আগুন ঝরা ফাগুন

33

বাংলার দামাল ছেলেরা মায়ের ভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন, অধিকার আদায় করেছেন-বায়ান্নর সেই চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে ঠিক ৯ বছর পর ভারতের আসাম প্রদেশের বরাক উপত্যকায় রচিত হয় আরেক গৌরবের ইতিহাস। বায়ান্নর মতো বাঙালির মায়ের ভাষার অধিকার অর্জনের এ ইতিহাসও রক্তভেজা।
১৯৬১ সালের ১৯ মে। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার অর্জনে ‘জান দেব,
জবান দেব না’ স্লোগানে ফেটে পড়েছিলেন আসামের বাঙালিরা। ভাষার অধিকার আদায়ের সেই আন্দোলনে ওই দিন আসামের শিলচর রেলস্টেশনে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন ১১ জন বাঙালি তরুণ-তরুণী। এর পরই দাবি মানতে বাধ্য হয় আসাম রাজ্য সরকার। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আজ আসামের দ্বিতীয় রাজ্যভাষা বাংলা। পাশাপাশি আসামের বরাক উপত্যকার প্রধান সরকারি ভাষাও বাংলা। আর সেই দিনটিকে স্মরণ করে গোটা ভারতে ১৯ মে পালিত হয় ‘জাতীয় মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে।
আসামের গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক ও লেখক-গবেষক সুশান্ত কর বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল আসামের বাঙালিদের। মূলত বায়ান্নর চেতনা ধরেই আসামেও বাংলার অধিকার অর্জন হয়েছে। গোটা বাঙালি জাতির জন্য এ এক গৌরবান্বিত ইতিহাস। শিলচরের যে রেলস্টেশনে ১১ বাঙালি আত্মদান করেন, ইতিমধ্যে সেই মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওই রেলস্টেশনের নাম ভাষাশহীদ স্টেশন করেছে ভারত সরকার।’
ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’-এর অন্তর্ভুক্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে মূলত বহুভাষী জনগোষ্ঠীর বসবাস। প্রধান সরকারি ভাষা অসমিয়া। অন্যান্য ভাষার তুলনায় অসমিয়া জনগোষ্ঠী ছিল সংখ্যালঘু। তার পরও ওই ভাষাকেই করা হয়েছিল রাজ্যভাষা। এ কারণে শুরু হয় আন্দোলন।
প্রতিবছরের বরাক উপত্যকায় নানামাত্রিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার অধিকার দাবিতে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রূয়ারিতেও ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্থানীয় শহীদ মিনারগুলোতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়।