সোশ্যাল মিডিয়ায় যতকথা

15

পৃথিবীতে মানুষের আচরণ বদলে যাচ্ছে

ফাহমিদা জিগর জাহান

আমাদের আপনজন সবাই পর হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে এখন এটাই না কী নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের বাবা-মা কেনো এই কঠিন বাস্তবতা আমাদেরকে সেখাননি আমরা জানিনা।তারাও বোধহয় জানতেন না, পৃথিবীটা এমন দ্রæত বদলে যাবে।আপনজন পর হতে থাকবে। স্বার্থনিজ হয়ে যাবে। ১৯৭১ সালের পূর্বে ও পরে আমাদের বাসায় নানা কারণে গ্রামের কত মানুষ আসতো-যেতো,কেউ কেউ এক মাস পর্যন্ত থাকতো। যাবার সময় আমার বাবা-মা জামা-কাপড় দিতেন ও ভাড়ার টাকা হাতে গুঁজে দিতেন। আব্বাও বছরে একবার এক মাসের ছুটি নিতেন, আমরাও নানা বাড়ি, দাদা বাড়ি,আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। তখন আত্মীয়তার বন্ধন অটুট ছিল। বেড়াতে গেলে আদরে আদরে নানা রকম পিঠা-পুলি, বাড়ির পালের খাসিটা, খাসি করা মোরগটা সহ বিশেষ খাবার খেয়ে খেয়ে, গাছে চড়ে, ভেলায় সাঁতার শিখে, নৌকোয় চড়ে, বড়শিতে মাছ ধরে,নদীর চরে বেড়িয়ে ছুটির দিন শেষ হতো। পরিবার ছোট হয়েছে,আজ সবাই অতি ব্যস্ত। কারো বাসায় যেতে হলে আগে এপোয়েন্টমেন্ট করে সময় জানালে যাওয়া যায়, নইলে নয়। কারো গৃহকর্মী ছুটিতে, অন লাইনে বাচ্চারা পড়ছে, কেউ নানা কাজে ব্যস্ততা, কেনো পার্টি আছে, কেউ এখন আর কাউকে সময় দিতে পারেনা। অনেকে বাসায় মেহমানদের রান্না করে খাওয়ান না। নিজেরাও বাইরে খান। সেহরীও রাতে বাইরে হোটেলে খেতে যান। বড় পরিবারে সবাই মিশে থাকতো, বয়স্কদের সবাই সমীহ করতেন। এখন অনেক ছেলে-মেয়েদের সাথে কথা বলাই যায় না। তারা একযুগের মানুষকে ব্যাকডেটেড বলে থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠিত বুড়ো বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হয়। সন্তানরা বোঝা মনে করে। রাস্তায় বয়স্কদের দেখলে কেউ আর শ্রদ্ধাভরে সালাম দেয় না। ধীরে ধীরে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।সকলেই সময় পেলেই নানারকম চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত। এমন চরম বাস্তবতায় অনেকেই আবার পুরোনো দিনে ফিরে যান। আমিও মনে মনে আপনজনদের খুঁজে বেড়াই। ভাবি আবার যদি ছোট্টবেলায় ফিরে যেতে পারতাম। সেসবের কথা মনে হলে সব সময় দু’চোখে জল টলমল করে। এমন দিন যেনো না আসে, যাতে আমরা আর কারো সাথেই কথা বলতে পারবোনা। তাহলে আমরা করবোটা কি?

অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে অমনোযোগী থাকে

কৌশিক রেইন

অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কিংবা অভিজ্ঞতাহীন অনেকে মন্তব্য করেন বেতের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পর থেকে শিক্ষা ব্যবস্থায় ধস নেমেছে। আসলেই কি তা-ই? আগে ভেবে দেখুন তো একজন অভিভাবক হিসেবে আপনি আপনার সন্তানকে আদৌ সময় দেন কি-না ? সন্তানেরা কোমলপ্রাণ, আবার অদম্য, কোনো কোনো শিক্ষার্থী আবার বেপরোয়া। এই বেপরোয়া হওয়ার পেছনে অনেক অনেক কারণ থাকে।। তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতম আচরণ তাদের আরও বেপরোয়া করে তোলে। অভিজ্ঞতা থেকে বলি, অভিভাবকদের ও সম্মানিত শিক্ষকদের কড়া শাসনেও অনেক শিক্ষার্থীর জীবন খুব বেশিদূর আগায়নি। বরং ছাত্র শিক্ষকের আন্তরিক সমর্পক ও অভিভাবকদের স্নেহ ভালোবাসায় একজন আলোকিত মানুষ রূপে গড়ে উঠে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সেটা হলো পরিবার থেকে অবশ্যই সন্তানকে সঠিকভাবে সুশিক্ষা দিতে হবে। সন্তানকে সঠিক পথটা দেখিয়ে দিন। তারপর সে নিজেই নিজের গন্তব্য খুঁজে নেবে। পারসোনাল সেলফিশনেস থেকে সন্তানকে ঊর্ধ্বে উঠার মানসিকতা শেখাতে হবে। আপনার সন্তান চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সরকারি, বেসরকারি উচ্চ পদস্থ কিন্তু কতটা মানবিক গুণসম্পন্ন করে গড়তে পেরেছেন? বাবা মায়ের অসহায় অবস্থায় কাছের মানুষ হিসেবে পাবেন তো সন্তানকে ? মাস দুয়েক আগে শ্রেণিকক্ষে অসাবধানতার দরুন আমার একটা ভালো অংকের পরিমাণ টাকা চুরি হয়। তখন শ্রেণিতে পরীক্ষার ডিউটিরত ছিলাম।ছাত্র আর মাত্র দু’জন বাকি ছিল পরীক্ষার খাতা জমা দেওয়ার। ওরা অস্বীকার করলো। আমি একটা ধাক্কা খেলাম। একজন শিক্ষার্থী কোনো একজন শিক্ষকের কোন জিনিস হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখার তো শিক্ষা কি আমি দিয়েছি? প্রচÐ ভেঙে পড়েছিলাম। ঘৃণায়,লজ্জায় শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। আবার মনকে বুঝিয়েছি এভাবে পালিয়ে গিয়ে তো সমাজের এসব ব্যাধি দূর করতে পারবো না। শিক্ষাথীদের বুঝাতে হবে। অন্তত কিছু ছাত্র সুশৃঙ্খল জীবন গড়ে তুলুক। আমাদের ভালোবাসায়, আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহারে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা সুন্দর, সুশৃঙখলভাবে গড়ে উঠতে সহায়তা করি। আপনার, আমার দায়িত্ব শুধু একটাই, সন্তানকে সদাচারণ, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মানবতার শিক্ষা দিয়ে যাওয়া। প্রতিটি ব্যর্থতা থেকেই শিক্ষা পাওয়া যায়। আমাদের সন্তান যেন থাকে সুস্থ হ’য়ে উঠুক সুন্দর জীবনের অধীকারী।