স্থানীয় নির্বাচনে সহিংসতা প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে

6

 

কয়েকবছর ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতা বাড়ছেই। রক্তাক্ত হচ্ছে নির্বাচনের মাঠ ও নির্বাচনী কেন্দ্র। বিশেষ করে, সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মাঝে রক্তাক্ত সংঘাত ও মৃত্যুর খবরে আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ উঠলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা যথাযথ আমলে না নেয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে ভোটার ও দলীয় নেতা কর্মীদের। জানা গেছে, গত সোমবার চট্টগ্রামের এক পৌরসভা ও এক উপজেলার এবং কক্সবাজার জেলার পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন চট্টগ্রামের বোয়লখালী পৌরসভা ও সন্দ্বীপ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন এবং৩ চকরিয়া পৌরসভায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হলেও কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এসময় দুইজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মহামারি করোনার অতিমারির পর একটু স্বাভাবিকতায় দেশ ফিরেছে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন প্রথম স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করেছে। আশা করা হয়েছিল, এ নির্বাচন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সহিংসমুক্ত হবে। কিন্তু চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পৌরবাসী ও স›দ্বীপবাসী কথা রাখলেও কক্সবাজার উপজেলা ও পৌরসভায় বিপরীতটাই দৃশ্যমান হয়েছে। যা কারো কাম্য ছিলনা। এধরনের নির্বাচন যেকোন সচেতন ব্যক্তি বা মহলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যায়। এর থেকে উত্তরণের উপায় বের করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী সামনে দেশের সবকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পরিবেশ এবং সংঘাতের কারণগুলো চিহ্নিত করে আগামী নির্বাচন আরো শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করার উদ্যোগ নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই প্রতিষ্ঠানকে অগাধ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের দৃঢ়তার ওপর। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার পর্যায়ের অসংখ্য নির্বাচনসহ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এই নির্বাচনগুলোয় কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। ফলে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবেই ওই নির্বাচনগুলো স্বীকৃতি পেয়েছিল। তবে এ বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং গত সোমবার অনুষ্ঠিত পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ও আবাধ না হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন রয়ে গেছে। এ অবস্থায় দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সেইদিকে গভীর মনোযোগ দিতে হবে। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিধায় নির্বাচনে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের আগে সংঘাতের মাত্রা কমাতে পারাটাও নির্বাচন কমিশনের একধরনের সফলতা। এছাড়া তৃণমূল আওয়ামী লীগে হাইব্রিড প্রার্থীদের কারণে এই সংঘাতের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনকে আরো কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। আপামর জনগণের প্রত্যাশাও তাই। নির্বাচনের আগে ও পরে আপনাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটা ভালো ভ‚মিকা থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আচরণবিধি প্রয়োগ করতে গিয়ে এমন কিছু করবে না যেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। শুধু নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছাতেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, এমনটি বলতে চাই না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, প্রার্থী ও ভোটারদেরও আন্তরিক হতে হবে। প্রার্থীদের উচিত হবেÑ বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, কারচুপি বা দখলদারিত্বের আশ্রয় না নিয়ে জনগণের রায়ের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থাকা। আর সরকারি দলকে মনে রাখতে হবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফলে সরকারের তেমন কিছুই আসে যায় না। সুতরাং গণতন্ত্রের স্বার্থে সবার মধ্যে শুভবোধ জাগ্রত হোক-এমনটি প্রত্যাশার সাথে যারা জয়ী হয়েছেন তাদের প্রতি রইল অভিনন্দন।