অভিভাবকদের সচেতন ও কঠোর আইন জরুরি

51

তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে বৈশ্বিক কালচারের সাথে বাংলাদেশও যুক্ত হয়েছে বহুদিন আগে। সভ্যতার বিকাশমান ধারায় পিছিয়ে থাকবে এমনটি ভাবনার মানুষ আজকাল খুব একটা পাওয়া দায়। বলা হচ্ছে যে যত বেশি তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে পারবে, সে তত বেশি বিশ্বকে আয়ত্ত করতে পারবে, অজানাকে জানতে পারবে, জ্ঞানের মহাসমুদ্রে প্রবেশ করতে পারবে। কিন্তু এতসব ভালো কথা, চিন্তা ও স্বপ্নের মধ্যেও আমাদের ভবিস্যত প্রজন্ম অনলাইনের সুবাদে খারাপ ও মন্দের দরজায় গিয়ে ভয়ানকভাবে নক করার ঘটনা সব ভালোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তা সম্প্রতি জাতি সংঘের একটি সহযোগী সংস্থার এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক জরিপে বলা হয়েছে বাংলাদেশে অন্তত ৩২ শতাংশ শিশু অনলাইনে পীড়নের শিকার। সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশের শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা’ শীর্ষক জরিপটিতে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১ হাজার ২৮১ শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়- যাদের ৩২ শতাংশ নানাভাবে সহিংসতা, উৎপীড়ন ও ভয়ভীতির শিকার হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় হুমকি পর্নোগ্রাফি।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একমত হয়ে বলা যায়, কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই শিশু পর্নোগ্রাফি মানবসভ্যতার জন্য, বিশেষত শিশুদের নিরাপদে বেড়ে ওঠার জন্য হুমকিস্বরূপ। কাজেই সরকারের উচিত এ থেকে শিশুদের রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। তবে কেবল সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই হবে না, অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কারণ জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ২৫ শতাংশ শিশু ১১ বছর বয়সেই ডিজিটাল জগতে প্রবেশ করে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এ বয়সের শিশুদের ভালোমন্দ পার্থক্য করার বোধ তৈরি না হওয়ার কারণে তারা যে কোনো ধরনের লোভে পড়ে নিজেদের হুমকির মুখে ফেলতে পারে, এমনকি নিজের অজান্তে অভিভাবক ও আত্মীয়স্বজনদের জন্যও তৈরি করতে পারে ফাঁদ। এমন নজির বিভিন্ন সময় দেখা গেছে। সুতরাং শিশুদের ডিজিটাল জগতে প্রবেশের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।
উদ্বেগের বিষয় হল, অনলাইনে ৭০ শতাংশ শিশুই অপরিচিতদের বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করে এবং ১৪ শতাংশ অপরিচিতদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পরপর দেখা করতেও যায়। এতে করে তাদের জীবনে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। শুধু তাই নয়, জঙ্গি মতাদর্শের মতো গুরুতর বিষয়েও শিশুদের জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। শিশুরা নানা ক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হওয়ার পাশাপাশি অহেতুক জিম্মি হয়ে প্রাণঘাতীমূলক পরিস্থিতিতে পড়ছে অহরহ।
পিতামাতার সঙ্গে শত্রুতার অজুহাত তোলা হচ্ছে তাদের অবুঝ শিশুকে অপহরণ ও হত্যা করে।
এ অবস্থায় শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ও অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, সরকারের সুরক্ষা নীতিমালা, কঠোর ডিজিটাল ও পর্নোগ্রাফি আইন এবং অভিভাবকদের সচেতনতাই পারে শিশুদের রক্ষাকবচ হতে। পিতা-মাতার কাছে সন্তান জীবনের সবচেয়ে দামি সম্পদ। সে কী করছে- বাস্তব জীবনে ও অনলাইনে কাদের সঙ্গে মিশছে- এসব পর্যবেক্ষণ করা এবং সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেয়ার মাধ্যমেই তাদের জীবন নিরাপদ করা যেতে পারে।