কালো ধোঁয়ার শহর-১

139

ধাক্কাধাক্কি, সিটের জন্য লড়াই, সর্বক্ষণ সতর্কতায় থাকা এসব পাবলিক বাসের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এ সমস্যার সমাধান ঠিক কবে হবে, অথবা আদৌ হবে কিনা, সেটি কারও জানা নেই। বাবা অনেক্ষণ ধরেই মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাসে দাঁড়ানোর জায়গা তো আছে, কিন্তু বসার জায়গা নেই। মেয়েদের গাড়িতে তুললেই বসতে দিতে হবে- এই নীতিতো অটল বাসওয়ালারা! তাই বাবাকে বাসে উঠতে দিলেও মেয়েকে তুলতে সবাই নারাজ। যা হোক; একটি বাসের কন্ট্রাক্টর সদয় হলেন, ‘মহিলা সিট নাই, দাঁড়াই যেতে হবে।’
বাবা উঠতে চাইলেন না।
মেয়েটি বললো, ‘বাবা, সামনে খালি হয়ে যাবে। চলো। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।’
সৌভাগ্যবশত, পরের বাস স্টপেই একখানা সিট খালি হয়ে গেল। বাবা নিজে না বসে মেয়েকে বসিয়ে দিলেন। বাসটাতে আসলেই ভীড় ছিল। খুব ভীড়! ভীড়ের মধ্যে নারী, পুরুষ সবাই সমানে দাঁড়িয়ে। এমন ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে সবাই, একটু অসাবধান হলেই একজন আরেক জনের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
বাবা ফোনে কথা বলছিলেন, ‘হ্যাঁ, পরীক্ষা ভাল হয়েছে। কথা বলবে? ধরো দিচ্ছি। (মেয়েকে বললেন) নে, তোর মা।’
মেয়ে কথা বলছিল এক নাগাড়ে, ‘হ্যাঁ, সব কমন এসেছে। কিন্তু সব লিখতে পারি নি। সময় ছিল না। ঘড়িটা নিতে ভুলে গেছি। আর বারবার টাইম জিজ্ঞেস করতে গেলে টিচার বিরক্ত হয়। ওহ! এত জিজ্ঞেস করো না তো, এমনিতেই পরীক্ষা ভালো হয় নি। আচ্ছা শোন, তুমি আমার জন্য লেবুর শরবত করে রেখ……’
মেয়েটি বাকী কথা শেষ করতে পারলো না, কি একটা ঝামেলা হয়েছে বাসে। কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হচ্ছে।
‘কি হয়েছে বাবা?’
‘দেখ না, আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি, আর এই মহিলা কিসব বলছে।’
‘কিসব বলছে! আহা! এই বয়সী একটা মেয়ে থাকতে এই রকম লুই*** করতে লজ্জা করে না?’
‘আপনি ভুল করছেন। আমি এরকম কিছুই করি নি। এত ভীড়ের মধ্যে…’
‘এত ভীড়ের মধ্যে ভেবেছেন কে করেছে বুঝবে না?’
‘দেখে তো ভদ্রলোক মনে হয়!’
‘উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না, আমার মেয়ে আছে এখানে।’
‘মেয়ে আছে! হাত দেয়ার আগে মনে ছিল না! বাব-মেয়েকে এক সাথে বাস থেকে নামিয়ে দিলে উচিৎ শিক্ষা হবে!’
হতভম্ব মেয়েটার কি হলো কে জানে- অস্বাভাবিক চিৎকার শুরু করলো, ‘বাস থামান! থামান বাস! নামবো!’
কন্ট্রাক্টর বললো, ‘কাস্টমস আসে নাই এখনও!’
‘এখানেই নামবো, বাস থামান!’
বাস থামলো। মেয়ে বললো, ‘বাবা এসো।’
বাবা-মেয়ে নামছে- বাসের প্রত্যেকটা যাত্রী সেই দৃশ্য গিলছে।
বাস ছেড়ে দিতেই মেয়েটা চিৎকার করলো- ‘বেশ** মা**, আমার বাবা ওরকম না! তুই মর! মর তুই!’
বাবা এবার মেয়েকে শাসন করলেন, ‘দ্বীপা! চুপ কর! মানুষ কি বলবে?’
মেয়ে চুপ করতেই বললো, ‘আর বাস থেকে ওরকম হুট করে নামলি কেন? মহিলাটা আমায় ভুল বুঝেছে। উনার ভুল ভাঙানোর দরকার ছিল। এরকম নেমে গেলাম, সবাই তো ভাববে আমি সত্যিই অপরাধী।’
‘সরি বাবা।’
‘আর তোর মাকে এ সব বলার দরকার নেই, খামোখা কষ্ট পাবে।’
বাবার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে মেয়েটি রাস্তা পার হচ্ছিল। মেয়েটি বাবাকে ছুঁয়ে নীরবে প্রতিজ্ঞা নেয়। ভয়ঙ্কর প্রতিজ্ঞা…