স্কুলে স্কুলে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ

23

নিজস্ব প্রতিবেদক

বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে ঘরে ফেরা- এ যেন নতুন বর্ষে নতুন স্বপ্নপূরণ। গত দুই বছর করোনা মহামারির থাবায় এ আনন্দ থেকে দূরে ছিল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাই এ বছরের বই উৎসবের আনন্দ পেয়েছে নতুন মাত্রা। নতুন বই হাতে পেয়ে আর নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উচ্ছ¡সিত তারা। প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের মাধ্যমে চট্টগ্রামে শুরু হয় বই উৎসব। গতকাল রবিবার সকাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন পাঠ্যবই। নগরীর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নাছিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে উদ্যাপিত হয় বই উৎসব। নতুন বই পেয়ে শিক্ষার্থীরা খুশি। গত দুই বছর করোনার কারণে বই উৎসবে ভাটা পড়ে। তবে এবার উৎসবকে কেন্দ্র করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বাড়তি উচ্ছ¡াস দেখা গেছে।
এদিকে বছরের প্রথম দিন বই উৎসব হলেও অনেক শিক্ষার্থী এখনও নতুন বই হাতে পায়নি। বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সব বই দেয়া হয়। তবে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে ৩টি করে নতুন বই। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতেও সব বই দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বই শেষ হয়ে যায়। ফলে অনেক শিক্ষার্থীকে খালি হাতে ফেরত যেতে হয়। সাকিবুল মিরাজ নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেছে, নতুন বই নিতে এসেছি। কিন্তু বিদ্যালয়ে আসার পর স্যার জানিয়েছে বই শেষ হয়ে গেছে। যারা আজকে বই পায়নি, তারা পরদিন পাবে। তাই আজকে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮১ জন। এসব শিক্ষার্থীর বিপরীতে বইয়ের চাহিদা ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯০৩টি। এ পর্যন্ত মাধ্যমিকে পাওয়া গেছে ৫৮ লাখ ৫৪ হাজার ৪৬১টি বই। মাদ্রাসায় প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ২৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪১টি। সর্বমোট প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ৮৮ লাখ ৪১ হাজার ৫০২টি। ৫৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ বই বিদ্যালয়ে পৌঁছেছে। জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, প্রতিদিনই বই আসছে। শনিবার পর্যন্ত ৫৮ শতাংশ বই এসেছে। চাহিদার বিপরীতে অবশিষ্ট বইগুলো দ্রুত চলে আসবে। আশা করছি, আগামী কয়েকদিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দিতে পারবো। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রামের ৪ হাজার ৩৫৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ৮২ হাজার। এসব শিক্ষার্থীর বিপরীতে বইয়ের চাহিদা ৪৫ লাখ ২২ হাজার ১০৯টি। চাহিদার বিপরীতে বই এসেছে প্রায় ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ১১টি। চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিকের বই সরবরাহ হয়েছে ৩৩ দশমিক শতাংশ। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, মুদ্রণ শিল্পের সংকটের কারণে চট্টগ্রামে চাহিদার সব বই এসে পৌঁছায়নি। তবুও আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বই পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেছি। অবশিষ্ট বই আসা মাত্রই স্কুলগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হবে।