সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সকল পক্ষকে দায়িত্বশীলতা ও ধৈর্য্যরে পরিচয় দিতে হবে

22

 

দেশের সড়কসমূহে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। বেপরোয়া গাড়ির গতি অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়Ñ বিগত ২০ মে এক দিনে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ অসংখ্য মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। এ নিয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে শুরু করে বিচিত্র প্রতিবাদ হয়েছে দেশে। কিন্তু সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামেনি। সড়ক দুর্ঘটনার বহু কারণ রয়েছে। তৎমধ্যে বেপরোয়া গাড়ির গতি, চালকদের ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, গাড়ির যান্ত্রিক ত্রæটি, ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালানো, চালকের অদক্ষতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাক ও কার্গোর অবিবেচক গতি, দূর্পাল্লার গাড়ির বেপরোয়া গতি, সিএনজি অটোরিক্সার ধৈর্য্যহীন পদক্ষেপ, মটর সাইকেল যাত্রীর বৈমানিক গতিই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। গাড়িতে লিখা থাকে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি। কিন্তু গাড়িগুলোর চালকরা বিভিন্নভাবে অহেতুক সময় নষ্ট করতে দেখা যায়। কিন্তু কখনো কখনো সময় বাঁচাতে এতই অবিবেচনা প্রসূত গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয় যে, যার কারণে এক পর্যায়ে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। সমগ্র দেশের ছোট বড় সড়কগুলোতে একটি অসম প্রতিয়োগিতা চলে। যে যে গাড়ি চালাক না কেন সবাই আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় মত্ত। এটা করতে গিয়ে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন হয় অহরহ।
ভারি যানবাহন এবং মালবাহী গাড়িগুলো যেমন বেপরোয়াভাবে চলে তেমনি রিক্সা, অটোরিক্সা, সিএনজি অটোরিক্সা এবং মটরবাইক চালকরা তাদের সীমাবদ্ধতা ভুলে গিয়ে সড়কে দ্রæত যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নিত্য অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। যার ফলে ছোট গাড়ির যাত্রীদের বেশিরভাগ মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়। যাত্রীর গোলযোগ এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ছাড়া বড় গাড়ির যাত্রীরা দুর্ঘটনায় তেমন অধিক পরিমাণে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে দেখা যায় না। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদনে একদিনে যে ৭ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তাতে ৩ জন মটর বাইক চালাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। মটরবাইক চালকদের মধ্যে অনেকে হেলমেট পর্যন্ত ব্যবহার করে না। অধিকাংশ মোটরবাইক যাত্রী যেমন খুশি গতিতে গাড়ি চালায়। আর ট্রাক, বাস, কার্গো ইত্যাদি ভারি যানবাহন তোয়াক্কা না করে যেভাবে পড়িমরি গাড়ি চালিয়ে মোটরবাইক যাত্রী মারা যাচ্ছে তা খুবই দুঃখ জনক। দেশে বহু সড়ক নানা রকম অসুস্থতায় ভোগছে। খানাখন্দকে ভরা বহু সড়কের গতির অসমতাকে নিয়ন্ত্রণ না করে বহু গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। একদিকে সড়কের সমস্যা, অন্যদিকে অহেতুক কার আগে কে যাবে এমন একটি অসম প্রতিযোগিতায় সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে। যে কারণে সাধারণ মানুষ সড়কে বের হতেও ভয় পাচ্ছে। দেশের সড়ক সমূহের দুর্ঘটনার সংখ্যা যে পরিমাণ বেড়ে গেছে তাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কেউ সড়কে বের হয়ে বাড়িতে ফেরার ভরসা হারিয়ে ফেলছে। যান্ত্রিক ত্রুটি মুক্তরেখে ধৈর্য্যরে সাথে ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে যেতে বাধ্য।
সড়কে গাড়ি চালানোর যে বিধিবিধান কিংবা আইন রয়েছে তা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টায় অহরহ লঙ্ঘিত হচ্ছে। ফলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। দেশের সড়কগুলোর দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বিদেশের মতো সড়কে আইন লঙ্ঘনকারীদের সনাক্ত করার আধুনিক ব্যবস্থা প্রয়োজন। দুর্ঘটনা হোক বা না হোক আইন লঙ্ঘনকারীকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে। বিদেশে অত্যাধুনিক সড়ক আইন মানার প্রযুক্তিগত পরিবেশ থাকায় অনেক দেশে আমাদের দেশের মতো সড়ক দুর্ঘটনা হয় না। বিজ্ঞান প্রযুক্তির এ যুগে আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানো এবং সড়ক আইন অমান্যকারীদের শাস্তির আওতায় আনার প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা এক প্রকার নেই বললেই চলে। সর্বোপরি সড়কে ছোটবড় গাড়ি চালকদের ধৈর্য্যরে সাথে যাতায়াত খুবই জরুরি। আমরা চাই আমাদের সড়কে গাড়িগুলো দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছুক। কিন্তু দুর্ঘটনার কবলে পড়ুক তা আমরা চাই না। জীবন রক্ষাকারী দ্রুত ও নিশ্চিত দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক ব্যবস্থা দেশে গড়ে ওঠুক এটাই আমাদের কাম্য।