খালেদ মনছুর, আনোয়ারা
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন টানেলের দ্বিতীয় টিউবের কাজ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে। এখন টানেলের উভয় টিউবে লেন স্লাব নির্মাণ কাজ চলছে। বর্তমানে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী প্রকল্পের কর্মকর্তারা। তবে ঠিকাদারদের পেমেন্টসহ অন্যান্য কাজ সম্পাদনের জন্য আরো ছয় মাস মেয়াদ বৃদ্ধি করতে সেতু বিভাগে আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে কর্ণফুলী টানেলের পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা প্রান্তের সংযোগ সড়কের কাজও এখন শেষের দিকে। উভয় প্রান্তে মোট ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের মধ্যে আনোয়ারা প্রান্তেই রয়েছে ৪ কিলোমিটার। চার লেনের এই সংযোগ সড়কের এক পাশের কাজ শেষ। অপর পাশের কাজও শেষ হবে আগামী মাসের মধ্যেই। টানেলের মূল অংশ পতেঙ্গা বিমানবন্দর এলাকা দিয়ে ঢুকে আনোয়ারার কাফকো ইন্ডাস্ট্রি এলাকায় বের হবে। মাঝখানে সিইউএফএলের সার সরবরাহের ব্যারেল থাকায় টানেলের মুখ থেকে জালিয়াঘাটা পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭২৭ মিটার ফ্লাইওভারের কাজও শেষ। ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে নৌবাহিনীর চেকপোস্ট। ফ্লাইওভারের ঠিক নিচে নির্মাণ করা হচ্ছে টোল প্লাজা। টোল প্লাজার পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য কয়েকটি বহুতল ভবন। পাশাপাশি চলছে সড়কের পাশের ড্রেন নির্মাণ ও ডিভাইডারের কাজ।
সওজ সূত্র জানায়, টানেলের সংযোগ সড়কটি আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনী বাজারের দক্ষিণে পিএবি সড়কের ছয় লেনের সাথে সংযুক্ত হবে। সেখান থেকে শিকলবাহা ক্রসিং এবং পটিয়া হয়ে কক্সবাজারে চলে যাবে টানেলের ভেতর দিয়ে আসা যানবাহন। এজন্য পিএবি সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের পাশাপাশি শিকলবাহা ক্রসিং-পটিয়া সড়ক প্রশস্তকরণ এবং বাঁক সোজাকরণের কাজ চলছে। কিছু কিছু যানবাহন আনোয়ারা-চন্দনাইশ ও বাশঁখালী হয়ে কক্সবাজারে যেতে পারবে। তবে প্রধান রুট হবে শিকলবাহা ক্রসিং-পটিয়া হয়ে কক্সবাজার।
এদিকে কর্ণফুলী টানেলের যানবাহনের চাপ সামাল দিতে পিএবি সড়কের ক্রসিং ওয়াইজংশন থেকে কালাবিবির দীঘির মোড় পর্যন্ত ৮.১০ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেন এবং কালাবিবির দীঘির মোড় থেকে আনোয়ারা সদর পর্যন্ত ২.৪০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। প্রায় ৩৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি বাস্তবায়ন করছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এরমধ্যে ১০০ কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণ এবং অন্যান্য খরচ। বাকি টাকা সড়ক নির্মাণে ব্যয় করা হবে। সড়কের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই)।
এনডিইর প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ আব্দুল হান্নান জানান, ইতিমধ্যে পিএবি সড়কের ছয় লেনের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১৫টি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। একপ্রান্তে তিন কিলোমিটার যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। আগামী মাসে এক পাশের পুরো ৮ কিলোমিটার উন্মুক্ত করা হবে। আশা করি আমরা চলতি বছরের ডিসেম্বরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারব।
সওজের দোহাজারী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, কর্ণফুলী টানেল দিয়ে আসা যানবাহনগুলোকে আমরা মূলত ফ্রিভাবে চট্টগ্রামে প্রবেশের ব্যবস্থা করছি। পাশাপাশি শিকলবাহা ক্রসিং হয়ে কক্সবাজার যাবে। এজন্য আমরা ক্রসিং থেকে পটিয়া পর্যন্ত সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুটে উন্নীত করছি। সেসাথে অতিরিক্ত বাঁকগুলো সোজা করার কাজও চলছে।
কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ বলেন, টানেলের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখনো অনেক কাজ আছে। বাকি কাজগুলো আমরা দ্রততার সাথে শেষ করার চেষ্টা করছি। উভয় পাশের সংযোগ সড়কের কাজও আমারা সমানতালে এগিয়ে নিচ্ছি। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবকিছু শেষ করতে পারব।