৫ বছরে ঝরেছে ১০ প্রাণ

14

আবারও শ্রমিকদের তাজা রক্তে ভাসল বাঁশখালীর গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। কর্তৃপক্ষের তরফে বিভিন্ন দাবি পূরণ না করার জেরে শ্রমিক-পুলিশ বিবাদ হয়। সেই বিবাদের কারণে গতকাল শনিবার সকালে শ্রমিক-পুলিশ সংঘাত হল। একেবারে রক্তক্ষয়ী সংঘাত। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ গেছে ৬ শ্রমিকের। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এস আলম গ্রূপের মালিকানাধীন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে রক্তাক্ত সংঘাত এবারই প্রথম নয়। এ নিয়ে তিন দফায় বড় ধরনের হাঙ্গামা হয়েছে গন্ডামারায়। এতে প্রাণ গেছে শ্রমিক ও এলাকার লোকজন মিলে ১০ জনের।
প্রথম সংঘাত : ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকে ঘিরে সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। পুলিশ, আনসার ও গ্রামবাসীসহ আহত হয়েছেন ৫০ জন। নিহতরা হলেন, দুই ভাই মর্তুজা আলী (৫২) ও আঙ্গুর আলী (৪৫), জাকের আহমেদ (৩৫), বাদশা মিয়া ও বদিউল আলম। প্রায় ৬০০ একর জমিতে এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে এস আলম গ্রূপ। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন শুরু করেন স্থানীয়রা। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে এলাকাবাসী সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সেসময় পুলিশ গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান চারজন। পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অনেকে।
দ্বিতীয় সংঘাত : ২০১৭ সালের ২ ফেব্রূয়ারি এস আলম গ্রূপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা চলাকালে স্থানীয়দের দুইপক্ষে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে নিহত হন স্থানীয় মো. আলী (৩৫)। এসময় আহত হন অন্তত ১৬ জন। সেদিন দুপুর ১টার দিকে আভাইত্যাঘোনা এলাকায় এস আলম গ্রæপের বিদ্যুৎ প্রকল্প অফিসের সামনে এ সংঘর্ষ হয়। এ নিয়ে হত্যা মামলা হওয়ার পর স্থানীয় বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়া হয় আদালতে। বর্তমান বিচারকাজ থমকে আছে।
তৃতীয় সংঘাত : গতকাল শনিবার ঘটল সর্বশেষ সংঘাতের ঘটনা। এতে পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন ৫ জন। তারা হলেন- গন্ডামারা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ঘোনার গ্রামের মরহুম মাওলানা মো. আবু ছিদ্দিকের ছেলে হাফেজ মোহাম্মদ আহমদ রেজা মীরহান (১৮), অলি উল্লাহর ছেলে রনি হোসেন (২২), নুরুজ্জামানের ছেলে শুভ (২৪), দানু মিয়ার ছেলে মো. রাহাত (২২) ও রায়হান (২৬)। নিহতদের একজন ছাড়া বাকিরা চট্টগ্রামের বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে এসে প্রকল্পে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, এস আলম গ্রূপের মালিকানাধীন এ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বারবার কেন প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে? বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া পূরণে কর্তৃপক্ষের গড়িমসির প্রতিবাদ করতে গিয়ে কখনো পুলিশের গুলিতে আবার কখনো স্থানীয় পক্ষগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বের বলি হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী জানান, ‘এ প্রজেক্ট দেশ ও মানুষের উন্নয়নে করা হয়নি। কারণ এখন উন্নত বিশ্ব তো বটেই। ভারত, চীনও কয়লা নির্ভর কোনো বিদ্যুৎ প্রকল্প করছে না। মূলত চীনের কয়লাগুলো এখানে ব্যবহার করার জন্য এগুলো করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রাণ দিচ্ছে। তারা তো অসহায়। তারা যাবে কোথায়? রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে তারা তো অসহায়।
পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে নিরীহ শ্রমিকদের উপর গুলি চালিয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, পুলিশ বিক্ষোভরত শ্রমিকদের লাঠিপেটা করতে পারত। তা না করে তারা তো শ্রমিকদের উপর গুলিই চালিয়ে দিল। শ্রমিকদের জীবনের মূল্য তাদের কাছে নেই।’ এখানে ‘সূর্যের চাইতে বালির তাপ বেশি’।