সড়কে থামছে না মৃত্যুর মিছিল

46

সড়কে মৃত্যুর মিছিল কোনো মতেই থামছেই না। প্রতিদিনই ঝরে যাচ্ছে মানুষের প্রাণ। সরকারের কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। গত দু’দিনে মারা গেছে ২৪ জন। ২০১৮ সালে নিহত হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার।
জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মহাসড়ক, সড়ক, উপসড়ক- সব জায়গায় ঘটছে দুর্ঘটনা। গত দু’দিনে মারা গেছেন ২৪ জন। বুধবার গভীর রাতে লোহাগাড়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজনসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন অন্ততঃ আরও ১১ জন। রাত ১ টার দিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজারমুখী ‘রিলাক্স’ পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীতমুখী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই এক শিশু ও দুই নারীসহ আটজনের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় ১১ জনকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় বিভিন্ন হাসপাতালে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলার কলাবাড়ি এলাকায় যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে এক নারীসহ ৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্ততঃ অর্ধশত। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়া এলাকায় মাহ্ফিল শেষে মাদারীপুর সদরের ভাঙাব্রিজ এলাকায় ফিরছিলেন মুসল্লিরা। পথে মাদারীপুর সদর উপজেলার কলাবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাককে পাশ দিতে গিয়ে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে চারজন নিহত হন। আহত হন অন্ততঃ অর্ধশত। হাসপাতালে আরো ৪ জন মারা যান।
একইদিন যশোরে পৃথক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৫জন। এছাড়া বাঘাইছড়িতে চাঁদের গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছে একজন। পটুয়াখালীতে মারা গেছেন মোটর সাইকেল আরোহী। যশোরে মারা গেছেন দু’জন।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মুখে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার তড়িঘড়ি করে সড়ক পরিবহন আইন পাস করে। আইনে দুর্ঘটনায় দায়ী চালকের শাস্তির ধারা কিছুটা কঠোর, ফিটনেসবিহীন যানবাহন পরিচালনার দায়ে জরিমানা বৃদ্ধি এবং প্রথমবারের মতো সড়কের ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দায়ী করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু এখনো এই আইন কার্যকর হয়নি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে আইন বাস্তবায়নে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। কিন্তু কমিটি এরপর কোনো বৈঠকই করেনি।
১৭ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খানকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি করা হয়। কমিটির সদস্যরা পাঁচটি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সড়ক দুর্ঘটনা এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবেন কিনা তার নিশ্চয়তা মিলছে না কোথাও। সড়কেই প্রতি বছর হাজারো স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটছে।
প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কোনোভাবেই তা রোধ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আইনের প্রয়োগ নিয়ে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।
সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনারোধে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ রয়েছে। চালকরা যাতে বেপরোয়া গাড়ি চালাতে না পারে সে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।
বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের সড়ক মহাসড়কে চলাচলের জন্য রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ৩৭ লাখ গাড়ির। কিন্তু সরকারি এই সংস্থাটি এ পর্যন্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েছে প্রায় ২১ লাখ চালককে। সেই হিসেবে প্রায় ১৬ লাখ চালক কোনো লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন। পাশাপাশি বৈধ রুট পারমিট নেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহনের।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৯৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সড়কে যাত্রী ও পথচারী হতাহত হয়েছেন ৪৬ হাজার ৮৬ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালকদের মাদক গ্রহণসহ নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।