মুম্বাইয়ের বস্তির ‘অর্ধেকেরও বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছিলেন’

44

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের তিনটি এলাকার বস্তির অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দার দেহে করোনাভাইরাসের এন্টিবডি সৃষ্টি হয়েছে বলে নতুন এক জরিপে ধারণা পাওয়া গেছে। অথচ একই এলাকাগুলোতে বস্তির বাইরে বসবাসরতদের মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ সংক্রমণের সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে। জুলাইয়ের শুরুতে মুম্বাইয়ের তিনটি জনবহুল এলাকার সাত হাজার মানুষের দেহে পরীক্ষা চালিয়ে এ ফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মঙ্গলবার পর্যন্ত মুম্বাইয়ে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজার পেরিয়ে গেছে, মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮৭ জনের। শহর কর্তৃপক্ষ, সরকারি থিঙ্কট্যাঙ্ক নীতি আয়োগ ও টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের (টিআইএফআর) করা এ জরিপে চেম্বুর, মাতুঙ্গা ও দাহিসারের বস্তিগুলোর ৫৭ শতাংশ বাসিন্দাই নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে দেখা গেছে। শহরের পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের এ তিনটি এলাকায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাস।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনাভাইরাসে ভারতের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম মুম্বাইয়ে সংক্রমণের বিস্তৃতির বেশ কয়েকটি দিক তুলে ধরেছে গবেষণার এ ফল। গবেষণার ফলে দেখা যাচ্ছে, ভারতের এ বাণিজ্যিক রাজধানীর বস্তিগুলোতে ভাইরাসের বিস্তার আগে করা ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। মুম্বাইয়ের সোয়া কোটি বাসিন্দার অর্ধেকেরও বেশি বিভিন্ন বস্তিতে থাকেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নমুনা হিসেবে যে সাত হাজারের মতো পরীক্ষা হয়েছে তা ‘পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে শক্তিশালী’ এবং প্রতিনিধিত্বশীল। “যে তিনটি এলাকা আমরা বেছে নিয়েছিলাম সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় তারতম্য ছিল। এসব এলাকায় বস্তি, একক বাড়ি ও হাউজিং কমপ্লেক্সের সংমিশ্রণও আছে,” বলেছেন টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের (টিআইএফআর) ড. উল্লাস এস কলথুর। মুম্বাইয়ের বস্তিগুলোতে সংক্রমণের এমন উচ্চহারের পেছনে সেখানকার বাসিন্দাদের নিজেদের মধ্যে শৌচাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাগাভাগির মতো বিষয়গুলো অংশত দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে। “ভিড় কীভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে মূল ভূমিকা পালন করে ফলাফল তা দেখাচ্ছে,” বলেছেন টিআইএফআরের সন্দীপ জুনেজা।
গবেষণায় দেখা গেছে, বস্তির বাসিন্দাদের মধ্যে যারা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের বড় অংশেরই হয় কোনো উপসর্গ ছিল না, নয়তো মৃদু উপসর্গ ছিল। আক্রান্ত অনুপাতে মৃত্যুর হারও অনেক কম দেখা গেছে। এসব এলাকায় প্রতি এক বা দুই হাজার আক্রান্তের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে, যা মুম্বাইয়ে শনাক্ত রোগীর অনুপাতে মৃত্যুর চেয়েও কম। তিনটি এলাকায় থাকা বস্তি এবং বস্তির বাইরের পুরুষ বাসিন্দাদের তুলনায় নারীদের মধ্যেই বেশি আক্রান্তের দেখা মিলেছে। “এটা খুবই কৌতুহলোদ্দীপক। আমরা কারণ জানি না। সামাজিক আচরণ থেকে শুরু করে শারীরবৃত্তীয় পার্থক্য, যে কোনো কিছু হতে পারে,” বলেছেন ড. কোলথুর।
মুম্বাইয়ে এখন দৈনিক শনাক্তের পরিমাণ কমে আসায় শহরটি ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জনের পথে রয়েছে কিনা গবেষণায় সে প্রশ্নটিও এসেছিল। মঙ্গলবার মুম্বাইয়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ৭১৭ নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। “গবেষকরা এখনও এ ব্যাপারে অন্ধকারে। যেমন, আমরা এখনও জানি না সংক্রমণের ক্ষেত্রে এ রোগপ্রতিরোধ কত সময় পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। বারবার পরীক্ষার মাধ্যমেই আমরা এর জবাব পেতে পারি,” বলেছেন কোলথুর।