সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু রোধে যানবাহন আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি

10

সম্প্রতি এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় ২০২২ সালে সড়কে ৭ হাজার ৭১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১২ হাজার ৬১৫জন। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদনে বিষয়টি বিস্তারিত উঠে এসেছে। সড়ক দুর্ঘটনা একটি জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যার দ্রæত সমাধান প্রয়োজন। আমরা জানি দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই, যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু সড়ক আইন লঙ্ঘনের কারণে যদি দুর্ঘটনা হয় এবং দুর্ঘটনায় দুষী পক্ষের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না হয়, তা হলে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসবে না। সড়কে সাধারণ মানুষ ছাড়াও দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরও অকাল মৃত্যু ঘটতে দেখা যায়। দুর্ঘটনার মৃত্যুতে সকল পক্ষকে আমরা সমগুরুত্বের সাথে বিশ্লেষণ করি। কেন সড়কে নারী, শিশুসহ সব ধরনের মানুষের অকাল মৃত্যু হবে ? ২০২২ সালের পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু মহমারির মতো আকার ধারণ করেছে, যা জাতির কাম্য নয়। সড়কে প্রাণহানিকে কেন্দ্র করে দেশে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনও হয়েছে। এর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। তারপর নতুন সড়ক আইন প্রণিত হয়। যার বিধি গেজেট আকারে প্রকাশ পেতে বিলম্ব হয়। বর্তমানে সড়ক আইনের নীতিমালা নিয়ে জটিলতা নেই। এখন সমস্যা দ্রæত আইনের যথাযথ প্রয়োগ। আইনে উল্লেখ রয়েছে বাস, ট্রাক, মিনিবাস, ইত্যাদি যানবাহনে ২০ বছরের কম বয়সের ব্যক্তি চালক কিংবা কন্টাক্টর-হেলপার ইত্যাদি হতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে সড়কে যে সকল যানবাহন চলাচল করে সকল যানবাহনের ক্ষেত্রে একই নিয়ম বাস্তবায়ন করা জরুরি। বাস, মিনিবাস, লেগুনা ইত্যাদি ছাড়াও বেটারিচালিত রিক্সা, অটোরিক্সা, ইত্যাদি গাড়ির সংখ্যা সড়কে প্রচুর পরিমাণে চলাচল করে। সরকারি হিসাবের বাইরে অসংখ্য এ জাতীয় ছোট আকারের গাড়ি সড়ক, মহাসড়কে চলাচল করে। এজাতীয় গাড়ির তিন চতুর্থাংশের চালকের লাইসেন্স, ফিটনেস সার্টিফিকেট, গাড়ির নাম্বার প্লেইট কিছুই নাই। বিশ বছরের কম বয়সী বহু কিশোর এসব গাড়ি চালাতে দেখা যায়। বেটারি রিক্সা, অটোরিক্সার সংখ্যা সড়কে এত বেশি যে, এসকল গাড়ির দায়িত্ব জ্ঞানহীন চালনার ফলে বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। সারা দেশে যে সকল বেটারি রিক্সা, অটোরিক্সা চলে তার অধিকাংশ সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চলতে দেখা যায়। একদিকে অনুমোদনহীন গাড়ি পরিচালনা দুর্ঘটনা বাড়িয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে সরকারি রাজস্ব আয়কে ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে একটি শ্রেণি। আর তারা অনুমোদিত এই কাজ প্রতিনিয়ত কোন রকম বাধা ছাড়াই করে যাচ্ছে, তার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও সদস্য দায়ি। শুধু অননুমোদিত অটোরিক্সা হতে দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তৎসংশ্লিষ্ট একটি শ্রেণি কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছে। অথচ সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সড়ক পথের উন্নয়ন করার পরও সড়ক হতে আশানুরূপ রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর অসাধু সদস্যদের এহেন কার্যক্রম থামানোর কোন পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আছে বলে মনে হয় না। অনিয়ম অনিয়মকে উসকিয়ে দেয়। যে কারণে দেশের কোন আইনের যথার্থ প্রয়োগ দেখা যায় না। ফলে অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘন সংশ্লিষ্টদের স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে। এধরনের অবস্থা হতে দেশের যানবাহন মালিক, শ্রমিক ও তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সড়ক আইন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। পরিকল্পিত ভাবে সড়ক মহাসড়ককে দুর্ঘটনামুক্ত রাখার জন্য সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করলে সড়কে এতো লোকের অকাল মৃত্যু হবে না। পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বিগত ২০২২ সালে গড়ে প্রতিদিন ২১ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। সড়ক দুর্ঘটনার যে সকল কারণ জানা যায় তার মধ্যে প্রধান কারণ হলো অহেতুক দ্রæত গন্তব্য পৌঁছতে চালকের দায়িত্বজ্ঞানহীন গাড়ি চালানো। গাড়ির গতি সীমা নিয়ন্ত্রণে চালকের সুবোধ থাকলে এতো দুর্ঘটনা হতে পারে না। দ্বিতীয় কারণ হলো অদক্ষ চালক, তৃতীয় কারণ অননুমোদিত বেটারি রিক্সা ও অটোরিক্সা এবং কমবয়সী ও অদক্ষদের গাড়ি চালনা। সর্বশেষ বিষয় হলো সড়ক আইন মানতে বাধ্যবাদকতার অভাব। সড়ক আইন বাস্তবায়নে বি আর টি এ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনকে যথাযথ নিয়মের আওতায় আনা জরুরি। তার জন্যে সড়ক আইন বাস্তবায়নে লক্ষে সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকবল বাড়িয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এতে একদিকে সড়কে মৃত্যুর হার কমে যাবে, অন্যদিকে সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। আইনের বিধিবিধান কাগজে লিপিবদ্ধ থাকলে হবে না, তার বাস্তবায়নের যথার্যথ ব্যবস্থা করতে হবে।