এত দীর্ঘ তাপপ্রবাহ আগে দেখা যায়নি

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চলমান তাপপ্রবাহকে ইতিহাসের দীর্ঘতম তাপপ্রবাহ বলছেন আবহাওয়াবিদরা। গত ৩১ মার্চ থেকে শুরু হয়ে এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। মাঝারি বা তীব্র থেকে এটি কখনও কখনও অতি তীব্র আকার ধারণ করছে। তাপপ্রবাহের এতটা ব্যাপ্তি আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ। চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতেও তাপপ্রবাহ কমবেশি অব্যাহত থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ। এর আগে গত বছরও এপ্রিল মাসে টানা ১৯ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। কোথাও কোথাও তা অতি তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এবার সেটা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। উষ্ণতম মাস এপ্রিলের চলমান তাপপ্রবাহের এ ব্যাপ্তিকালকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন আবহাওয়াবিদরা। এর আগে এ মাসে এতো দীর্ঘমেয়াদে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার রেকর্ড নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।
আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত ১৬ মার্চ সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও কক্সবাজার জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ১৯ মার্চ থেকে তা প্রশমিত হয়ে যায়। পরে ৩১ মার্চ ফের রাজশাহী ও পাবনা জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। সেই তাপপ্রবাহ এখনও অব্যাহত রয়েছে। সে হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশের ওপর দিয়ে টানা ২৬ দিন ধরে তাপপ্রবাহ বইছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, কোনো বিস্তৃত এলাকাজুড়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি থাকলে মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি থাকলে মাঝারি ও ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। গত ২০ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে। এটিই চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড। ওইদিন দিনের তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৪ ও পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক দিনে কিছুটা কমার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ফের যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দিনের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এ দুটি অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা তাপদাহে সিলেট ছাড়া মোটামুটি দেশজুড়েই জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন স্থানে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তীব্র গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি। শ্রমজীবী মানুষের উপার্জন কমছে। এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, মার্চের শেষ দিকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সেটি কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই অব্যাহত রয়েছে। চলতি এপ্রিলের বাকি দিনগুলোতেও তাপপ্রবাহে বিরতি আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এটি আগামি মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্তও এভাবে অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর হয়তো হালকা কিছু বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে টানা তাপপ্রবাহ ছিল না। কিছু বিরতি ছিল। গত বছর টানা ১৯ দিন তাপপ্রবাহ দেখেছি। এবার পুরো এপ্রিল মাস গড়িয়ে যাবে মনে হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্য মতে এর আগে এতো দীর্ঘমেয়াদে কখনও তাপপ্রবাহ বয়ে যায়নি। একটানা এতোদিনের তাপপ্রবাহ, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম। এরই মধ্যে এটি সব রেকর্ড ভেঙেছে। কিন্তু এটি তো আরও চলবে। কমপক্ষে আগামি আরও চার-পাঁচ দিন তো থাকছেই।
চলতি মাসের শুরু থেকেই তাপপ্রবাহ বইছে, তবে মাঝখানে কোথাও কোথাও কিছুটা কমে গিয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গায় টানা ২৩ তিন মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গিয়েছিল। এরপর এ বছরই সর্বোচ্চ ব্যাপ্তিকালের তাপপ্রবাহ চলছে। আলাদা করে এপ্রিল মাসে এত দীর্ঘসময় ধরে তাপপ্রবাহ সচরাচর হয় না।