের নেতৃত্বে সমীর-কুলসুম
কৃষক লীগের সভাপতি হয়েছেন সমীর চন্দ্র চন্দ; সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন উম্মে কুলসুম স্মৃতি। আওয়ামী লীগের কৃষক সংগঠনটির গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত দশম সম্মেলনে এই নেতৃত্ব গঠিত হয়। সকালে শেখ হাসিনা সম্মেলন উদ্বোধনের পর বিকালে কাউন্সিলে নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নতুন সভাপতি সমীর ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম দু’জনই আগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কৃষক লীগের আগের কমিটির সভাপতি ছিলেন মোতাহার হোসেন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক রেজা।
সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হয় সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। এরপর বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বসে কাউন্সিল অধিবেশন। কাউন্সিলে সভাপতি পদে ১৩ জন প্রার্থী হন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হন ১১ জন। তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে সমীর ও উম্মে কুলসুমের নাম ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। খবর বিডিনিউজের
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১৩ জন সভাপতি এবং ১১ জন সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করা হয়। এনিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা করে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করি, এই সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেবেন’। কাউন্সিলররা তাতে সমর্থন জানালে ওবায়দুল কাদের বলেন, নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগামী ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে।
নতুন সভাপতি সমীর চন্দ্র তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে গুরুদায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন, বাংলার কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে কৃষক লীগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে, একই সঙ্গে দলের কর্মসূচি সফল করতে দলীয় নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে কৃষক লীগ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে’।
নতুন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি আমাদের উপর আস্থা রেখে নতুন দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, সেই আস্থার প্রতিদান দিতে আমরা প্রস্তুত। সারা বাংলার কৃষকদের সংগঠিত করে আরও শক্তিশালী হবে কৃষক লীগ’।