সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের দুর্নীতি এখনই লাগাম টানতে হবে

1

 

ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার দুর্নীতির খতিয়ান দিনের পর দিন লম্বা হলেও প্রতিকারে কেউ যেন এগিয়ে আসছেনা। ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেবা প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ওয়াসার এক কর্তার জুম মিটিং-এ অংশগ্রহণ করতে বিমানে রাজধানী ঢাকা যাত্রার সংবাদে ভ্রæ কুঁচকে উঠেছে সচেতন মহলে। আজকাল একজন অবুঝ সন্তানেরও এতটুকু বুঝে আসে যে, জুম মিটিং মানেই ঘরে বসে অনলাইন সিস্টেমে মিটিং-এ যুক্ত হওয়া, যেখানে প্রয়োজন পড়েনা হাঁটাহাঁটির, লাগেনা গাড়িভাড়া বা বিমান ভাড়ার। সামান্য টাকায় নেট কিনে -এ জুম মিটিং-এ অংশগ্রহণ করা যায়। কিন্তু ওয়াসার কর্তার সুবোধ বালকের সেই বোধশক্তিও লোপ পেয়েছে যে, তিনি জুম মিটিং-এর জন্য বিমান ভাড়ার ভাউচার করে দিলেন। গত ৮ জুলাই দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এমন একটি প্রতিবেদন পড়ে একজন নাগরিক হিসাবে আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এ পুকুর চুরির মত কতেক আমলার দুর্নীতির খতিয়ান পত্রিকায় প্রকাশের পর দেশের মানুষ অস্বস্তিতে পড়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার ঘটনাও এর চেয়ে কম নয়। এর আগেও চট্টগ্রাম ওয়াসার দুজন প্রকৌশলীসহ শীর্ষ কর্তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল, পরবর্তীতে সেই অভিযোগগুলোর কি হল, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদৌ কোন আইনী পদক্ষেপ নেয়া হল কিনা-তা আমাদের জানা সম্ভব হয়নি। সম্ভবত এবারের বিষযটি সেইভাবে অদৃশ্যে চলে যাবে। একদিন সব দুর্নীতিবাজদের মানুষ ভুলেও যাবে, অতীতে যেমনটি হয়েছিল। সূত্র জানায়, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বাস্তবায়ন’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাবের উপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা আহবান করে মন্ত্রণালয়। গত ২৪ মে বেলা সাড়ে ১২টায় উক্ত সভার দিনক্ষণ ধার্য করে একমাস আগে ২৬ এপ্রিল উপপ্রধান (উপসচিব) মো. আব্দুল্লাহ আল মুস্তাসিম বিল্লাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে বলা হয় ‘সভাটি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি (জুম সফটওয়্যার) অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সংশ্লিষ্ট সকলকে স্ব স্ব স্থান থেকে যথাসময়ে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হল।’ সভায় অংশগ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার সিস্টেম অ্যানালিস্ট শফিকুল বাশারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই অনলাইন সভার বিপরীতে বিমান ভাড়াসহ ওয়াসায় বিল জমা দেন শফিকুল বাশার। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, অফিস থেকে পূর্বানুমতি ছাড়া তিনি গেলেন ঢাকায়। বিমানযোগে যাওয়া-আসার দশ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে ওয়াসায় একটি বিলও জমা দিয়েছেন। একে মহাজালিয়াতি বলছেন খোদ ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। যদিও ওয়াসা সচিব এই বিল অনুমোদন করেছেন এবং যথাযথ বলে আখ্যা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বরাতে উল্লেখ করা হয়, তিনি বিলটি পরিশোধ করেন নি। তাঁর ভাষায়, কে বিল করলো, কে অনুমোদন করলো সেটা বিষয় নয়। জুম মিটিং কিভাবে হয়? অনলাইনেই তো হয়। সরকার যোগাযোগ সহজ করতে, সময় ও ব্যয় বাঁচাতে তো অনলাইন মাধ্যমে মিটিংয়ের ব্যবস্থা করছে। সেই অনলাইন মিটিংয়ের জন্য বিমানের বিল আমি ছাড় দিতে পারি না। যে বিল করেছে, যারা অনুমোদন করেছে তাদের কাছ থেকে জানেন, তারা কিভাবে করেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি ওয়াসার কর্মকর্তাদের অনেকে এধরনের দুর্নীতিকে সহজভাবে গ্রহণ করেননি। এটিকে মাহা জালিয়াতি বলেছেন অনেকে। হিসাব বিভাগ থেকে বিল পরিশোধও করা হয়নি। আশা করি, কোনভাবে এ বিল আর পরিশোধ করা হবে না। আমরা জানি, বর্তমান সরকার দুর্নীতি প্রতিরোধে এবং সরকারি কর্মচারিদের শুদ্ধাচারী করে তুলতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে । ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চলছে, ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন-স্কেল বৃদ্ধি করা হয়েছে, শুদ্ধাচারের জন্য পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। সৎ ও দক্ষ কর্মচারিদের নানাভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এরপরও লাগামহীনভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়েপড়া, সরকারের ভাবমুর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মত ঘটনার সাথে জড়ানো জাতির জন্য দুর্ভাগ্যই বটে। আমরা ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান লক্ষ্য করছি। এভাবে ওয়াসাসহ সরকারের সকল বিভাগ ও দপ্তরকে শুদ্ধি অভিযানের আওতায় আনা জরুরি। এক্ষেত্রে দুর্নীতি কমিশনকে আরো শক্তিশালী এবং তাদের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে হবে। যেভাবেই হোক দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে।