কারাগারের ভেতরে ‘হামকা’ আলমের মাদকচক্রের সন্ধান

85

কারাগারের সুরক্ষিত ৩২ নম্বর সেলে অন্তরীণ শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরুল আলম (৩৫) ওরফে ‘হামকা’ আলমের তত্ত¡াবধানে শক্তিশালী মাদক চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। কারারক্ষী সাইফুল ইসলামকে কদমতলী ফ্লাইওভার থেকে গত শনিবার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিআরটিসির বয়লার কলোনির তালিকাভুক্ত মাদক বিক্রেতা আলো আক্তারসহ চক্রের আরও তিন সদস্যকে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা কোতোয়ালী থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কারাভ্যন্তরে সুরক্ষিত সেলে বসে সন্ত্রাসী হামকা আলমের রমরমা মাদকের কারবারের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ কারান্তরীণ হামকা আলমসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেছে।


কোতোয়ালী থানায় গতকাল রবিবার গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের কাছেও কারাভ্যন্তরে হামকা আলমের কাছে ইয়াবা ও গাঁজা সরবরাহের কথা অকপটে স্বীকার করেছে। এছাড়া, গ্রেপ্তার কারারক্ষী সাইফুলের সাথে কারান্তরীণ সন্ত্রাসী হামকা আলমের মোবাইল ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ডও সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ওই কথোপকথনে হামকা আলম বাইরে থেকে মাদক সংগ্রহ ও সরবরাহের জন্য সাইফুলকে নির্দেশনা দিতে শোনা যায়। গ্রেপ্তার আরেক আসামি এনায়েতবাজার বাটালি রোডের দিদারুল আলম মাসুম ওরফে আবু তাহের মাসুম জানিয়েছেন, তাকে মোবাইলে ফোন করে হামকা আলম ইয়াবাগুলো কারারক্ষী সাইফুল ইসলামকে দেয়ার জন্য বলেছেন। এর আগে আরও এক দফা ৫০ পিস ইয়াবা তিনি কারারক্ষী সাইফুলকে দিয়েছিলেন। কারাগারে আটক থাকাবস্থায় হামকা আলমের সাথে তার পরিচয় এবং বেরিয়ে ইয়াবা সরবরাহের ‘সন্ধি’ হওয়ার কথাও মাসুম পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানার এসআই আব্দুর রব বাদী হয়ে হামকা আলমসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মো. মহসীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘সন্ত্রাসী হামকা আলম এ চক্রের মাধ্যমে কারাভ্যন্তরে মাদকের কারবার পরিচালনা করছে। এ মামলায় তাকে শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। অনুমতি পেলে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মাদক চক্রের সাথে কারাগারের ভেতরে-বাইরের আর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য জানা সম্ভব হবে।’
ওসি তার দপ্তরে সাংবাদিকদের জানান, কারারক্ষী সাইফুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, হামকা আলমের সাথে মোবাইলে কথা হওয়ার পর বিআরটিসি মোড়ে বয়লার কলোনির আলো আক্তারের কাছ থেকে মাসুম ওইদিন সকালে ৫০ টি ইয়াবা সংগ্রহ করেন। দুপুরে বিআরটিসি মোড়ে গিয়ে কারারক্ষী সাইফুল ইয়াবাগুলো মাসুমের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। এরপর হালিশহর কাঁচাবাজার এলাকায় একজনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন তিনি। ৫০টি ইয়াবার মধ্যে যার সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলেন, তাকে দশটি দিয়ে দু’হাজার টাকা নেয়ার কথা ছিল। বাকি ৪০টি ইয়াবা কারান্তরীণ হামকা আলমকেই সরবরাহ করতেন। অন্যদিকে, কারাগারে আটক থাকাবস্থায় মাসুমের সাথে হামকা আলমের পরিচয়। সেই সূত্রে মাসুম মুক্তি পাওয়ার পর থেকে কারাগারে থাকা সন্ত্রাসী হামকা আলমকে নিয়মিত ইয়াবা সরবরাহ করতেন। কারারক্ষী সাইফুল ইসলামের মাধ্যমেই তাদের এই কারবার পরিচালিত হত।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আজিজুল ইসলাম ওরফে জালাল নামে আরেকজন পুলিশকে জানিয়েছে, এক বন্ধুর মাধ্যমে হামকা আলমের সঙ্গে তার পরিচয়। হামকা আলম তাকে মোবাইলে কল করে গাঁজা পাঠানোর কথা বলেছিলেন। মাদক বিক্রেতা আলোর কাছ থেকে গাঁজা নিয়ে তিনি কারারক্ষী সাইফুলের অপেক্ষায় ছিলেন। তার কাছ থেকে গাঁজাগুলো নিয়ে সাইফুল কারাভ্যন্তরে হামকা আলমের কাছে পৌঁছে দিতেন।
তবে, কারা কর্তৃপক্ষ কারাভ্যন্তরে কোনও ধরণের মাদকের কারবারের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। কারারক্ষী সাইফুলের ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনার সাথে কারাগারের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও কারা কর্তৃপক্ষের দাবি।
এর আগে গত ১৫ জুন দুপুরে কোতোয়ালী থানা পুলিশ কদমতলী ফ্লাইওভার থেকে ৫০ টি ইয়াবাসহ কারারক্ষী সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ওইদিন দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে একে একে ৩৫ নম্বর বাটালী রোডের আব্দুস সোবহানের বাড়ির আবুল বাশরের ছেলে দিদারুল আলম মাসুম ওরফে আবু তাহের মাসুম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সিদ্দিক আলীর ছেলে আজিজুল ইসলাম জালাল ও বিআরটিসি বয়লার কলোনির আবদুল জলিলের মেয়ে আলো আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল রবিবার তাদের সবাইকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত বছর গ্রেপ্তার হওয়া নিজাম উদ্দিন নামে এক ছিনতাইকারী আদালতে প্রদত্ত জবানবন্দিতে জানিয়েছিল, কয়েকবছর আগে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরুল আলম ওরফে হামকা আলম কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩২ নম্বর সেলের ৩ নম্বর কক্ষে অন্তরীণ আছেন। সেখানে থেকে তিনি কারাগারের ভেতর এবং বাইরে ইয়াবা ও গাঁজা কেনাবেচা করে আসছিলেন। তার সহযোগীদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে হামকা আলমের।
নগর পুলিশের খাতায় বিভিন্ন আইনে দায়ের হওয়া ২১ মামলার আসামি নুরুল আলম ওরফে হামকা আলম নগরীর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও ‘হামকা গ্রæপ’ নামে একটি ছিনতাইকারী চক্রের প্রধান। ২০১১ সালের ২০ মে নগরীর রুবি গেট এলাকা থেকে দুটি অস্ত্র ও গুলিসহ নুরুল আলম ওরফে হামকা আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ২০১৩ সালের পয়লা নভেম্বর জামিনে মুক্তি পেলে কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক থেকে তাকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ফের গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘ সময় বন্দী থাকা নুরুল আলম কারাগারভিত্তিক মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে।