স্বাগত মাহে রমজান স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সিয়াম-সাধনায় মনোনিবেশ হতে হবে

15

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অফুরন্ত রহমতের অনন্য বৈশিষ্ট্যে ভরা পবিত্র মাস রমজানুল মোবারক আমাদের দ্বারে সমাগত। আহ্লান সাহলান মারহাবা ইয়া মাহে রমাদান। সু-স্বাগতম পবিত্র মাহে রমজান। তাক্ওয়া অর্জনের মাস, জীবনের সমস্ত পাপরাজির ক্ষমার মাস তোমায় সহ¯্র মোবারকবাদ। বিশ্ব মুসলিম সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এ পুণ্যময় পুতপবিত্র মাসের। অসংখ্য ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ মাস এটি। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘শাহরান রমাদ্বান আল্লাজি উনজিলা ফিহিল কোরআন’। রমজান মাস, যাতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। মানব জাতির হেদায়তের জন্য এ গ্রন্থখানা সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। পবিত্র কোরআনে আরবি বারো মাসের মধ্যে একমাত্র রমজান মাসের নাম উল্লেখ আছে। সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণের কারণেও এ মাস শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী।
নবুয়াতের পনেরতম বর্ষে শাওয়াল মাসের দশ তারিখ, দ্বিতীয় হিজরি সনে রোজা ফরজ হয়। আত্মিক (আধ্যাত্মিক) উন্নতি তথা মনের পবিত্রতা লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয় সিয়াম-সাধনা। রোজা আদায়ের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি, প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এবং ইবাদতের প্রতি অধিক মনোনিবেশ করার ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত হয়। ওজু গোসল দ্বারা মানুষের শরীর পবিত্র হয় আর রোজার দ্বারা মানুষের আত্মা এমন পুতপবিত্র হয় যাতে করে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। নাফ্স ও রুহের সমন্বিত রূপই জীবন। নাফস্ বা আত্মা খানাপিনার দ্বারা শক্তিশালি হয়, পক্ষান্তরে রোজার দ্বারা এ আত্মা দুর্বল হয়, ফলে আত্মা শক্তিশালী হয়ে ইবাদতের প্রতি উৎসাহী হয়। অপরদিকে মুসলমানদের পাপমুক্ত করে সুন্দর, সুস্থ ও পবিত্র জীবন গঠনের সুযোগদানের জন্যই মহান আল্লাহর পক্ষ হতে এক অনন্য নেয়ামত রমজানুল মোবারকের এ মাস।
মুমিন মুসলমানগণ দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে নানা পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। চিরস্থায়ী জীবনের কথা ভুলে যখন পথভ্রষ্ট হয়, তখন তাদের পাশবিকতার পঙ্কিল থেকে উদ্ধার করে দেহ-মনকে পবিত্র করে আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবন গঠনের মাধ্যমে খাঁটি মুমিনে পরিণত করাই রমজানের সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য। মাসব্যাপি রোজা আদায়ের দ্বারা রোজাদারের সমস্ত পাপ ধুয়ে-মুছে পবিত্র হয়ে যায়, দেহ-মনে পুতপবিত্র হয়। তইতো পবিত্র রমজান মাস আসলে মুসলমান সমাজে এক অপার্থিব আনন্দের সূচনা হয়।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে রাসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেন, রমযানের চাঁদ উদয় হওয়ার সাথে সাথে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। অপর বর্ণনায় রয়েছে বেহেস্তের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় দোজখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করা হয়। অপর বর্ণনায় এসেছে রহমতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়ার অর্থ হলো রহমত নাজিল করা এবং বেহেস্তের দরজাসমূহ খুলে দেওয়ার অর্থ হলো ভাল কাজের তাওফিক দেওয়া, যা বেহেস্তে প্রবেশ করার উসিলা হয়। ‘শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করা হয়’ এর ব্যাখ্যায় হাদীস বিশারদ মোল্লাা আলী কারী (রহ) বলেন- শয়তান রমযান মাসে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে তেমন সুযোগ পায়না যেমন সুযোগ অপর মাসে পায়। কেননা রমজান মাসে রোজাদার কোরআন তেলাওয়াত ও অপরাপর ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে। ফলে কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ হয়। এ মাসে নেক কাজের এমন বায়ু প্রবাহিত হয় যে,মন আপনা আপনি নেক কাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলার ঘোষণা নেক কজ বান্দাদের পিঠ চাপড়িয়ে চাপড়িয়ে সম্মুখে অগ্রসর করে। এমতাবস্থায় মুমিন বান্দা অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সৎকাজে আত্মনিয়োগ করে। তাই দেখা যায় রমজান মাসে ছোট বড় সকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে একাগ্র হয় প্রফুল্ল মন নিয়ে। সাথে সাথে রাতের বেলা তারাবীর বিশ রাকাত নামাজ খুশি মনে আদায় করে।
মুসলমানদের মাঝে ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। প্রতিটি মসজিদ মুসল্লীতে ভরপুর হয়ে উঠে। সরকার, প্রশাসন, স্থানীয় সব কর্তৃপক্ষ ও মসজিদ কমিটির কর্মকর্তাদের উচিৎ এ মাসে মুসল্লিদের ইবাদত বন্দেগীর সুবিধার্থে নিজ নিজ স্থান থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা। তবে এবারও গতবছরের ন্যায় বৈশি^ক মহামারি করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে মসজিদে মুসল্লিদের যাতায়াত সীমিত করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ২০ জন জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষে ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করেছে। আমরা মনে করি, সংক্রমণের ভয়াবহতা অনুধাবন করে সরকার জীবনের প্রয়োজনে যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা আমাদের শান্তিপ্রিয় মুসলিম সমাজ মেনে নিয়ে প্রতিটি মসজিদে পর্যাপ্ত অজুর পানি, সেনিটাইজার, বিদ্যুৎসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুর যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও তদারকির মাধ্যমে ঠিক রাখবেন। যাতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বিঘেœ রোজা-নামাজ আদায় করতে পারেন। মুসলমান-রোজাদারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সকলপ্রকার নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির যেকোন অসাধু চিন্তা দূর করে সব ধরনের অশ্লীল কার্যকলাপ হতে বিরত থাকা বাঞ্চনীয়। আল্লাহ আমাদের সকলকে যথাযথভাবে রোজা আদায়ের মাধ্যমে সিয়াম-সাধনার উদ্দেশ্য পূরণের তৌফিক দিন- আমিন।